বিদ্যুৎ বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের এক কমিটির সরেজমিন প্রতিবেদনে এমন তুঘলকি কারবার উঠে এসেছে। অথচ এখনও দেশের তিরিশ শতাংশ লোক রয়েছে বিদ্যুতের সুবিধা বঞ্চিত।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একটি-দু’টি নয়, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ভোলা, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুরে অসংখ্যা বাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংযোগ থাকা অবস্থায় সংযোগ দিয়েছে ওয়েস্টার্ন জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।
শরীয়তপুরের রূদ্রকর গ্রামে একটি বাড়িতে আগে থেকেই ছিলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংযোগ। পল্লী বিদ্যুতের সেই মিটারের সঙ্গে ঠেস দিয়ে বসানো হয়েছে ওজোপাডিকোর মিটার। শুধু সংযোগ নয়, পবিসের লাইন থাকা সত্ত্বেও ওজোপাডিকো খুলনা-পটুয়াখালী প্যারালাল লাইন নির্মাণ করেছে।
লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে ওজোপাডিকো কোন নিয়ম নীতি কিংবা শৃঙ্খলা কোনটাই রক্ষা করেনি বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ফরিদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাইন থাকা অবস্থায় ভাঙ্গা উপজেলার চরকান্দা গ্রামে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নন-স্ট্যান্ডার্ড লাইন নির্মাণ করেছে। পটুয়াখালীর পীরতলা এলাকায় গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে তার টেনেছে ওজোপাডিকো।
ঝড়বৃষ্টিতে তার ছিঁড়ে গেলে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যেতে পারে সেদিকেও কোন মনযোগ নেই ওজোপাডিকোর।
পটুয়াখালী পবিস’র জেনারেল ম্যানেজার এমকে বিশ্বাস বাংলানিউজকে জানান, একই এলাকায় একাধিক সংস্থার লাইন অপসারণ বিষয়ে সরকার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। আমাদের এলাকাতেও ওজোপাডিকোর বেশকিছু লাইন রয়েছে। সেগুলো হস্তান্তরের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে।
বরগুনায় গ্রাহকরা দু’টি মামলা দায়ের করেছেন হস্তান্তরের বিরুদ্ধে। তারা ওজোপাডিকো ছেড়ে পবিসের গ্রাহক হতে চান না।
সে কারণে সারাদেশেই এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া থমকে আছে বলে মন্তব্য করেন পবিস জিএম।
ওজোপাডিকোর মতো গাইবান্ধায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে লাইন টেনেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এখানে বাঁশ এবং গাছ ব্যবহার করে ফাটা তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই অবৈধ লাইন।
কমিটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত সোর্স লাইন বা সঞ্চালন উপকেন্দ্র নেই। তারপরও সেখান থেকে লাইন টানা হয়েছে। এরপর সেই লাইন বাঁশের খুঁটিতে ভর করে এগিয়ে গেছে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত। এতে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সঞ্চালণ উপকেন্দ্র।
অবৈধভাবে নির্মিত লাইনগুলো আগামী ৩০ জুনের মধ্যে হস্তান্তর অথবা অপসারণ করার তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এক সংস্থার এলাকায় অন্য সংস্থার লাইন নির্মাণ বা সংযোগ প্রদান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন।
তবে কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংযোগ প্রদান ব্যয় ও সময় সাপেক্ষ সেসব ক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী বিতরণ কোম্পানি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে সংযোগ প্রদান করতে পারবেন। কমিটি এমন সুপারিশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কমিটির প্রধান বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়) মাকছুদা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, সরেজমিনে গেলে অনেক অনিয়ম পাওয়া গেছে। গাছের সঙ্গে তার ঝুলিয়ে লাইন টানা হয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ লাইন দ্রুত অপসারণের জন্য বলা হয়েছে।
ভৌগলিক সীমা অনুযায়ী যার যার এলাকায় লাইন সংশ্লিষ্ট বিতরণ সংস্থা ও কোম্পানি হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সময় একমাস দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত সচিব মাকছুদা খাতুন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৭
এসআই/জেডএম