বনানীর পাঁচ নং রোডের জমি না পাওয়ায় চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ থাকলেও এক কানাকড়িও খরচ করতে পারেনি ডেসকো। শুধু এই প্রকল্প নয়, নানা কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আট মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিদ্যুৎ বিভাগের ৫৮টি প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি শূন্য।
বিদ্যুৎবিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানে এডিপি’তে বিদ্যুৎবিভাগ ও এর আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট ১১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি প্রকল্পের বিপরীতে এক পয়সাও খরচ হয়নি।
অন্যদিকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্রগতি সম্পন্ন হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ৩৪টি। আর ৬০ শতাংশের অধিক অগ্রগতি হয়েছে এমন প্রকল্পের সংখ্যা ২২টি।
১১৪টি প্রকল্প এডিপি’র আওতায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ, বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির তত্ত্বাবধানে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে সর্বমোট বরাদ্দ ১৯ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। বিদ্যুৎবিভাগের প্রকল্পসমূহের বিপরীতে জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের ৫০ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
১১৪টি প্রকল্পের মধ্যে বিদ্যুৎবিভাগের প্রকল্পের সংখ্যা ৮৫টি। এই ৮৫টি প্রকল্পের জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ মোট ১৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এই ৮৫টি প্রকল্পের মধ্যে ২৯টির অগ্রগতি শূন্য। ১৫টির অনুকূলে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ১৪টি প্রকল্পের বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যয় হয়নি। সব মিলিয়ে ৮৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৮টির আওতায় এক পয়সাও খরচ হয়নি চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
অন্যদিকে বিভিন্ন সংস্থা, কোম্পানিসমূহের নিজস্ব অর্থায়নে বাকি ২৯টি প্রকল্প এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) অন্তর্ভূক্ত। এজন্য বরাদ্দ ৩ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বা বরাদ্দের ৪৩ শতাংশ।
ঠিকাদারের কারণে থমকে আছে ‘কন্সট্রাকশন অব বিবিয়ানা সাউথ ৪০০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পের গতি বাড়াতে বিদ্যুতের ইপিসি(প্রকৌশল কেনাকাটা ও নির্মাণ) ঠিকাদার এবং ওনার্স ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কয়েক দফা সভা হয়েছে।
ইপিসি ঠিকাদার জানান, তারা এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক অসুবিধায় আছেন। তবে এপ্রিল ২০১৭ সালের মধ্যে তা সমাধান করে কাজের গতি বাড়ানো হবে।
ইপিসি ঠিকাদারের ব্যাখ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিদ্যুৎবিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, এপ্রিল ২০১৭-এর মধ্যে বিষয়টির সুরাহা করতেই হবে। তা না হলে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পও থেমে আছে। অর্থমন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎবিভাগের ভুলের কারণে মনপুরা ও রাঙ্গাবালি উপজেলাকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার কার্যক্রম থেমে আছে। প্রথমে ভুল করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দেয়া হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি লিমিটেডকে (ইডকল)। আসলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ইডকল-এর পাওয়ার কথা নয়। পরে ইডকলের কাছ থেকে নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (স্রেডা) দেয়া হয় প্রকল্পের কাজ। এসব কারণে প্রকল্পের আওতায় একটি টাকাও খরচা করা হয়নি। এ কারণে বিলম্বিতও হচ্ছে মনপুরা ও রাঙ্গাবালি উপজেলাকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার কাজ।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে বিদ্যুৎবিভাগের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ বজলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মনপুরা ও রাঙ্গাবালি উপজেলাকে বিদ্যুতায়নের কাজ করতে চাই নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে। ইডকল ও স্রেডা’র নিয়ে মিটিং হয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে স্রেডা। তবে ইডকল যেহেতু এর আগেও সোলারসহ অন্যান্য খাতে অর্থায়ন করেছে। সুতরাং ইডকলের অভিজ্ঞতাও নেয়া হবে। তবে সরাসরি কাজ করবে স্রেডা। ’
নানা কারণে বিদ্যুৎবিভাগের ৫৮টি প্রকল্পে এক আনাও খরচ করা হয়নি। এসব যেসব প্রকল্পে ভালো অগ্রগতি হচ্ছে সেখানে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।
বিদ্যুৎবিভাগের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন-৫) এ. টি. এম. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎবিভাগের অনেক প্রকল্প আছে যেখানে এডিপি’র একটি টাকাও খরচ হয়নি। এসব প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এডিপি’র বরাদ্দের টাকা তুলে যেসব প্রকল্পে অগ্রগতি ভালো সেখানেই বরাদ্দ দেব। এডিপি’র আন্তঃখাত বরাদ্দের মাধ্যমেই এই উদ্যোগ নেয়া হবে। ’
‘তবে যে সব প্রকল্পে শেষ সময় হলেও খরচ করা সম্ভব সেই সব প্রকল্পের জন্য কিছু বরাদ্দ রাখা হবে। বিদ্যুৎবিভাগে এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ’
‘তবে ৫৮টি প্রকল্পের কপালে কি হবে?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছরে এডিপি’র আওতায় যেসব প্রকল্পে টাকা খরচ করা হলো না, পরবর্তী অর্থবছরে নতুন করে সেগুলোতে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
এমআইএস/জেএম