বর্তমান পাইকারি দরের ভিত্তিতে এ প্রস্তাব দিয়েছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিটি। এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি হলে গ্রাহক পর্যায়ে সমন্বয় করে দাম বাড়াতে চায়।
সোমবার (০২ অক্টোবর) বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গণশুনানিতে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন ডেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাঈদ সারোয়ার।
শুনানি নিচ্ছেন বিইআরসি’র চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ, আবদুল আজিজ খান ওমাহমুদউল হক ভুইয়া।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘পিডিবি ইতোমধ্যে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। এর প্রেক্ষিতে গণশুনানিতে বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ইউনিটপ্রতি ৫৭ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। পাইকারি দাম বাড়লে সমন্বয় করে দাম বাড়ানোর আবেদন করছি’।
ডেসকো’র এমডি সাঈদ সরোয়ার বলেন, গত ৮ বছরে ৯ দফায় বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছে ২০২.৯৪ শতাংশ। একই সময়ে খুচরা দাম বাড়ানো হয়েছে ৯০.৬০ শতাংশ। ফলে বিতরণ ব্যয়সহ ইউনিটপ্রতি ঘাটতি হচ্ছে ৫২ পয়সা।
তবে বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ডেসকো’র আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করে ইউনিটপ্রতি দশমিক ০৮ পয়সা লোকসান হচ্ছে বলে মত দিয়েছে। বর্তমান দরে দশমিক ০৮ পয়সা হারে দাম বাড়লে ডেসকো ব্রেক ইভেনে চলে আসবে।
গণশুনানিতে কনজুমারস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বেশ কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘ডেসকো বোর্ড মিটিংয়ে প্রত্যেক সদস্যকে সম্মানিভাতা দিচ্ছে ১০ হাজার টাকা। বোর্ডে যারা আছেন, তাদের অনেকেই বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। তারা একদিকে বেতন নিচ্ছেন, আবার মিটিংয়ের ভাতা নিচ্ছেন। এটি কতোটা যৌক্তিক!’
জবাবে ডেসকো’র এমডি বলেন, ‘কোম্পানি আইন অনুসারে ভাতা দেওয়া হয়। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই’।
আধুনিকায়নের বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে ডেসকো। এতে ব্যয় হবে চার হাজার কোটি টাকা, যা বিদেশি ঋণে নির্বাহ হবে। এ ঋণের কঠোর সমালোচনা করেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘ঋণের কারণে ব্যয় ও কোম্পানির লোকসান আরও বাড়বে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপরে। কার স্বার্থে এ উচ্চাভিলাসী প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে? দয়া করে এসব বন্ধ করেন। না হলে কোম্পানি দেউলিয়া হবে, আপনারা পেনশন পাবেন না’।
তিনি বলেন, ‘চীনা কোম্পানির লোকজন মন্ত্রণালয়ে ঘুর ঘুর করেন, তাদের প্রেসক্রিপশনে এসব আজগুবি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। জাপান যেখানে কমাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় বাড়ছে’।
ডেসকো লাইফলাইন (কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী) গ্রাহকদের সার্ভিস চার্জ ১ ফেজ ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং ডিমান্ড চার্জ ১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে শামসুল আলম বলেন, ‘একজন গ্রাহক ৬০ টাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তার কাছে আপনারা ৪৫ টাকা চার্জ আদায় করবেন। এটি কতোটা যৌক্তিক?’
জবাবে ডেসকো’র কর্মকর্তারা নীরব থাকেন।
শপিংমলের তুলনায় রাস্তার পান দোকানের বিদ্যুতের বিল বেশি হওয়া নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘এসি গাড়িতে চড়ে গিয়ে এসি দোকানে ব্যবসা করছেন। আবার ক্রেতারাও এসি গাড়ি হাঁকিয়ে সেখানে যাচ্ছেন, দাম বেশি ধরা হচ্ছে। সেই শপিংমলের দোকানের বিল আদায় করছেন ইউনিটপ্রতি ৭.৪৯ টাকা। আর রাস্তার পাশে যে পান দোকানি স্বল্প পুঁজি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন, তার কাছ থেকে আদায় করছেন ৯.৮০ টাকা হারে। এ বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না’।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৭
এসআই/এএসআর