ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ভোটার টানতে ব্যর্থ হলেও ইভিএমের সফল ব্যবহার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
ভোটার টানতে ব্যর্থ হলেও ইভিএমের সফল ব্যবহার

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৯ সালে আর কোনো নির্বাচনে ভোটার খুব একটা টানতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটার উপস্থিতির হার ৫০ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ইলেকট্রনিংক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) সফল ব্যবহার করেছে ইসি। এছাড়া কমিশন-সচিবালয়ের দ্বন্দ্ব, দুর্নীতির মতো নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে পুরো বছরটিতেই আলোচনায় ছিল নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

ভোটার উপস্থিতি ৫০শতাংশের কম:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৮০ শতাংশ। এ নির্বাচনের তিন মাস পরেই দেশের উপজেলাগুলোতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করে সংস্থাটি।

২০১৯ সালের মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পাঁচ ধাপে এ ভোট সম্পন্ন হয়। কিন্তু কোনো ধাপেই ৫০ শতাংশ ভোটারকেও টানতে পারেনি ইসি।

১৮ জুন পঞ্চম ধাপে ২২টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হলে ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপে ১০৬টি উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপের ১২২টি উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৪১ শতাংশ। ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে ১২৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর প্রধম ধাপে ১০ মার্চ ৮২টি উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে, মাত্র ২১ শতাংশ। অথচ একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ভোটের হার ছিল ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ।

এদিকে, জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতা মাত্রা প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি চলে এলেও ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা খুব একটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি ইসি। দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণের সময় রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ফলাফল নিয়ে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে (গুলি) ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ সাতজন নিহত হন। আর আহত হন ১৫ জনের মতো। যদিও এ ঘটনাকে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের প্রভাব বিস্তার মন্তব্য করেই দায় সেরেছে ইসি। এছাড়া স্থানীয় নির্বাচনে ভোটের হার কম থাকে বলেও যুক্তি দেখিয়েছে।

ইভিএমের সফর ব্যবহার:
নতুন ইভিএম দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার হার দিনদিন বেড়েই চলেছে। কোনো প্রতিবন্ধকতা বা যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়াই ভোট সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। উপজেলা নির্বাচনে ২০টির মতো উপজেলার পুরোটাই এ যন্ত্রে ভোট নিয়েছে। এছাড়া রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদসহ শতাধিক নির্বাচন এ ভোটযন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। তবে ইভিএমের প্রতি ভোটারদের আগ্রহ সৃষ্টি করার দিক থেকে এখনও সফলতা আসেনি বলে মনে করছেন অনেকে।

এ বিষয়ে ইভিএম বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম বলেছেন, সফলতা আসায় আমরা দিনদিন ইভিএমের ব্যবহার বাড়াচ্ছি। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনী প্রশিক্ষণের নামে দুর্নীতি:
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রশিক্ষণের নামে ইসির তৎকালীন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রশ্ন ওঠে নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার বিপরীতে কমিশনারদের অর্থগ্রহণ নিয়েও। গণমাধ্যমে এ খবর প্রচার হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা মুখে পড়ে ইসি। তাই নির্বাচনী প্রশিক্ষণে অর্থবরাদ্দের বিষয় নিয়েও আইনে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে সংস্থাটিকে।

কমিশন-সচিব দ্বন্দ্ব:
বিভিন্ন সময় নির্বাচন কমিশন ও কমিশন সচিবালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলেও তা ২০১৯ সালের মতো এতটা প্রকট হয়নি। এবার দ্বন্দ্ব ইউও নোট (আন-অফিসিয়াল নোট) পর্যন্ত গড়িয়েছে। ইসি সচিব এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কমিশনকে (চার কমিশনার) পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে চার নির্বাচন কমিশনার একত্রে সিইসি’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার কামনা করেন। যদিও ইসি সচিব মো. আলমগীর কোনো আইন অমান্য করেননি বলে সংবাদ সম্মেলন করে ‘আইন দেখিয়ে’ দেন। পরবর্তীতে এ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হলে সিইসির মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিষয়টি দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনায় ফেলে ইসিকে।

রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকাভুক্তিকরণ:
মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরেই ইসির ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় এদের প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিয়েও পুরোপুরি সফল হতে পারেনি সংস্থাটি। ২০১৯ সালে এসে ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) শাখার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলামের পাতা বিশেষ ‘ফাঁদে’ সনাক্ত হয় একটি চক্র।

যারা নির্বাচন কমিশনের ল্যাপটপ চুরি করে নিয়ে নিজস্ব কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টা চালাতো বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে। ফলে রোহিঙ্গা অন্তর্ভূক্তির ফাঁকফোঁকরগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে নির্বাচন কমিশন।

এছাড়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের একটি ডাটাবেজ তৈরি করে সংস্থাটি। এরফলে যে কোনো লোক ভোটার হতে চাইলে তার আঙ্গুলের ছাপ প্রথমেই ম্যাচিং করা হয় ওই ডাটাবেজে। সেখানে না মিললেই কেবল ভোটার হওয়া যায়।

অন্যদিকে জেলা পর্যায়ে এনআইডি ছাপানো, সকল কার্যালয় নজরদারির ভেতরে নিয়ে আসা, দেশেই স্মার্টকার্ড ছাপানো, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংশ্লিষ্ট দেশেই ভোটার করে নিয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণসহ প্রথমবারের মতো ভোটার দিবস উদযাপনের মতো কার্যক্রমগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে সংস্থাটি। আবার দেশের সকল বয়সী নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ ও এনআইডির আওতায় আনা, এনআইডি সংশোধনে অধিকতর স্বচ্ছতা আনার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নাধীন রেখেছে নির্বাচন কমিশন।

বাংলাদেশ সময়: ১১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
ইইউডি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।