কুষ্টিয়া: ‘আপনারা গাছে পেঁপে দেখছেন, কিন্তু আমি দেখছি টাকা। আমার মনে হচ্ছে গাছে টাকা ঝুঁলছে।
প্রথম চাষেই তিনি পেঁপে থেকে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন। জামিরুল ইসলামের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়ায়।
মাত্র ৩৫ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন এবং দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি পেঁপে বিক্রি শুরু করেছেন। জমি থেকেই কাঁচা পেঁপে পাইকারি ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে বেশ খুশি জামিরুল।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বলিদাপাড়ায় তার বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত পেঁপে ধরেছে। ছোট-বড়-মাঝারি সাইজের পেঁপের পাশাপাশি গাছে বেশ ফুলও রয়েছে। এক একটি গাছে এ মৌসুমে প্রায় এক মণ করে পেঁপে সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করেন জামিরুল ইসলাম।
ছোটবেলা থেকেই কৃষির সাথে জড়িত রয়েছেন জামিরুল ইসলাম। ধান চাষের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করেন তিনি। তামাকে পরিশ্রম এবং বিক্রির ক্ষেত্রে হয়রানির কারণে চায়ের দোকান খুলেছেন।
বলেন, কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে নিরাপদ উপায়ে উচ্চমূল্যের সবজি চাষের ওপরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের সহায়তায় পেঁপের চাষ করেছেন। তামাকের পরিবর্তে পেঁপে চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি এই জমিতে তামাক চাষ করতাম। কিন্তু উপজেলা থেকে ট্রেনিং নিয়ে এবার প্রথম পেঁপের চাষ শুরু করেছি। কীভাবে পেঁপের চাষ করতে হবে, কখন পরিচর্যা করতে হবে-সবকিছু হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছে কৃষি অফিসের লোকজন। ’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেই ওয়ানটাইম চায়ের কাপে পেঁপের চারা উৎপাদন করে রোপণ করেছি। জমি চাষাবাদ ও পরিচর্যা করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ২০ শতক জমির জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচ দিয়েছে। বাকীটুকু নিজে খরচ করেছি। ’
জামিরুরেল জমিতে ৪০০ পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতি গাছে গড়ে এক মণ করে পেঁপে পাওয়া যাবে। এটা বিক্রির জন্য বাজারেও নিতে হচ্ছে না। ব্যাপারিরা এসে বাগান থেকেই পেঁপে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশা করছেন এই মৌসুমেই দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন। ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ করে তিনি এই আবাদ করেছিলেন।
স্থানীয় কৃষক আয়নাল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, এক একটি গাছে যে এত পেঁপে ধরে তা কখনো জানতেন না। জামিরুলের বাগান দেখে বুঝছেন। এও জেনেছেন পেঁপে চাষ তামাকের চেয়ে অনেক বেশি অনেক লাভজনক।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা কৃষকদের সর্বক্ষণিক উচ্চমূল্য সবজি ও ফল চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষক জামিরুল ইসলামকেও পেঁপে চাষে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত তার বাগান পরিদর্শন করে ব্যবস্থাপনা প্রদান করা হচ্ছে। পেঁপে চাষটা বেশ লাভজনক হওয়ায় ইতিমধ্যে আরো ১০ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ বৃদ্ধি পেঁয়েছে এই এলাকায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, ‘পেঁপে একটি পুষ্টিকর এবং উচ্চমূল্য সবজি। এটি বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বর্তমানে পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় পেঁপে চাষে কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছি। ’
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ‘খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এজন্য কৃষকদের নিরাপদ উপায়ে উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপকরণ ও সহায়তা প্রদান করছি। সেই সাথে বাজারজাত এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি। ’
তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কৃষক জামিরুল ইসলাকে আমাদের প্রকল্প থেকে নিরাপদ উপায়ে পেঁপে চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই সাথে তাকে চাষাবাদের জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচ দেওয়া হয়। যার ফলে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে পেঁপে চাষ করে বেশ সফল হয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার আরো কৃষকরা পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে’।
এসএইচ
