ঢাকা, সোমবার, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৯ জুন ২০২৫, ১২ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

মৌলভীবাজারে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি না হওয়ার অভিযোগ

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৩, জুন ৮, ২০২৫
মৌলভীবাজারে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি না হওয়ার অভিযোগ স্তূপ করে রাখা চামড়া। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে কোরবানির পশুর চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে কেনাবেচা হচ্ছে না। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত দাম থাকলেও তা মানছেন না আড়তদাররা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মাত্র গুটিকয়েক আড়তদার সিন্ডিকেট গড়ে মৌলভীবাজারের চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে চামড়ার প্রকৃত মূল্য না পেয়ে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তদারকির অভাবে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ তাদের। সরকার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করলেও আড়তদাররা সেটি মানছেন না।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মৌসুমি ব্যবসায়ী ট্রাক, রিকশা ও অটোভ্যানে করে চামড়া নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আড়তদাররা ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় প্রতিটি গরুর চামড়া কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। গরুর চামড়া ৫০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছাগলের চামড়া কেউ বিক্রিই করতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠেছে।

মৌলভীবাজার শহরের জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা লিল্লা বোর্ডিংয়ের প্রিন্সিপাল মুফতি হাবিবুর রহমান বলেন, গত বছর আমাদের মাদরাসায় ৭০০ চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু ন্যায্য দাম পাইনি। এবারও কয়েকশ’ চামড়া সংগ্রহ করেছি, কিন্তু ন্যায্য দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। চামড়া ব্যবসায়ীরা এবারও সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ পর্যন্ত প্রতি পিস বড় গরুর চামড়ার দর তারা আমাদের জানিয়েছেন।

শ্রীমঙ্গল শহরতলীর রামনগর ছওতুল হেরা মাদরাসা থেকে শতাধিক চামড়া নিয়ে আসা মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাদরাসার এতিম-গরিব ফান্ডের জন্য ৮০টি চামড়া নিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছি। কেউ গুরুত্বই দিচ্ছে না। দুয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলেও গড়ে গরুর চামড়ার দাম বলছেন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। আর ছাগলের চামড়া কেউ কিনবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন।  

কমলগঞ্জের শমসেরনগর এলাকার আব্দুস শহিদ বলেন, শমসেরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা দরে গরুর চামড়া বিক্রির খবর শোনা গেছে। তিনি নিজেও তার কোরবানির পশুর চামড়া ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছিলেন।

শ্রীমঙ্গল শহরের চামড়া ব্যবসায়ী লায়েক মিয়া বলেন, তিন প্রায় সাত শতাধিক গরুর চামড়া কিনেছেন ৫০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। সবগুলো চামড়াতে শ্রমিক দিয়ে লবণ যুক্ত করতে হবে। এতে পরিবহন খরচ ও শ্রমিকের পারিশ্রমিকের কারণে চামড়ার ক্রয়মূল্য বেড়ে যাবে।

চামড়া ব্যবসায়ী খলিল মিয়া ও রফিকু মিয়া জানান, তারা স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ’ চামড়া কিনেছেন। প্রতি পিস চামড়া ৮০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। তারা বলেন, চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিটি চামড়ায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ পড়ে। তাই সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যে দর নির্ধারণ করেছে এর অর্ধেক দামেও যদি সরকার কিনে আমি বিক্রি করবো।

জেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা যে দামে চামড়া কিনেছি এই দামে আড়তদারা কিনছেন না, আমরাও লোকসানের শিকার। চামড়া বাজারের এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

বিবিবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।