ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

চরিত্র বদলাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
চরিত্র বদলাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি! প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্র পাল। ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ : ‘বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আর দিনের পর দিন ঘুরতে হয় না। আবেদনের সঙ্গে এখন মাত্র ৭৫০ টাকা জমা দিলেই মিলছে বৈদ্যুতিক মিটার। সংযোগও পাওয়া যাচ্ছে ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই। কোন রকম ভোগান্তি ছাড়াই বিদ্যুতের সংযোগ পাচ্ছেন গ্রাহক।

অবিশ্বাস্য মনে হলেও গ্রাহকের সঙ্গে সমিতির সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন আর সেবার মান বাড়ানোর এমন কথাই বললেন ব্রক্ষপুত্র নদের ওপারে শহরতলী শম্ভুগঞ্জস্থ ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩’র (পবিস) সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্র পাল।

মাঠ পর্যায়ে দালাল ও মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের সংযোগ বাণিজ্যের টুটি চেপে ধরে পল্লীর গ্রাহকদের আস্থা কুড়াতে পুরনো চরিত্র বদলে নতুন চেহারায় মাঠে নেমেছে এ সমিতি।

ঘুষ, দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়া হিসেবে পরিচিত এ সমিতিকে পুরনো অবস্থা থেকে বের করে আনা হচ্ছে।

তাদের নানামুখী উদ্যোগের বার্তা গ্রাহকদের দুয়ারে পৌঁছে দিতে মসজিদের ইমাম, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের দ্বারস্থ হচ্ছেন কর্মকর্তারা। তাদের এ কৌশলে অবশ্য কপাল পুড়েছে দালাল সিন্ডিকেটের।

সংযোগ বাণিজ্য করতে তারা ভিড়তেও পারছেন না অফিসের সীমানায়। গ্রাহকরাও প্রমাণ পাচ্ছেন, ঘুষ ছাড়াই বিদ্যুতের সংযোগ মেলে, বলছিলেন সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্র পাল।

ময়মনসিংহ সদর, তারাকান্দা, ফুলপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট ও গৌরীপুর উপজেলা নিয়ে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩। এ সমিতির বিদ্যুতের চাহিদা ৫০ মেগাওয়াট।

গত মৌসুমে এ চাহিদা ছিল ৪৭ মেগাওয়াট। ঝড়-বৃষ্টির সময় ছাড়া বাকী সময়টুকুতে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে, জানায় সমিতির দায়িত্বশীল সূত্র।

২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আলোর আওতায় আনতে চায় সরকার। এ অবস্থায় পল্লীতে বিদ্যুৎ পৌঁছানোটাই রীতিমতো এক চ্যালেঞ্জ। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩

নতুন এলাকায় নতুন সংযোগে টালবাহানা, দালালদের দৌরাত্ম্য, অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া, ঘুষের মচ্ছব, গ্রাহক হয়রানির কালিমা লেপে গিয়েছিল পল্লী বিদ্যুতের নামের সঙ্গে।

কিন্তু সংযোগ দুর্নীতি বন্ধ করে তাৎক্ষণিক গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে ‘স্পট মিটারিং’ কার্যক্রম শুরু করে সমিতি। ফলে আবেদন থেকে শুরু করে সংযোগ পেতে দালালদের কাছে আর ধর্ণা দিতে হয় না গ্রাহকদের। গুণতেও হয় না ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।

আবেদন করা মাত্রই মিলছে সংযোগ। গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতেই এমন উদ্যোগের কথা জানাচ্ছিলেন সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্র পাল। তার কথায়- ‘আগে দালালদের হাতে জিম্মি ছিল গোটা অফিস।

গেট থেকেই দালালদের খপ্পরে পড়তে হতো গ্রাহকদের। মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হতে হতো। গত বছরের নভেম্বরে এ অফিসের দায়িত্ব নিয়েই অবলোকন করছিলাম দালালদের এমন উৎপাত। এরপর তাদের অফিসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দালালদের সঙ্গে গ্রাহকদের কোন প্রকার লেনদেন না করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এরপরেও অফিসে আসা দালালদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ সংযোগের নামে হরিলুট কারবার বন্ধ করা হয়েছে’ যোগ করেন এ কর্মকর্তা।

বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতেও কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে ১০৬ জন গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ চুরির বিল আদায় করা হয়েছে। প্রায় ৩শ’ গ্রাহকের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

পল্লী বিদ্যুতের বিল দিতেও কম অনীহা ছিল না গ্রাহকদের। মাসের পর মাস গেলেও অনেক গ্রাহক বিল না দিয়ে গড়িমসি করতো। সমিতিকে লাভজনক করতে গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করা হচ্ছে।

গ্রাহকের কাছে বকেয়া বিল আদায়ে কোন মোবাইল কোর্ট করারও প্রয়োজন পড়েনি। গ্রাহকরা সমিতির ডাকে সাড়া দিচ্ছে। তাদের সহযোগিতায় গত এপ্রিল মাসেই ১২৮ পার্সেন্ট বিল আদায় করা হয়েছে। এ অর্জনকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই, বলছিলেন এ সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (জিএম)।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।