ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি-২০২১

হারানোর ব্যথা-দ্রোহে ঘটনাবহুল ছিল রাজশাহী 

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
হারানোর ব্যথা-দ্রোহে ঘটনাবহুল ছিল রাজশাহী 

রাজশাহী: বিদায় নিতে যাচ্ছে বহু ঘটনার সাক্ষী- ২০২১। ৩১ ডিসেম্বর কৃষ্ণরাত পেরুলেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে- এই পুরনো খ্রিস্ট বছর।

 পরদিন পূর্বাকাশে দেখা দেবে নতুন বছরের সূর্য। তবে, পৌষের কুয়াশামোড়া প্রকৃতির কারণে শিশির জমা দূর্বাঘাসে এবার সেই সূর্যালোকের ছোঁয়া নাও লাগতে পারে।  কিন্তু ভোরের আলো ফুটুক বা কুয়াশাচ্ছন্নই থাকুক; বহু ঘটনার জন্ম দিয়ে মহাকালের পরিক্রমায় এরই মধ্যে বিদায় নেবে আরও একটি বারোমাসি বছর।  

দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি উল্টে যাবে। নিশি অবসানে শুরু হবে নতুন বর্ষ ২০২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিন। আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা, প্রাপ্তি-প্রবঞ্চনার হিসাব-নিকাশ পেছনে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে সবাই।  

আগামীর নতুন স্বপ্নে পাখা মেলবে-সোনালি দিনের প্রত্যাশা। নানান কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গী পকেট ডায়েরিটাও সাবেক হবে। ঝরা পল্লবের মত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খসে পড়বে আরো একটি বছর। তবে করোনার কারণে বিগত বছরগুলোর মত রাজশাহীতে এবছরও বড় ধরনের তেমন কোনো অঘটনের খবর নেই। এরপরও বছরজুড়েই ঘটনাবহুল ছিল রাজশাহী।

কখনও হারানোর বেদনায় কাতর আবার কখনও প্রতিবাদের দ্রোহে আর দাবির পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠেন রজশাহীবাসী। তা নিয়েই পদ্মাপাড়ের মনুষগুলোর মনের গহ্বরে জমা পড়ে স্মৃতির পলি। যোগ হয়েছে নানান প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির সুখ-দুঃখ, হাসি-বেদনা আর বজ্রকণ্ঠের প্রতিবাদ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ভাইরাল হয়েছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  
   
রাজশাহীতে জীবন্ত পুড়ে মারা যান ১৭ জন: রাজশাহীতে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে আগুন লেগে যায়। এই আগুনে জীবন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যান মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ১৭ জন যাত্রী। বড় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ২৬ মার্চ দুপুরে। দুর্ঘটনায় নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।  

তারা ২৬ মার্চ দুপুরে রাজশাহীতে শহীদ জিয়া শিশুপার্কে পিকনিক করতে আসছিলেন। তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস মহানগরীর কাপাশিয়া এলাকায় পৌঁছালে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে গ্যাস সিলিন্ডার লিক হয়ে আগুন ধরে যায়। মাইক্রোবাসে চালকসহ মোট ১৮ জন ছিলেন।  

দুর্ঘটনার ৭ জনকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এদের মধ্যে ৬ জনকেই মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে মাইক্রোবাসের ভেতর থেকে পুড়ে যাওয়া আরও ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এজন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের চলে যাওয়ার বছর: ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন এই বছরের ৩১ মার্চ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস করেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এই দিন তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনের বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি দুই ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে রাজশাহীর ভাষা আন্দোলনের জীবন্ত ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।  

চলন্ত ট্রেনেই সন্তান জন্ম দেন মা: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থেকে একজন প্রসূতি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসছিলেন সন্তান প্রসব করার জন্য। কিন্তু ট্রেনেই প্রসব বেদনা ওঠে তার। এরপর চলন্ত ট্রেনের মধ্যেই জন্ম দেন নবজাতক সন্তানকে। খুলনা থেকে রাজশাহী অভিমুখে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর ট্রেন সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেসে ঘটনাটি ঘটে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে নয়টার দিকে। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যর কল্যাণে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং আলোচিত হয়। ওই প্রসূতির নাম সাবিনা ইয়াসমিন। এ ঘটনায় ট্রেনের মধ্যে সেইদিন যারা প্রসব কাজে সহযোগিতা করেছিলেন- তাদের পরে সংবর্ধিত করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুলের মৃত্যু: গত ১৫ নভেম্বর রাত সোয়া ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিদায় নেন এই জ্যোতির্ময়। তার প্রয়াণে ঝরে পড়ে দেশের আরও একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এই বরেণ্য ব্যক্তির মৃত্যুর পর দেশের শিক্ষা ও সাহিত্য অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের মানুষ শোক ও শ্রদ্ধা জানান তার বিদেহি আত্মার প্রতি।

বিতর্কিত মন্তব্য ফাঁসের পর ফেঁসে যান পৌরমেয়র আব্বাস: রাজশাহী শহরের প্রবেশ মুখে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কোনো এক ঘরোয়া বৈঠকে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন- রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী।  

গত ২৩ নভেম্বর সেই অডিও ফাঁস হয়। এরপরই ফেঁসে যান আব্বাস আলী। তার বিরুদ্ধে মাঠে নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পাশাপাশি ১২ কাউন্সিলর তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেন। পরে গত ৮ ডিসেম্বর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ১ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২ ডিসেম্বর আনা হয় রাজশাহীতে। তিনদিনের রিমান্ড শেষে গত ৯ ডিসেম্বর বরখাস্তকৃত মেয়র আব্বাসকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। আব্বাসের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল আইনের মালায় বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। গাজীপুরের মেয়রের পর দেশের সমালোচিত ব্যক্তি এখন আব্বাস।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ‘জান্নাত চেয়ে দোয়ার পর আওয়ামীলীগ নেতা বহিষ্কার: রাজশাহীর বাগমারায় বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে করা মোনাজাতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জান্নাত চেয়ে সারা দেশে সমারোচিত হন আওয়ামীলীগ নেতা খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মোনাজাতকারী তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার মো. আব্দুর রাজ্জাককে বহিষ্কার করা হয় গত ১৭ ডিসেম্বর। একই সঙ্গে তাকে দলের সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তাহেরপুর শহীদ মিনার চত্বরে ১৬ ডিসেম্বর রাতে ওই মোনাজাত করা হয়।

ভাইরাল হওয়া ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওতে মোনাজাতে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘মাবুদ জাতির জনক এবং তার পরিবারকে যারা হত্যা করেছেন, আল্লাহ তাদের সবাইকে জান্নাত দান করে দিও আল্লাহ’।

এ সময় বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ উপস্থিত সবাইকে আমিন বলতে শোনা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।