পাখি প্রকৃতির এক প্রকার বিস্ময়। শুধু ভালোলাগা নয়, পাখিরা আমাদের প্রকৃতির রক্ষক।
প্রতিটি গাছের পাতা ছুঁয়ে ডাল-পালা ছুঁয়ে তাদের যে উপস্থিতি তা প্রকৃতির সুরক্ষার বার্তা। কিছু কিছু প্রজাতির পাখিরা নানা প্রকারের ক্ষতিকর পোকামড়ক, কীটপতঙ্গ খেয়ে পরিবেশের উপকার করে চলেছে।
এই পোকা বা কীটপতঙ্গগুলো যদি পাখিরা না খেত তাহলে সেগুলো আমাদের কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন বা ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করত। একটি বিশেষ প্রজাতির পোকাখেকো পাখির নাম ‘সবুজ-সুইচোরা’।
ওর ইংরেজি নাম ‘এশিয়ান গ্রিন-বি ইটার’(Asian Green Bee-eater)। এই ইংরেজি নামের দিকে নজর দিলে তার বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় মৌমাছিখেকো পাখি। পাখি বিজ্ঞানীরা অবশ্য হুবুহু ইংরেজি শব্দের বঙ্গানুবাদ না করে এই পাখির অপূর্ব সুন্দর একটি বাংলা নাম দিয়েছেন : সবুজ-সুইচোরা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Merops orientalis।
সবুজ দেহের মায়াবী সৌন্দর্য নিয়ে এই পাখিটি চা বাগানে ওড়াউড়ি করে বিরামহীন। সে দৃশ্যগুলো এক প্রকারের বিস্ময়কর ভালো লাগায় ভরানো। বলা বাহুল্য, যে ডালে সে বসে থাকে – উড়ন্ত পতঙ্গ মুহূর্তে ঠোঁট দিয়ে ধরে সে ডালেই আবার ফিরে আসে। যাওয়া-আসার এই পর্ব চলতেই থাকে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যে নামার আগ পর্যন্ত।
পাখি ও বন্যপ্রাণীদের আলোকচিত্র ধারনের সময় গভীরভাবে লক্ষ্য করা গেছে, প্রকৃতিতে উড়ন্ত পতঙ্গ ধরে খেতে সবুজ-সুইচোরারা ভীষণভাবে দক্ষ। কোনো পোকামাকড় তার দৃষ্টিসীমায় পড়া মাত্রই সে তার বিশ্বস্থ ডানা আর ঠোঁটের অগ্রভাবে সেই পোকাটি মুহূর্তেই তার খাবারে পরিণত করে।
শুধু তা-ই নয়, ফড়িং জাতীয় পতঙ্গকে উড়ন্ত অবস্থা থেকে ধরে এনে সে গিলে ফেলার চেষ্টা চালায়। যদি দ্রুত গিলে ফেলা সম্ভব না হয়- তখন যে ডালে পাখিটি বসা সেই ডালে পতঙ্গটিকে ঠোঁটের সাহায্যে জোরে জোরে আছাড় মারতে থাকে। এভাবে বিরামহীন আঘাতে একসময় পতঙ্গটি মরে গেলে তারপর সে গিলে খায়।
১৬ থেকে ১৮ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের চিরসবুজ দৈহিক রূপলাবণ্য নিয়ে সে চা বাগানের প্রতিটি উপত্যাকায় পরমানন্দে উড়ে বেড়ায়। ওর মাথার উপরিভাগ, ঘাড় ও কাঁধ-ঢাকনি এই তিনটি অংশ শুধু সোনালি রঙের। বাকি শরীর সবুজ আর সবুজ। তবে ওর মুখমণ্ডলে বিশেষ একটি বৈশিষ্ট রয়েছে। আর তা হলো- ওর চোখের সোজাসুজি অংশে কালো রঙের মোটা লাইন টানা রয়েছে।
ওদের ‘ট্রি-ট্রি-ট্রি’ ‘ট্রি-ট্রি-ট্রি’ ধ্বনির ডাক চা বাগানের প্রাকৃতিক সুগভীর সৌন্দর্যের মাঝে নতুন মাত্রা যোগ করে প্রতি মুহূর্তে।
বিবিবি/আরএ