ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ নির্মাণ কাজ দেখলেন রাষ্ট্রদূত

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ নির্মাণ কাজ দেখলেন রাষ্ট্রদূত রাশিয়ায় রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী কারখানা পরিদর্শন করেছেন রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ, পেট্রোজাভোদস্ক এবং ভলগাদনস্কের বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করেন তিনি।

শনিবার (২৪ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এতে উল্লেখ করা হয়, রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভারী যন্ত্রাংশ নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি তদারকির জন্য রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান সেন্ট পিটার্সবার্গ, পেট্রোজাভোদস্ক এবং ভলগাদনস্কে অবস্থিত বিভিন্ন কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

সেন্ট পিটার্সবার্গে অবস্থিত পাওয়ার মেশিন গ্রুপের চারটি কারখানায় উৎপন্ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। পাওয়ার মেশিন কোম্পানির তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য টারবাইন ও জেনারেটর, পরিবহন এবং সমুদ্রগামী জাহাজের যন্ত্রাংশ এবং ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন বৃহৎ যন্ত্রপাতির নকশা প্রণয়ন এবং উৎপাদনে ১৬০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। পৃথিবীর ৫৭টি দেশে পাওয়ার মেশিন কোম্পানির উৎপাদিত যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। পারমাণবিক শক্তি বিভাগের প্রধান ও উপ-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনটন ভিক্টরভ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মাণাধীন যন্ত্রপাতি নির্মাণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বর্ণনা করেন।

পাওয়ার মেশিন গ্রুপের এল এম জেড কারখানাটি রাশিয়ার বৃহত্তম টারবাইন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে এল এম জেড কারখানায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের টারবাইনের জন্য নির্মাণাধীন হাই প্রেশার রোটর এবং চারটি লো-প্রেশার রোটর এর নির্মাণ প্রক্রিয়া দেখানো হয়। হাই প্রেশার রোটরের নির্মাণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাওয়ার মেশিনের টুরবা অ্যাটমগ্যাজ কারখানায় উৎপন্ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের টারবাইনের জন্য হাই প্রেশার সিলিন্ডার, লো-প্রেশার সিলিন্ডার, কন্ডেন্সার সেট, লো-প্রেসার হিটার এবং আরো কিছু যন্ত্রপাতি। ইলেক্ট্রসিলা কারখানায় তৈরি হচ্ছে জেনারেটর এবং পাওয়ার মেশিন-তোশিবা কারখানায় প্রস্তুত হচ্ছে ট্রান্সফরমার।

কারখানায় পরিদর্শনকালে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান বলেন, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পেট্রোজাভোদস্কমাশ কারখানাটি পেট্রোজাভোদস্ক শহরে অবস্থিত রোসাটম-এর কারিগরি বিভাগ অ্যাটম-এনার্গোম্যাশের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান।

শাখার পরিচালক পাভেল মারচেঙ্কো রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। পেট্রোজাভোদস্কমাশ কারখানা পরিদর্শনের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পাভেল মারচেঙ্কো কারখানার অতীত এবং বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে অবহিত করেন এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মাণাধীন যন্ত্রপাতি নির্মাণ প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বর্ণনা করেন।

পেট্রোজাভোদস্কমাশ কারখানাটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের জন্য চারটি রিয়্যাক্টর কুল্যান্ট পাম্পের স্ফেরিক্যাল হাউজিং ও স্পেসার, দ্বিতীয় ইউনিটের চারটি স্ফেরিক্যাল হাউজিং ও স্পেসার, প্রথম ইউনিটের প্রাইমারি সার্কিট পাইপলাইন, দ্বিতীয় ইউনিটের আটটি প্যাসিভ কোর ফ্লাডিং সিস্টেম এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। কারখানাটি থেকে ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর কুল্যান্ট পাম্পের একটি স্ফেরিক্যাল হাউজিং রূপপুরে সরবরাহের জন্য সমূদ্র বন্দরে প্রেরণ করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় স্ফেরিক্যাল হাউজিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

রিয়্যাক্টর কুল্যান্ট পাম্প একটি সেফটি ক্লাস-১ ইকুইপমেন্ট এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রিয়্যাক্টর এবং স্টিম জেনারেটরের মধ্যে কুল্যান্ট প্রবাহ নিশ্চিত করে। প্রতিটি স্ফেরিক্যাল হাউজিং এর উচ্চতা ৩.৫ মিটার, প্রস্থ ৩ মিটার এবং ভর ৩৩ টন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপদ পরিচালনার লক্ষ্যে আল্ট্রাসনিক টেস্ট, রেডিওগ্রাফিক টেস্ট, হাইড্রলিক টেস্ট ও অন্যান্য নন-ডেস্ট্রাক্টিভ ও ডেস্ট্রাক্টিভ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি যন্ত্রের নির্ভরযোগ্যতা ও স্ট্রেংথ নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করা হয়।

অ্যাটম-এনার্গোম্যাশের ভোলগোদোনস্ক শাখা অ্যাটোমম্যাশ কারখানাটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিউক্লিয়ার আইল্যান্ডের ভেসেল এবং হিট-এক্সচেঞ্জ যন্ত্রপাতি তৈরির শীর্ষস্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা, যেটি ১৯৭৬ স্থাপিত। অ্যাটোমম্যাশ কারখানা পরিদর্শনের শুরুতে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ইগর ভি কতভ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন। সভায় বাংলাদেশের জনগণের জন্য গৌরবজনক এই প্রকল্পটির কাজ গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা হবে বলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন। সভা শেষে কারখানাটির বিভিন্ন বিভাগে রূপপুর প্রকল্পের জন্য নির্মাণাধীন যন্ত্রাংশ পরিদর্শন করা হয়।

ভোলগোদোনস্কের অ্যাটোমম্যাশ কারখানায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র পারমাণবিক চুল্লি এবং স্টিম জেনারেটরসহ প্রটেকটিভ টিউব ইউনিট, কোর ব্যারেল এবং কোর ব্যাফেল নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি এবং চারটি স্টিম জেনারেটর নির্ধারিত সময়ে প্রস্তুত করে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।

কারখানায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশের নির্মাণকাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করে রাষ্ট্রদূত সন্তোষ প্রকাশ করেন। কারখানাগুলি পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ দূতাবাস মস্কোর নিউক্লিয়ার পাইয়ার উইং এর কাউন্সেলর এবং কারখানাগুলিতে নিয়োজিত বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিদর্শকরাও উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শনকালে কারখানাগুলির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাক্টর জেএসসি অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের প্রতিনিধি রূপপুর প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং অগ্রগতি তদারকির জন্য রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।