ঢাকা, সোমবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ জুন ২০২৫, ১৯ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

‘নিজেকে গুটিয়ে রাখা’ জুলাইযোদ্ধা ইমরান মারা গেছেন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:০৩, জুন ১৪, ২০২৫
‘নিজেকে গুটিয়ে রাখা’ জুলাইযোদ্ধা ইমরান মারা গেছেন জুলাইযোদ্ধা ইমরান

চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে আহত গার্মেন্টসকর্মী ইমরান হোসাইন (৩০)। আওয়ামী লীগ ফিরবে ভয়ে ইমরান নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন।

যে কারণে জুলাইযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়নি তার নাম। অবশেষে পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে তার মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে গাজীপুর জেলার নিজ বাসায় ইমরান হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ময়মনসিংহের মুশুল্লী ইউনিয়নের নান্দাইল উপজেলার চপই মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. ইসলাম উদ্দিনের ছেলে। পেশায় তিনি একজন গার্মেন্টসকর্মী ছিলেন।  

শনিবার (১৪ জুন) দুপুর আড়াইটায় নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।  

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক আশিকিন আলম রাজন খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ২৮ জুলাই গাজীপুর জেলার আব্দুল্লাহপুর তারগাছ এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন ইমরান হোসাইন। তখন তার বুকে, শরীরে এবং চোখে গুলির স্প্লিন্টারে জখম হন। তখন থেকে ঘটনাটি তিনি কাউকে না জানিয়ে নীরবে সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করেন। ফলে পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে অবশেষে মারা যান ইমরান।

আশিকিন আলম রাজন আরও জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই ইমরানের ভেতরে আওয়ামী লীগ ফিরে আসার ভয় ছিল। এ কারণে তিনি ঘটনাটি কাউকে জানাননি। এমনকি একজন আহত জুলাইযোদ্ধা হিসেবেও নিজের নাম তালিকাভুক্তির আবেদন করেননি। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সঙ্কটে তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে ইমরান হোসেন স্ত্রী ও এক সন্তান রেখে গেছেন।

ইমরানের স্ত্রী রিতা আক্তার জানান, আমার স্বামী ইমরান অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। সারা দেশ যখন আন্দোলনে সরগরম তখন তিনিও রাজপথে যান। ওই সময় মিছিলে অংশগ্রহণ করে গুলিবিদ্ধ হয়েও নিজেকে তিনি জাহির করেননি। তবে মাঝেমধ্যে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে যেতেন। কিন্তু টাকার অভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করানো যায়নি। তার সঙ্গে যারা আহত ও নিহত হয়েছিল তারা সবাই তালিকাভুক্ত ছাড়াও সরকারের সব ধরনের অর্থ বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু আমার স্বামীর কেউ খবর নেয়নি। এটা ছিল আমার স্বামীর আক্ষেপ ও কষ্ট।

ইমরানের ভগ্নিপতি খোকন মিয়া বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে আন্দোলনের সময় হাসপাতালে গেলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে বের করে দেওয়া হয়। পরে চিকিৎসা করানো হয় নিজেদের খরচে। কিন্তু অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানো যায়নি।

নিহত ইমরানের ভাই মো. ইব্রাহিম জানান, আমার ভাইকে জয়দেবপুর হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা করানোর পর সেখান থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে নানা জায়গায় চিকিৎসা করানো হচ্ছিল।  

নান্দাইল উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ইমরান হোসেন আহত জুলাইযোদ্ধার তালিকাভুক্ত না। তবে তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি তাদের বাড়ি গিয়েছিলাম। পরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনা সর্ম্পকে অবগত হয়েছি। শুনেছি- ভয়ে তিনি তালিকাভুক্ত হননি এবং মামলা করেননি। গুলিবিদ্ধ হয়েও তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন গোপনে। সম্প্রতি ঈদে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। এরপর গত কয়েকদিন আগে গাজীপুর ফিরে গিয়ে তিনি হঠাৎ মারা যান।    

এবিষয়ে নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জুলাইযোদ্ধা হিসাবে ইমরান হোসেনের নাম তালিকায় নেই। খোঁজ নিয়ে ঘটনা সর্ম্পকে বিস্তারিত বলা যাবে।  

এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।