নীলফামারী: শিল্প ও বাণিজ্যের শহর নীলফামারীর সৈয়দপুরে সারাদিনে ১২ বার বিদ্যুৎ আসে। এমনটাই জানিয়েছেন বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী।
বণিক সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী জানান, সারাদিন বিদ্যুৎ আসে আর যায়। এতে স্থানীয় শিল্প-কারখানায় ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক কারখানায় বৈদ্যুতিক মোটর পুড়ে যাচ্ছে। ফলে গচ্ছা দিতে হচ্ছে শিল্প মালিকদের। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রভাব পড়েছে দোকান ও মার্কেটগুলোতেও। ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জেনারেটর এবং আইপিএস নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে করে বাড়ছে ব্যয়।
সৈয়দপুর রাবেয়া মোড় এলাকায় অবস্থিত ইকু পেপার মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিদ্দিকুল আলম জানান, গত এপ্রিল মাস থেকে এই অঞ্চলে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট চলছে। দিনে কমপক্ষে ১১/১২ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। ফলে পেপার মিলের মেশিন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে করে উৎপাদন কমেছে প্রায় ৭০ ভাগ। গত এক মাসে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মিলের অনেক মেশিন নষ্ট হয়েছে।
সৈয়দপুরের নিয়ামতপুর এলাকায় অবস্থিত নোয়াহ্ ব্রান্ডের প্রেসার কুকার ও ননস্টিক তৈজসপত্র প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান রয়েল্যাক্স মেটাল ইন্ডাষ্ট্রির পরিচালক রাজকুমার পোদ্দার জানান, তার কারখানার ১০টি মোটর পুড়ে গেছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে।
উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিপনী বিতান সৈয়দপুর প্লাজায় দেখা যায়, পুরো মার্কেটটি অন্ধকারে নিমজ্জিত। কোনো কোনো শোরুমে জেনারেটর চললেও বেশিরভাগ দোকানে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। অন্ধকার মার্কেটে ক্রেতাদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। মার্কেটের বুলবুল ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম বুলবুল জানান, সবখানে শুনছি বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমরা। কিন্ত সৈয়দপুরে ভিন্ন চিত্র। কেন ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।
একই মার্কেটের নারী উদ্যোক্তা ও পিন্ধনের স্বত্বাধিকারী আহমেদা ইয়াসমিন ইলা জানান, নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছি। কিন্ত চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।
এদিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড ( নেসকো) সৈয়দপুর বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্র সূত্র জানায়, শিল্প বাণিজ্য নির্ভর শহর সৈয়দপুরে প্রতিদিন ৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। সরবরাহ মিলছে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ। দৈব দুর্বিপাকে ২/১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম মিললেও লোড ম্যানেজমেন্টে কোনো সমস্যা নেই আমাদের।
নেসকো সূত্র জানায়, সৈয়দপুরে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৪৬ হাজার ৩৬৯টি। এরমধ্যে আবাসিক ৩৯ হাজার ২৯৫টি, শিল্প ৬৭৯টি, সেচ ৮২২টি, অনাবাসিক ৪০৫টি, অটোচার্জার পয়েন্ট ৮৩টি, বাণিজ্যিক চার হাজার ৮৬৪টি। এছাড়া এএইচটি সংযোগের জন্য ৭০ জন গ্রাহক রয়েছেন।
সূত্র মতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। এটি কোনো লোডশেডিং নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রকৌশলী জানান, এখন কোনো ঝড় বৃষ্টি নেই। তবুও প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতাকে দায়ী করেন তিনি।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড ( নেসকো) সৈয়দপুর বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া জানান, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়ো বাতাসে বিদ্যুতের তারের ওপর গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ার আশংকা থাকে। এজন্য আমরা নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ করে থাকি। এখন দুর্যোগ নেই তবুও বিদ্যুৎ বিভ্রাট কেন?- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, ৩০ মে, ২০২২
এমএমজেড