ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, ০২ মে ২০২৫, ০৪ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

সরকারি গাছ কেটে বিক্রি, চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের নামে মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০১, মে ১, ২০২৫
সরকারি গাছ কেটে বিক্রি, চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের নামে মামলা অনুমতি ছাড়া ১০৯টি গাছ কাটার অভিযোগ

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদে সরকারি খাস জমি থেকে অনুমতি ছাড়া ১০৯টি গাছ কাটার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান ও একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (১ মে) শাহাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলা নম্বর ২৫/২০২৫।

মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান, এনজিও সংস্থা ‘প্রশিকা’র নড়াইল এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন, স্থানীয় সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি ও সদস্যরা।

এর আগে ২৯ এপ্রিল অভিযান চালিয়ে কাটা গাছের কিছু অংশ জব্দ করেন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী। তিনি জানান, কাটাগাছের বাজারমূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা এবং বিষয়টি তদন্তে পরিষ্কার হয়েছে যে এটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ঘটেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে এনজিও সংস্থা প্রশিকার উদ্যোগে শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের দুই পাশে মেহগনি ও আমগাছের চারা রোপণ করা হয়। তখন সড়কটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত মনে করে গাছের মালিকানা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, প্রশিকা ও স্থানীয় সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০ বছর পর অর্থাৎ ২০২৯ সালে গাছগুলো বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকায় বিদ্যুতের সাবস্টেশন সংযোগ লাইনের কাজে গাছগুলো বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন চুক্তির তিন পক্ষ—প্রশিকা, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রভাতী যুব সংঘ—গাছ কাটার অনুমতির জন্য সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেন। তবে ইউএনও কার্যালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসার পরও গাছগুলো কেটে বিক্রি করে দেন প্রভাতী যুবসংঘের সদস্যরা।

প্রশিকার নড়াইল অঞ্চলের ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘গাছ কাটার জন্য আমি ইউএনও বরাবর আবেদন করেছিলাম। প্রশাসন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিষয়টি ঝুলে ছিল। এরপর ইউপি সদস্য ইব্রাহিম আমাকে মোবাইলফোনে কল করে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তন করা ডালপালা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। তখন আমি তাদের বিক্রি করে দিতে বলি। তবে কবে, কীভাবে বা কারা গাছ কেটেছেন—তা আমার জানা নেই। ’

স্থানীয়রা জানান, পুরো ঘটনাটি মূলত নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রভাতী যুব সংঘের সদস্যরা। বিশেষ করে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম শেখ এই গাছ কাটার ঘটনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। গাছ কাটার সময় প্রশিকার কোনো প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ইব্রাহিম শেখ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি গাছ কাটিনি বরং আমি এ ঘটনার একজন সাক্ষী। ’

অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘প্রশিকার সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী গাছ কাটার অনুমতির জন্য ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদনে আমি শুধু সুপারিশ করেছিলাম। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘ। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু না। ’

এসব বিষয়ে নড়াইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, সড়কটি ২০১৫ সালে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। ফলে রাস্তার দুই পাশে রোপণকৃত গাছগুলো সরকারি সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। কোনো অনুমতি ছাড়াই গাছ কেটে তা বিক্রি করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। কাটা গাছের বাজারমূল্য আনুমানিক ৫ লাখ টাকা। প্রাথমিক তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যান, প্রশিকা এবং প্রভাতী যুবসংঘের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলার পর আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।