ঢাকা: ২০২৩ সাল, পুরোটা বছর জুড়েই আলোচনায় ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করায় তার সমালোচনা করেন সরকারি দলের অনেক নেতা।
বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই বার্তা নিয়েই রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সংলাপ ও সমঝোতার অনেক প্রচেষ্টাও চালিয়েছেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত তার এই চেষ্টা সফল হয়নি।
পিটার হাসের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসাবে তিনি নিজের আচরণের সীমা মেনে চলবেন বলে আশা করে সরকার। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে-বিপক্ষে তার অবস্থান নেওয়া উচিত নয়।
পিটার হাসকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকিও এসেছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরীর হুমকিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এ নিয়ে সারা দেশে তীব্র সমালোচনা হয়। বক্তব্যের নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন- এ ধরনের সহিংস বক্তব্য খুবই সমর্থন অযোগ্য।
এ প্রসঙ্গে পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা সব কূটনীতিককে নিরাপত্তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা অক্ষরে অক্ষরে ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলি। কেউ যদি গর্হিত কাজ করে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব, অ্যাকশন নিচ্ছিও। তবে কারও মুখ তো আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারি না।
গত ১৬ নভেম্বর ব্যক্তিগত ছুটি কাটাতে শ্রীলঙ্কা যান পিটার হাস। ২৭ নভেম্বর ঢাকায় ফেরেন তিনি। এই ছুটি নিয়েও নানা কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। এছাড়া বাংলাদেশে ‘আরব বসন্ত’ ঘটানোর চেষ্টা করছেন পিটার হাস- এমন অভিযোগ তোলে রাশিয়া। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কৌশলগত যোগাযোগ সমন্বয়ক জন কিরবি বলেন, এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে পিটার হাস একাধিকবার বৈঠক করেন। সেসব বৈঠকে তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন। এদিকে বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমর পিটার হাসকে ‘অবতার’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেন। সেই বক্তব্য নিয়েও নানা আলোচনা সমালোচনা হয়।
চলতি বছর ২৭ মে বাংলাদেশকে নিয়ে ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর মাসে পিটার হাস এক সাক্ষাৎকারে বলেন, গণমাধ্যমের কর্মীরাও ভিসা নীতির আওতায় পড়তে পারেন। তার এই বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। পরে পিটার হাসের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেয় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।
সরকারি দলের পক্ষ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সমালোচনা করা হলেও পিটার হাস বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কখনোই কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। তবে আমরা চাই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য এবং সুষ্ঠু হোক। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। পিটার হাস বলেন, গণমাধ্যমকে অবশ্যই মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। তারা যেন সরকারের এবং রাজনীতির সমালোচনা করতে পারে। তবে তাদের নিজেদেরই অবশ্যই গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪,২০২৩
টিআর/এমজে