ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

সালতামামি

২০১৭ সালের আলোচিত ১০

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
২০১৭ সালের আলোচিত ১০ বিদায়ী বছরে এই ছবিগুলোই বেশি দেখা গেছে সংবাদমাধ্যমে

বিস্মৃতির অতীত হয়ে যাচ্ছে আরেকটি বছর। দিন গড়িয়ে রাতের পর যে অরুণোদয় হবে, সেটি নতুন বছরের। বছরকে বিদায় দেওয়ার এই শেষ লগ্নে এসে এখন সবাই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব-নিকেশে মত্ত। কী দিয়ে গেলো এই বছর? কী নিয়ে গেলো মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ?

এই হিসাব-নিকেশে বছরের অতীত দিনগুলো ঘাঁটছে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমও। কোন ব্যক্তিত্ব বা কী ঘটনায় কেঁপেছে বিশ্বসংবাদমাধ্যমের শিরোনাম? কোন ঘটনা বদলে দিয়েছে আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক রাজনীতি বা অর্থনীতির দৃশ্যপট? হিসাবের খাতায় এখন দেখা যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক ও তার পরবর্তী কীর্তির কথা।

দেখা যাচ্ছে— আমেরিকার নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ তদন্ত, লাস ভেগাসে কনসার্টে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা, হলিউডের প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে নামকরা সব অভিনেত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার তুমুল উত্তেজনা, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের ব্যর্থ চেষ্টা, কাতারের ওপর সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের অবরোধ আরোপের ঘটনাও। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা সংকট তৈরির চিত্রও দেখা যাচ্ছে এ বছরের আলোচিত সব ঘটনার হিসাবের খাতায়।

বারবার বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে আসা এমনই ১০ ঘটনা নিয়ে বিগত বছরে একপলক ফিরে তাকাচ্ছে বাংলানিউজ।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক এবং তার পরবর্তী কাণ্ডকীর্তি

গত হয়ে যাওয়া বছরটা শুরুই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ধনকুবের ও আলোচিত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক দেখে। পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে, অসংখ্য জরিপকে ভুল প্রমাণ করে নির্বাচনে জিতে যাওয়া ট্রাম্প অভিষেকেও বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন। ২০ জানুয়ারি তার শপথগ্রহণের দিন এবং পরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এমনকি নারী নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তার বিরুদ্ধে শপথের পরদিনই বিক্ষোভে নামে লাখো নারী। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সিআইএ, এফবিআইসহ গোয়েন্দা সংস্থার সমালোচনা করে, সাবেক প্রেসিডেন্টদের তোপ দেগে, বহুল আলোচিত জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে, বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিক ও শরণার্থী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে, সিএনএনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে, দফায় দফায় টুইটারে ঝড় তুলে এবং আরও বিভিন্ন বিতর্কিত কাণ্ড ঘটিয়ে আলোচনায় থেকেছেন ট্রাম্প। তবে সব ‘বিতর্ক বা ঝুঁকি’ কাটিয়ে একটি বছর ঠিকই পার করে দিয়েছেন ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বেশিক্ষ্যাপাটে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের আঞ্চলিক মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানের উত্তেজনার সম্পর্ক পুরো বছরই সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় বেশি থেকেছে বলা যায়। বছরের শুরু থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এতে বরাবরই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ওয়াশিংটন। বিশেষত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে কথা বললেও পরে ডোনাল্ড ট্রাম্পই উত্তর কোরিয়াকে নানা হুমকি-ধামকি দেন। এমনকি দেশটি ঘেঁষে প্রশান্ত মহাসাগরে একাধিক যুদ্ধবিমানবাহী রণতরীর মহড়াও দেয় ওয়াশিংটন। জবাবে পিয়ংইয়ংও যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় নিয়ে আসার ঘোষণা দেয়। শেষদিকে কেবল বাকযুদ্ধ চললেও পরিস্থিতি অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, উত্তর কোরিয়া নতুন করে কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালে উত্তেজনার আগুনে ফের ঘি ঢালার মতো কাণ্ড হবে সেটা।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ তদন্ত

আগের বছর ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর থেকেই অভিযোগ ওঠে, এই নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে জালিয়াতি করেছে রাশিয়া। ট্রাম্প শপথগ্রহণের পর এই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান তৎকালীন এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি। কিন্তু তদন্ত থেকে নিজের নাম বাদ না দেওয়ায় কোমিকে মে মাসে বরখাস্ত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এরপর ওই মাসেই অভিযোগ তদন্তের জন্য সাবেক এফবিআই প্রধান রবার্ট মুলারকে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয় বিচার মন্ত্রণালয়। এই ডিসেম্বরেই মুলারের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারীরা চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচনী জালিয়াতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ গঠন করেন। এই চারজনের মধ্যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনও রয়েছেন।

কাতারের ওপর আরব জোটের অবরোধ

জুনে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে পুরো বিশ্ব রাজনীতির আলোচনায় উঠে আসে কাতারের ওপর সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় জোটের অবরোধ। সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপসহ নানা অভিযোগে ৫ জুন দোহার ওপর এই সর্বাত্মক অবরোধ জারি করা হয়। কিন্তু এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে দোহা দাবি করে, তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে হস্তক্ষেপ ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিবর্তন করতেই আরবরা এভাবে উঠেপড়ে লেগেছে। বিশ্লেষকরা এই অবরোধকে বর্ণনা করেন রিয়াদ বলয়ের সঙ্গে আঙ্কারা-তেহরান বলয়ের দ্বন্দ্ব হিসেবে। কারণ অবরোধ প্রত্যাহারের শর্ত হিসেবে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বন্ধ, তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে কাতারের দহরম-মহরম সম্পর্ক বন্ধের দাবি তোলা হয়। আরবরা মনে করে, আল জাজিরাকে ব্যবহার করে তাদের রাষ্ট্রীয় বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে কাতার ও তার মিত্ররা। এই অবরোধকেন্দ্রিক উত্তেজনা কমলেও সংকট এখনও কাটেনি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জ্বালিয়ে দেওয়া একটি রোহিঙ্গা জনপদমিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ

সিরিয়া-ইরাকে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বর্বরতা দেখে আসা বিশ্ববাসী এ বছর সবচেয়ে বেশি নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছে মিয়ানমারে। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার এক অজুহাতে ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরীহ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে দেশটির মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এই অভিযানে প্রাণ যায় হাজার হাজার রোহিঙ্গার। ধর্ষণের শিকার হয় শত শত কিশোরী, তরুণী ও গৃহবধূ। ডক্টর উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) হিসাব মতে, প্রথম একমাসেই সরাসরি গুলি করে বা আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে। সব মিলিয়ে প্রাণ গেছে ৯ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার। জাতিসংঘ এ অভিযানকে আখ্যা দেয় ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে। তাদের মতে, ওই অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার কিছুটা নমনীয় হতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকেও সই করেছে। কিন্তু এই স্মারক বাস্তবায়নে তারা গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা অর্জনের ব্যর্থ চেষ্টা

দীর্ঘদিনের স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা থেকে ১ অক্টোবর এ নিয়ে গণভোট করে স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়া। কিন্তু ভূমধ্যসাগর তীরের কাতালান ভাষা ও সংস্কৃতির অঞ্চলটির এই উদ্যোগকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দেয় মাদ্রিদ সরকার। উভয়পক্ষের নেতৃত্বের বাকযুদ্ধের কয়েকসপ্তাহ পর কাতালোনিয়ার পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ঘোষণা পাস হলে আঞ্চলিক সরকারকে বরখাস্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার। শেষে গ্রেফতারি পরোয়ানার মুখে দেশ ছেড়ে বেলজিয়ামে পালিয়ে যান স্বাধীনতা ঘোষণার নেতৃত্বদাতা আঞ্চলিক প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদেমন্ত। তার অনুসারীরা এখন বিচারের মুখোমুখি। তবে বিদেশে অবস্থানরত পুজদেমন্ত বলেছেন, তিনি আইনি লড়াইও চালাবেন, স্বাধীনতার সংগ্রামও চলবে।

লাস ভেগাসে বর্বরোচিত হামলা

বছরের সবচেয়ে ভয়াবহতম সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে ১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে এক উন্মুক্ত কনসার্টে। পার্শ্ববর্তী বহুতল ক্যাসিনো থেকে বন্দুকধারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে সেখানে প্রাণ যায় ৫৯ জনের। পরে জানা যায়, হামলাকারী ছিলেন স্টেফেন প্যাডক নামে ৬৪ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ। আবার এ হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটও (আইএস)। এ ঘটনায় পুরো যুক্তরাষ্ট্র মুষড়ে পড়ে।

হার্ভে উইনস্টেইনের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ও ‘মি টু’

অক্টোবরের শুরুতে হলিউডের প্রভাবশালী চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের খবর ছড়ায় সংবাদমাধ্যমে। এরপর অনেক অভিনেত্রীও মুখ খোলেন হার্ভের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে ইতালিয়ান অভিনেত্রী আসিয়া আর্জেন্তো, মার্কিন অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও গিনেথ প্যালট্রোও রয়েছেন। হার্ভের বিরুদ্ধে তিন দশকে অন্তত আটজনকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগের ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ‘মি টু’ (#meetoo) চালু হয়। এরমাধ্যমে অন্য নারীরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা জানান দেন বিশ্বকে। এই গণ-আওয়াজে বিশ্বের অনেক রাজনীতিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বকেও পদ থেকে সরে যেতে হয়।

রবার্ট মুগাবের ক্ষমতাচ্যুতি

এ বছর বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় ছিল জিম্বাবুয়ের প্রায় তিন যুগের শাসক রবার্ট মুগাবের ক্ষমতাচ্যুতি। মূলত ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগবাকে বরখাস্ত করার জেরে নভেম্বরে ক্ষমতা হারাতে হয় মুগাবেকে। সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ৭৫ বছর বয়সী নানগাগবাকে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবের উত্তরসূরী ধরা হচ্ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্টের ৫২ বছর বয়সী স্ত্রী গ্রেসও শাসক হওয়ার স্বপ্নে মুগাবেকে বিভ্রান্ত করলে এর জের টানতে হয় তাকে। সেনাবাহিনী কোনো অভ্যুত্থান হয়নি দাবি করলেও এখন নানগাগবাই জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি এই ক্ষমতা বদলে যে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সহযোগিতা করেছেন, তাকেও দেওয়া হয়েছে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ। মুগাবের দুর্দিনে তাকে সহযোগিতা করা অর্থমন্ত্রী ও অন্যরা জেলে ঢুকলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট পেয়ে গেছেন সব ‘অপকর্মের দায়মুক্তি’। জেরুজালেম শহর মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি- তিন ধর্মেরই তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিতজেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা ট্রাম্পের

বছরের শেষে এসে ফের সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘটালেন এক অবাক করা কাণ্ড। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অনুসৃত নীতি থেকে সরে এসে ট্রাম্প আকস্মিক জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এই ঘোষণায় বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এমনকি পশ্চিমা অন্য দেশগুলোও ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত দেখায়। কারণ ১৯৯৩ সালের ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, জেরুজালেম নগরীর বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে হবে। যেহেতু ফিলিস্তিনও নিজেদের ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে দেখে আসছে, সেহেতু এই ঘোষণায় ওই অঞ্চলে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অবশ্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পাল্টা ইসলামী দেশগুলোর জোট ওআইসি পূর্ব জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে।

এছাড়া, মে মাসে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার সংগীত তারকা আরিয়ানা গ্রান্দের কনসার্টে ২২ জনের প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা, জুনে সৌদির ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আব্দুল আজিজকে সরিয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদকে আকস্মিকভাবে নিয়োগ, এরপর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ সালমানের নারীবাদী সংস্কার কার্যক্রম, যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন, জুলাইয়ে লন্ডনের ২৪ তলা একটি ভবনে ৮০ জনের প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড, সেপ্টেম্বরে জার্মানির সাধারণ নির্বাচন, নভেম্বরে ইরানে ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫৩০ জনের প্রাণহানি, আগের বছরের ধারাবাহিকতায় আমেরিকার ন্যাশনাল ফুটবল লিগে (এনএফএল) বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নতজানু হয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ, আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে ক্যারিবিয়ান সাগরের ঘূর্ণিঝড় হার্ভের আঘাত ও ৮০ জনের প্রাণহানি, অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ দাবানল ও ৪৪ জনের প্রাণহানি, একই মাসে ভার্জিনিয়ায় শার্লটসভিলেতে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের বিক্ষোভ ও সেখান থেকে বর্ণবাদবিরোধী শান্তিকামীদের মিছিলে হামলা, সোমালিয়ার মোগাদিসু শহরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ৫১২ জনের প্রাণহানি, ইরাক-সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আইএসের ক্রমাগত পতন, বছরজুড়ে ইয়েমেন-লেবানন-সিরিয়া প্রশ্নে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের উত্তেজনা এবং বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডোকলাম মালভূমি ঘিরে ভারত-চীনের উত্তেজনা সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।

নতুন বছরও হয়তো এমনই ঘটনাবহুল হবে। রাশিয়ায় জমবে বিশ্বকাপের জমজমাট আসর। তবে কোনো সন্ত্রাসী হামলা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন এই নতুন বছরের সূর্যকে দেখতে না হয়, সে কামনাই থাকবে সবার।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।