ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২, ০৬ মে ২০২৫, ০৮ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

লালমাই পাহাড়ে পুরাকীর্তির সন্ধান, চলছে খনন

তৈয়বুর রহমান সোহেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫০, মে ৬, ২০২৫
লালমাই পাহাড়ে পুরাকীর্তির সন্ধান, চলছে খনন পুরাকীর্তির খোঁজে লালমাই পাহাড়ে খনন চলছে

কুমিল্লা: ১৩০০ বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান কুমিল্লার শালবন বিহার। শালবন বিহারের মতো আরেকটি প্রত্ন স্থাপনা জেগে উঠছে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে।

 

শালবন বিহার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে লালমাই পাহাড়ের সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুরে অবস্থিত বালাগাজীর মুড়া। সেখানে এ পুরাকীর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে।  

অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এ পর্যন্ত এক চতুর্থাংশ খনন কাজ হয়েছে। এ স্থানটি খনন করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা গেলে প্রত্ন পর্যটনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

সোমবার (৫ মে) বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সদর দক্ষিণ উপজেলার রতনপুর বাজার থেকে একটু দক্ষিণে হাতের বাম পাশে বড় ধর্মপুর। হাঁটা পথে একটু গেলেই মিলবে চারা বাড়ি। সেখানে প্রত্ন স্থাপনার খোঁজে কাজ করছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বড় বড় ইট দিয়ে তৈরি প্রায় ছয় ফুট চওড়া প্রাচীন একটি দেয়ালের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে, এটা স্থাপনার কোণ। খননকালে মাটিরপাত্রের টুকরো মিলেছে। তিন-চার ফুট পুরু একাধিক মাটির স্তর সরানোর পরে সন্ধান মেলে এ ধ্বংসাবশেষের।  

বালাগাজীর মুড়া নামে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে উন্মোচিত প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, ভোজ বিহার, ইটাখোলা ও রূপবান মুড়ার সমসাময়িক হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান টিম।
 
স্থানীয় মাসুদ রানা, মনির হোসেন, মো. শাহজাহান ও আকলিমা বেগম বলেন, বালাগাজীর মুড়া স্থানীয়দের কাছে চারা বাড়ি নামে সুপরিচিত। মূলত এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির উপরে প্রচুর চারা তথা মাটির পাত্রের ভাঙা টুকরো থাকায় স্থানীয়ভাবে এ নামকরণ করা হয়। এটির খনন শুরুর পর তা দেখতে মানুষ ভিড় করছেন। এটি খননের পর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করলে এলাকার সুনাম বাড়বে, সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ খনন ও গবেষণা কাজ শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে বালাগাজীর মুড়াকে সংরক্ষিত স্থান ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৪৫ সালের শিমলা গেজেটে প্রকাশ করা হয়। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলমের নির্দেশনায় এ বছর বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।  

খনন ও অনুসন্ধান কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফিল্ড অফিসার) মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল জানান, চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম দিক থেকে বালাগাজীর মুড়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করা হয়েছে, যা আগামী জুন মাস পর্যন্ত চলবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক দপ্তর, কুমিল্লার একটি প্রত্নতাত্ত্বিক টিম কুমিল্লা জেলার এ স্থানে খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছে। সাত সদস্যের খনন টিমে আরও আছেন ফিল্ড অফিসার মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল, ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম, গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক, সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা, ফটোগ্রাফার শঙ্খনীল দাশ এবং পটারি রেকর্ডার রিপন মিয়া।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।