ঢাকা: ভূমি অধিগ্রহণেই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতি হয়েছে ৩৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এছাড়া জমি দখল, আদিবাসীদের উচ্ছেদের ঘটনাও ঘটেছে।
বুধবার (১১ মে) ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে এ তথ্য জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে সংস্থাটি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
টিআইবি বলছে, বরিশাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুকেন্দ্রের ভূমি ক্রয় অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৩৯০ কোটি ৪৯ লাখ টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৫৫ কোটি টাকা ও মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১১৯ কোটি ৪৫ টাকা দুর্নীতি হয়েছে। এই অর্থ নিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মী, ভূমি অধিদগ্রহণ শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ এবং মধ্যস্বত্বভোগী।
এছাড়া ভারত, চিন, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ায় নির্মিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম বাংলাদেশি টাকায় ৩ দশমিক ৪৬ টাকা থেকে ৫ দশমিক ১৫ টাকা পড়লেও বরিশাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাঁশখালী এসএস বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি মূল্যে বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ রেখে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ২২ থেকে ৪৯ শতাংশ বেশি মূল্য ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রকল্প অনুমোদেন দুর্নীতি, প্রয়োজনের অধিক জমি ক্রয়অধিগ্রহণ, ভূমি ও ক্রয়অধিগ্রহণে জোরপূর্বক উচ্ছেদ, আদিবাসীদের জমি ও উপকূলীয় বনসহ নদী ও খাল দখল, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক কম মূল্যে স্থানীয়দের থেকে জমি ক্রয় করে বেশি মূল্যে এস আলম কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর, ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানে অনিয়ম, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ক্ষতিগ্রস্তদের হয়রানিসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন মতো বিষয়ও উঠে এসেছে টিআইবির গবেষণায়।
সুপারিশ
জার্মান ভিতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি ওঠে আসায় সাতটি সুপারিশ করেছে।
১. জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত ইন্ট্রিগ্রেটেড অ্যানার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) প্রণয়ন করতে হবে এবং একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ প্রস্তাবিত আইইপিএমপি’তে কৌশলগতভাবে নবায়নয়োগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
২. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ বাতিল করতে হবে এবং ২০২২ সালের পরে নতুন কোনো প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থায়ন করার ঘোষণা দিতে হবে।
৩. জ্বালানি প্রকল্প অনুমোদন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন, ঋণের শর্ত নির্ধারণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত সকল নথি প্রকাশ করতে হবে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের ক্ষতি রোধে এবং জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় চলমান ঝুঁকিপূর্ণ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত, সামাজিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পাদন সাপেক্ষে অগ্রসর হতে হবে।
৫. আইএনডিসি’র অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পরিকল্পনাধীন কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে সোলারসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬. ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া, ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ ও বিতরণ এবং ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে হবে। এবং
৭. প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত দুর্নীতির তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২২
ইইউডি/এসআইএস