বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই প্রকল্প নির্মাণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনায় রাশিয়ার এক্সপার্ট, ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান, শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোক কাজ করবেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ৫ থেকে ৬ বছর রাশিয়ানরা পরিচালনা করবে।
রাশিয়ার অর্থায়ন, তত্ত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির অধীনে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় জনবলের প্রশিক্ষণ রাশিয়া দেবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে এই প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতি বছরই প্রকৌশলী, ছাত্র ও শিক্ষকদের রাশিয়ায় পাঠানো হচ্ছে। সেখান যারা পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে আসছেন তারা এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ থেকে শুরু করে পরিচালনা পর্যন্ত রাশিয়ার এক্সপার্টদের কাছ থেকে হাতে কলমে প্রশিক্ষিত হবেন। এভাবে বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান ও শ্রমিকরা এক্সপার্ট হয়ে উঠবেন। সে অনুযায়ীই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে এবং তা এগিয়ে চলছে। দ্রুতই এই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি যেটা অত্যাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তি নির্ভর। এই প্রযুক্তির ব্যবহার এখন পর্যন্ত খুব বেশি দেশ শুরু করেনি। সেভাবেই আমরা লোকবলের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। লোকবল তৈরির কাজ আগে থেকেই শুরু করেছি। প্রশিক্ষিত করার জন্য প্রকৌশলী ও ছাত্রদের রাশিয়া পাঠাচ্ছি। শিক্ষকদেরও রাশিয়া পাঠানো হচ্ছে তারা যাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ছাত্রদের শিক্ষা দিতে পারেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ৫ থেকে ৬ বছর রাশিয়ানরা পরিচালনা করবেন। আমাদের লোকেরা তাদের সঙ্গে কাজ করে এক্সপার্ট হয়ে উঠবেন এবং আস্তে আস্তে পরিচালনার মূল দায়িত্ব নেবেন।
এই প্রকল্পকে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক দিয়ে চিন্তা করলেই হবে না, এর গুরুত্ব আরও অনেক বড়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে সারা বিশ্বে একটা সাড়া পড়ে যাবে। বিশ্ব দেখবে বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারে। আমাদের দেশের সক্ষমতার একটা মূল্যায়ন হবে। বিশ্বের শ্রম বাজারেও আমাদের শ্রম শক্তির মূল্যায়ন হবে। আমাদের দেশের কেউ বিদেশে কাজ করতে গেলে তাকে শুধু শ্রমিক হিসেবে নয়, নিউক্লিয়ার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে এমন দেশ থেকে এসেছে ভাবতে হবে।
এদিকে আগামী সেপ্টেম্বরে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল কাজ (কংক্রিট ঢালাই) উদ্বোধনের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু এই সময়ে উদ্বোধনের সম্ভাবনা কম।
সেপ্টেম্বরে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সংক্রান্ত দুইটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস সমান।
ওআইসি’র নিউক্লিয়ার টেকনোলজি সংক্রান্ত ৫ দিনের কনফারেন্স শুরু হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। এই কনফারেন্সে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীও থাকবেন। এছাড়া ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)’র কনফারেন্স শুরু হবে। এই কনফারেন্সে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এ কারণে মূল কাজের উদ্বোধন পিছিয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, সেপ্টেম্বরে মূল কাজের উদ্বোধন না হলেও প্রকল্পের কাজ থেমে থাকবে না। অবকাঠামো নির্মাণসহ ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে সেগুলো এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৭
এসকে/আরআই