ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

গাছ-বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের লাইন, ঝুঁকিতে হাজার হাজার মানুষ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২২
গাছ-বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের লাইন, ঝুঁকিতে হাজার হাজার মানুষ বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের তার।

যশোর: যশোর শহরতলী ধর্মতলা খ্রিস্টান মিশনপাড়া ও গাজীপাড়ায় বিধিবহির্ভূতভাবে গাছ ও বাঁশকে খুঁটি বানিয়ে ৭শ গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।  

সংযোগ দেওয়ার প্রায় দেড় দশক অতিবাহিত হলেও সংস্কার করা হয়নি এসব ঝুঁকিপূর্ণ লাইন।

ঝুঁকিপূর্ণ এসব লাইনে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।  

গ্রাহকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানোর দাবি এবং একাধিকবার এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ করেছেন তারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকির মধ্যেই চলাচল ও বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

যশোর শহরতলী সদরের আরবপুর ইউনিয়নের ধর্মতলা বাজার থেকে বিদ্যুৎ লাইন পূর্বদিকের প্রায় ২শ গজ গিয়ে থেমে গেছে। এরপর ওই এলাকার খ্রিস্টান মিশনপাড়া ও গাজীপাড়ায় ৭শ পরিবারের বাস।  


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইটের সলিংয়ের রাস্তার ধার দিয়েই বাঁশের খুঁটি পুতে ঝোলানো হয়েছে বিদ্যুতের তার। তারের জটলার ভার সইতে না পেরে বাঁশগুলো হেলে পড়েছে। কোথাও বা হেলে থাকা বাঁশ ঠেকনা দেওয়া হয়েছে আরেকটি বাঁশ দিয়ে। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ওজোপাডিকোর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এখানবার অনেকের ঘরের টিনের ওপর দিয়ে অন্য পরিবারে সংযোগ টানা হয়েছে। অনেক স্থানে তারের ভারে বাঁশগুলো হেলে পড়েছে।  

গ্রামবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের খুঁটির জন্য চেষ্টা করছিলেন তারা। কিন্তু খুঁটির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে কর্তৃপক্ষ বাঁশ বসিয়ে সংযোগ দেয়। এরপর গত দেড় দশক ধরে এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)।  

মিশনপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী মধু বিশ্বাস বলেন, বৃষ্টি ও ঝড়ের সময় ঘর থেকে তারা বের হতে পারেন না। মাঝে মাঝে তারে তারে ঘর্ষণে আগুনের ধোঁয়াও হয়। আবার কিছু জায়গায় তারের ঘর্ষণে তার একত্রিত হয়ে গেছে এমনও দেখা গেছে। কয়েকদিন আগের এক শিশু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়; তবে সৃষ্টিকর্তা তার জীবন না নিলেও সে শিশুটা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।  

গোলাম মোস্তফা কামাল নামে ভোক্তভোগী জানান, বিদ্যুৎ অফিসে বহুবার অবহিত করা হয়েছে; কিন্তু কোন কাজ হয়নি। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আমরা বাস করি সবাই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছি।  

গীতা বিশ্বাস বলেন, আমাদের এই দুই মহল্লায় কোন বিদ্যুতের খুঁটি নেই। ছোট ইটের রাস্তার পাশ দিয়ে বাঁশে বেঁধে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। দুই পাড়ার শতাধিক পরিবারে বিদ্যুতের সংযোগের চাহিদা থাকলেও এভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় ঝুঁকির কথা বিবেচনায় অনেকে সংযোগ নেননি। বছরের পর বছর বাকি পরিবারগুলো বঞ্চিত হয়ে চললেও খুঁটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।  

শহিদুল ইসলাম গাজী বলেন, ‘তারা জানেন এভাবে বিদ্যুৎ নেওয়াটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ, তবু কিছু করার নেই। ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করতে বলেছে। তারা জানিয়েছে, দ্রুতই খুঁটি স্থাপন করা হবে। কিন্তু আজও হয়নি।

এদিকে বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানোর দাবিতে বিভিন্ন সময়ে এলাকাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিদ্যুৎবিভাগের কাছে অভিযোগ ও স্মারকলিপি দিয়ে আসছে। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর যশোর ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে এলাকাবাসী।  

৩০৪ জনের সাক্ষরিত স্মারকলিপিতে এলাকাবাসীর ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসাবসের কথা উল্লেখ দ্রুত বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানোর দাবি জানিয়েছেন।  

এ বিষয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকারবাসীদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যশোর ওজোপাডিকোর আওতায় নতুন কোন প্রকল্প না থাকায় আমরা ওই এলাকার দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান করতে পারছি না। আগামীতে নতুন প্রকল্প এলে কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০২২
ইউজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।