বিদ্যুতের দাম কমানোর ওপর বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বিদ্যুৎভবনে ক্যাব আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন অভিমত উঠে আসে।
আলোচনায় অংশ নেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, বিতরণ কোম্পানি সমূহের পদস্থ কর্মকর্তাগণ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও ক্যাব প্রতিনিধিরা।
অনেক দিন ধরেই ক্যাব বলে আসছে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কমানো সম্ভব। আর বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন তাদের সেই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করে আসছে। সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি গ্রহণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি (বিইআরসি) কমিশন। ক্যাব এর তীব্র বিরোধিতা করে এবং দাম কমানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি নেওয়ার আবেদন করে।
ক্যাবের সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর প্রথমবারের মতো দাম কমানোর ওপর গণশুনানি নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজ (বৃহস্পতিবার) সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে যুক্তি, প্রমাণ ও উপযুক্ত তথ্য-উপাত্তসহ দাম কমানোর প্রস্তাবের যথার্থতা তুলে ধরে ক্যাব।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকার যদি সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদনে প্রাধান্য দিতো তাহলে ৭ হাজার ৮’শ ৪৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হতো। তাহলে আজকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। বরং ইউনিটপ্রতি দাম ১.৫৬ টাকা কমানো যেতো। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি জ্বালানির খরচ (গ্যাস) ৮৪ পয়সা। আর রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি খরচ হচ্ছে ৯২ পয়সা।
স্বাভাবিকভাবেই সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম কম পড়ে। কিন্তু সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৪৩ শতাংশ হারে আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৭০ শতাংশ হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারি ৪,৩৯৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ৪৩.০৮ প্লান্ট ফ্যাক্টরে উৎপাদন হয় ১,৬৫৯ কোটি ইউনিট। ৭০ শতাংশ হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে ২,৬৯৬ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলেও পিডিবি তা করছে না। এতে করে এক বছরে বছরে ৭৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা বেশি গুণতে হয়েছে (২০১৬-১৭ অর্থবছরে)।
তিনি বলেন, বিইআরসির স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, কমদামে উৎপাদনক্ষম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আগে চালাতে হবে। তারপর ঘাটতি থাকলে ব্যয়বহুলগুলো চালাতে হবে। কিন্তু ৪ টাকায় যে কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ৩০টাকা ইউনিট খরচ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
ড. শামসুল আলম দাম কমানোর জন্য পনের দফা সুপারিশ তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. ম. তামিম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। আমি মনে করি, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে এখনই বিদ্যুতের দাম কমানো সম্ভব।
ড. ম তামিম বলেন, বিইআরসির ম্যান্ডেট শুধু দাম বাড়নো নয়। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এলেই যেনতেনভাবে দাম না বাড়িয়ে যৌক্তিকতা বিচার করা দরকার। প্রয়োজন হলে ক্যাবের মতো প্রতিষ্ঠানের উচিতদাম কমানোর প্রস্তাবের ওপর শুনানি করা । তাদের ভূমিকা হওয়া উচিত রেফারির মতো।
পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেন, সরকার যদি প্রতিশ্রুত ভর্তুকির অর্থ পিডিবিকে দেয়। পুর্বে দেওয়া ভর্তুকি বাবদ টাকার সুদ সমেত মুওকুফ করে। তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৬'শ ১০ কোটি টাকা। যার সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪'শ ৮১ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, কম-খরচ-পড়ে এমন বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন না করা নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে। একথা ঠিক নয়। টেকনিক্যাল কারণে অনেক সময় সম্ভব হয় না। সৈয়দপুর ও রংপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তবুও ঘাটতি থাকায় অনেক সময় ওই দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে হয়।
৫ অক্টোবর গণশুনানিতে পিডিবির কর্মকর্তা কাওছার আমীর আলী বলেছিলেন, ভর্তুকির পরিবর্তে দেওয়া ঋণের সুদ বাবদ ইউনিটপ্রতি ২১ পয়সা দিতে না হয়। আর যদি ১৩২ কেভি লেভেলের গ্রাহকদের পিডিবির অধীনে ন্যস্ত করা হয় তাহলে হ্রাসকৃত মূল্যে বিদ্যুৎ বিতরণ করা সম্ভব।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমি জ্ঞান অর্জন করতে এসেছি। তবে বিশাল উপস্থাপনা খেই হারাতে পারে। আপনারা যদি গ্রাফিক আকারে দেন তাহলে বুঝতে সুবিধা হয়। অথবা আমরাও গ্রাফিক আকারে তৈরি করতে পারি। সেখানে থাকবে আমরা কি করছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অনেক সুন্দর পরিসংখ্যান দিয়েছেন। পিডিবির অনেকে সুর মিলিয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে এই প্রস্তাব করে লাভ নেই। দাম কমা-বাড়ানোর বিষয়টি বিইআরসির বিষয়। আমি বলতে চাই, আজকে বিদ্যুৎ দিয়ে কালকেই রাতারাতি বিদ্যুতের দাম কমানো অসম্ভব। আপনারা বলেছেন, অপ্রয়োজনীয় লোকবল রয়েছে। কিন্তু লোকবল কমালে প্রিন্স ভাইরাতো (আলোচনায় অংশ নেওয়া সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সকে লক্ষ্য করে) আন্দোলনে নামবেন!’
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৭
এসআই/জেএম