ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘উন্নয়নের নামে বাংলাদেশ হতে চলেছে কয়লার ভাগাড়’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৯
‘উন্নয়নের নামে বাংলাদেশ হতে চলেছে কয়লার ভাগাড়’

ঢাকা: সারাবিশ্ব যখন জলবায়ু সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন উন্নয়নের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। এর মধ্য দিয়ে এ দেশ দিন দিন এক কয়লার ভাগাড়ে পরিণত হতে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল। 

শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন সুলতানা কামাল।  

ইউনেস্কোর ৪৩তম সভার সব সুপারিশ বাস্তবায়ন, সুন্দরবনের পাশে রামপালসহ সব শিল্প নির্মাণ প্রক্রিয়া বন্ধ ও সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্নের দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি।

বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সমালোচনা করে সুলতানা কামাল বলেন, সারাবিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত মহাসংকট নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, বাংলাদেশ তখন কিছু খোঁড়া যুক্তির ভিত্তিতে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে চলেছে। অথচ এটি সর্বজনবিদিত যে, কয়লা হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জ্বালানি, আর ‘ভালো কয়লা’ একটি উৎকৃষ্ট মিথ্যা। ফলে উন্নয়নের নামে বাংলাদেশ হতে চলেছে বিশ্বনন্দিত কয়লার ভাগাড়।  

‘উন্নয়ন বা বিদ্যুতের জন্য কয়লা, এমনকি কোনো জীবাশ্ম জ্বালানিরই প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্র পরিচালকদের মন পরিষ্কার থাকলেই আমাদের অফুরন্ত বিকল্প জ্বালানি চোখে পড়বে। ’ 

সুন্দরবন প্রশ্নের সরকারের সমালোচনা করে সুলতানা কামাল বলেন, আমরা চাই সরকার তার ভুল অবস্থান থেকে সরে এসে রামপাল প্রকল্প বাতিল করুক। বনবিরোধী সব স্থাপনা উৎখাত করুক এবং  বনের প্রাকৃতিক চরিত্র সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধকরণের সঠিক পদক্ষেপ নিক। বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ তৈরি করুক।

‘সম্প্রতি জানা গেল যে, রামপাল প্রকল্প নির্মাতা ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির সব কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সে দেশে স্থগিত করেছে। ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভারতের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি আগামী ৫ বছর নতুন করে কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবে না। কারণ, তারা কার্বন তৈরির বদলে গুজরাটে বিশ্বের বৃহত্তম সৌরশক্তি পার্ক স্থাপনে ২৫ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কয়েকটি রাজ্যের কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন বাতিল করে সেখানে এই সৌরপ্রকল্প স্থাপন করা হবে। শুধু তাই নয়, সৌরপ্রকল্পের সমর্থনে তারা অর্ধদিবস কিছু কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখবে বলেও জানা যায়। অথচ একই প্রতিষ্ঠান প্রবল আপত্তির মুখে বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুৎ তৈরিতে পিছপা হচ্ছে না, এটি নিঃসন্দেহে একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ। ’

এ বছরের ইউনেস্কো সম্মেলনের প্রসঙ্গ তুলে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির এ আহ্বায়ক আরও বলেন, আপনারা সবাই জানেন যে, এ বছরের ৩০ জুন আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৩তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আমাদের অন্যতম বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনের সাম্প্রতিক দুরাবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর কমিটি নতুন করে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে সুন্দরবন নিরাপদ ও ভালো রাখার ব্যাপারে আমাদের দেশের সফলতা নিয়ে ইউনেস্কোর ৪১তম সভায় বেশকিছু নেতিবাচক কিন্তু সঠিক পর্যবেক্ষণ ছিল। বাংলাদেশের দায়িত্ব ছিল সেসব বিষয়ে করণীয় সব কিছু সম্পন্ন করে এবারের, অর্থাৎ সর্বশেষ সভায় সাফল্য অর্জনের একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া।  

‘কিন্তু তার বদলে বাকুর সভায় বাংলাদেশের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ইউনেস্কো বিশ্বঐতিহ্য কমিটি সন্তুষ্ট হয়েছে বলে মনে হয়নি। কারণ ২০১৭ সালের কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য ওই কমিটি আবারও জোর তাগাদা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণ দল সরেজমিনে সুন্দরবন দেখতে আসবে। বাংলাদেশকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আরও কিছু কাজের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। আগামী বছর এমন সময়ে বিশ্বঐতিহ্য কমিটির ৪৪তম সভায় আবারও তার মূল্যায়ন করা হবে। তখন কমিটি বাংলাদেশ সরকারের কাজে সন্তুষ্ট না হলে, সুন্দরবন বিপদাপন্ন ঐতিহ্য তালিকায় চলে যেতে পারে। যা হবে আমাদের এই বন, জনগণ ও দেশের জন্য অযোগ্যতা, ব্যর্থতা, দুঃখজনক, লজ্জাকর ও অপমানজনক একটি বিষয়। ’ 

সার্বিক পরিস্থিতিতে করণীয় হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ৫টি দাবি উপস্থাপন করে  করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি। দাবিগুলোর মধ্যে আছে- অবিলম্বে সুন্দরবনবিধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলজুড়ে পরিকল্পিত সব কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল ও বিকল্প জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, সুন্দরবনের বাফার জোন, কোর জোন ও বনের নিকটবর্তী সব কলকারখানা, এলপিজি কারখানা বন্ধ করা, লাল ক্যাটাগরির শিল্পকে কলমের খোঁচায় সবুজকরণ,  অবৈজ্ঞানিক, অসৎ বেআইনি কাজ বন্ধ করা, ইউনেস্কোর সব দিকনির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং সমগ্র দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশের কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষার কার্যসীমা নির্ধারণ ও সমীক্ষার স্তরে নৈতিক বৈধতা নিশ্চিত করা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১৯
এসএমএকে/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।