ঢাকা: অবশেষে খসড়া কয়লানীতি চূড়ান্ত করতে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি রিভিউ কমিটি গঠন হয়েছে। তবে এখনো সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, কমিটিকে কাজ শুরুর দিন থেকে চার মাসের মধ্যে খসড়া কয়লানীতি যাচাই-বাছাই করে তা চূড়ান্ত করার জন্য সুপারিশ দিতে হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কমিটির সদস্যদের নামসহ সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, ওই কমিটির প্রধান করা হয়েছে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনকে।
কমিটির সদস্যরা হলেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর, বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডিউলিংয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আলম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মহাপরিচালক ড. এম কে মুজেরী, বুয়েটের অধ্যাপক এবিএম বদরুজ্জামান, জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) সেফাউল আলম, সাবেক যুগ্ম-সচিব বিনু গোপাল দে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন পরিচালক, জিওলোজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশের সচিব ড.মোহাম্মদ নেহাল উদ্দিন, জ্বালানি বিষয়ক মাসিক পত্রিকার এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার-এর সম্পাদক মোল্লা মোহাম্মদ আমজাদ, বড়পুকুরিয়া কোলমাইন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: কামরুজ্জামান।
কমিটিকে দেশের প্রতিটি কয়লা ক্ষেত্রের ভুগর্ভস্থ পানির স্তর, ভূ-তত্ত্ব গঠন ও ভূ-রসায়ন বিষয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এছাড়া কয়লাখনি এলাকায় কয়লা উত্তোলনে জনগণের কি পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তারও একটি তুলনামূলক চিত্র প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ আহমেদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘তিনি এখনও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। ’
তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি করলো। আরও অনেক আগে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন ছিল। ’ তবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর পরিস্কার করে কিছু না জানালেও বাংলানিউজকে বলেন, ‘খুব শিগগিরই ভালো খবর জানতে পারবেন। ’
উল্লেখ্য ২০০৪ সালে কয়লার জন্য পৃথক নীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। ২০০৫ সালে আইআইএফসি নামের দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে খসড়া কয়লানীতি প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আইআইএফসি খসড়া কয়লানীতি প্রণয়ন করে জমা দিলে অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী খসড়া অনুমোদন না দিয়ে বুয়েটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে রিভিউ (সংশোধন সংযোজন) করার দায়িত্ব দেন।
পরে প্রফেসর নুরুল ইসলাম খসড়া কয়লানীতির অনেকগুলো বিষয়ে পরিবর্তনের সুপারিশ করে রিপোর্ট জমা দেন। এরই মধ্যে বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষ হলে যায়। ফলে থমকে দাঁড়ায় কয়লা নীতি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা আসার ছয় মাসের মাথায় নতুন করে খসড়া কয়লানীতি প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয়। বুয়েটের সাবেক ভিসি প্রফেসর আব্দুল মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। পাটোয়ারী কমিটি নামে পরিচিত এই কমিটি খসড়া প্রণয়ন করে জমা দিলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেষ পর্যন্ত সেটিকে চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়।
এরপর ক্ষমতায় আসে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। মহাজোট সরকার পাটোয়ারী কমিটি প্রণীত খসড়া কয়লানীতি অনুমোদন না করে জ্বালানি সচিবকে প্রধান করে রিভিউ করার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি পাটোয়ারী কমিটির উপস্থাপিত খসড়া যাচাই বাছাই শেষে, সেই কমিটির প্রণয়ন করা খসড়ার নীতি ও বাস্তবায়ন অংশকে দুই ভাগে ভাগ করে কিছু সংশোধনীসহ শুধুমাত্র নীতি অংশটি অনুমোদনের সুপারিশসহ গত বছরের অক্টোবর মাসে জমা দেয়।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ মোতাবেক চূড়ান্ত না করে চলতি বছরের মার্চ মাসে আবারও উচ্চ পর্যায়ের রিভিউ কমিটি গঠনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
অবশেষে বহুলকাক্সিক্ষত খসড়া কয়লানীতি রিভিউ কমিটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১১