বৃহস্পতিবার (০৫ এপ্রিল) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে খাগড়াছড়ির ঠাকুরছড়ায় নির্মিত গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগে দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে খাগড়াছড়ি ও আশপাশ এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
কয়েকদিনের মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা সদর, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও দীঘিনালা উপজেলা এবং রাঙামাটির ৩ উপজেলার সব গ্রাহক পুরো ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সুবিধা পাবেন।
এর আগে বুধবার (০৪ এপ্রিল) টাওয়ার, ট্রান্সফরমার ও অন্যান্য সরঞ্জাম স্থাপন এবং সঞ্চালন লাইনে সংযোগ দিয়ে খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখা হয়। কারিগরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অবশেষে খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ বিতরণ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ সালের শুরুর দিকে জেলা সদরের ঠাকুরছড়া এলাকায় ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রটির কাজ শুরু হয়েছিল। মাত্র দু’বছরের মাথায় রাঙামাটির কাপ্তাই চন্দ্রঘোনা থেকে দীর্ঘ ৮০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনটি রাঙামাটি হয়ে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত পৌঁছে। ৬ একর জায়গার ওপর নির্মিত উপকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। আর দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা।
শুনতে অবাক হলেও সত্য যে, দেশের দীর্ঘতম বিদ্যুতের লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০৫ কিলোমিটার। ৮০’র দশকে অনেকটা দায়সারাভাবে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে টানানো লাইন দিয়েই চলছে খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলা ছাড়াও পাশের জেলা রাঙামাটির নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলা।
বহু বছর ধরে বিদ্যুতের ভয়াবহ এ লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ চললেও সমাধান মিলছিল না। চলতো না মোটর, মেসিনারিজ, ক্ষুদ্র কল-কারখানাও। পানির অভাবে হাহাকার। বিদ্যুৎ নির্ভর মানুষের জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। বিদ্যুতের এ ভোগান্তিতে পড়ে হাসপাতাল, বিভিন্ন আবাসিক ভবনে পানীয় জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছিল।
২০১৩ সালে খাগড়াছড়িতে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে গ্রিড উপকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেছিলেন।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের সদস্য নজির হোসেন বলেন, বিদ্যুতের কারণে ব্যবসায়ীদের বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয়। খুব বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকতো না। বিদ্যুৎ থাকলেও লো-ভোল্টেজের কারণে থাকা না থাকা এক সমান ছিল। এখন আশা করি এ সমস্যা মিটে যাবে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নয়ন ময় ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে রোগীদের কি পরিমান ভোগান্তি হয়, তা বলে বোঝানো যাবে না। হাসপাতালে বিদ্যুৎ নির্ভর কোনো কিছুই চলে না। এক্সরে মেশিনে যে পরিমান ভোল্টেজ দরকার তা নেই। পানি উঠানো যায় না।
খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খাগড়াছড়িবাসী বিদ্যুৎ সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দুলাল হোসেন জানান, এতদিনের বিদ্যুতের দুর্বিসহ লো-ভেল্টেজের অবসান হলো। এখন খাগড়াছড়ির শিল্প কারখানার বিপ্লব ঘটবে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৮
আরবি/