ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

বেনাপোলে ছাত্রশিবির নেতা রেজওয়ান গুম, নয় বছর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩০, অক্টোবর ১৫, ২০২৫
বেনাপোলে ছাত্রশিবির নেতা রেজওয়ান গুম, নয় বছর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত শুরু বেনাপোলে ছাত্রশিবির নেতা রেজওয়ান গুমের ঘটনায় বেনাপোলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্যদের কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা

যশোর: সীমান্তবর্তী বেনাপোলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন নেতা রেজওয়ান হোসাইন নিখোঁজের নয় বছর পর ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী দল।  

২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর থেকে রেজওয়ানের কোনো খোঁজ মিলছে না।

পরিবার ও স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন, গুমের পেছনে বেনাপোল থানার তৎকালীন ওসি অপূর্ব হাসান ও সেকেন্ড অফিসার নূর আলমের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঢাকার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-সহকারী পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত দল বুধবার (১৫ অক্টোবর) বেনাপোল পৌর ভূমি অফিসে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করেন।  

তদন্ত দলের সদস্যরা নিখোঁজ রেজওয়ানের পরিবারের সদস্য, সহপাঠী ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।  

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তারা ঘটনাসংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের বক্তব্য নিচ্ছেন। তদন্তের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রেজওয়ানের ভাই বায়জিদ হোসেন বলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাতে বেনাপোল ভূমি অফিসের সামনে থেকে পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন লোক রেজওয়ানকে ধরে নিয়ে যান। তারা বলেন, কিছু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হবে। এরপর থেকে রেজওয়ানের কোনো খোঁজ নেই। থানায় গেলে ওসি অপূর্ব হাসান ও সেকেন্ড অফিসার নূর আলম দুজনই বলেন, ‘আমরা কাউকে আটক করিনি’।

গুম হওয়া রেজওয়ান হোসাইনের পিতা মিজানুর রহমান, ভাই বায়জিদ হোসেন ও রিপন হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম, আনোয়ারুল ইসলাম, গোলাম মোর্তজা ও শফি হোসেন বুধবার তদন্ত দলের কাছে সাক্ষ্য দেন।  

বেনাপোল থানায় কর্মরতরা বলেছে, ঘটনাটি বহু পুরোনো। থানায় বর্তমানে দায়িত্বরত কোনো সদস্য তখন দায়িত্বে ছিলেন না। তবে যেহেতু বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তাধীন, আমরাও সহযোগিতা করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেনাপোল পৌরসভার সাবেক একজন কাউন্সিলর বলেন, রেজওয়ানের বিষয়টি আমরা কখনো ভুলিনি। সেদিন রাতে অনেকেই দেখেছে, পুলিশি পোশাকে কয়েকজন লোক তাকে ভূমি অফিসের সামনে থেকে ধরে নিয়ে যান। এখন তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসুক, এই আমাদের দাবি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন কথা বলতে রাজি হননি। তবে, তদন্ত দলের অন্যান্য সদস্যরা জানিয়েছেন, সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তারা ঘটনাস্থল, রেজওয়ানের বাড়ি ও তৎকালীন বেনাপোল থানার আশপাশের স্থানগুলো পরিদর্শন করবেন। এরপর রিপোর্ট তৈরি করে কমিশনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হবে।

সাক্ষ্য গ্রহণকালে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী বেনাপোল থানা শাখার আমির রেজাউল ইসলাম, সেক্রেটারি মাওলানা ইউসুফ, বেনাপোল পৌর সভাপতি রিয়াছাত আলী, পৌর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম, বেনাপোল থানা ছাত্রশিবির সভাপতি মাহাদি হাসান ও পৌর ছাত্রশিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ছয়জন নেতার গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ দাখিল করে পরিবারগুলো। গুমের শিকার ছয় নেতার মধ্যে রেজওয়ান হোসাইন অন্যতম।  

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে রেজওয়ান হোসাইনকে তুলে নেওয়ার পর তার পরিবার বহুবার থানা, জেলা প্রশাসন ও উচ্চ আদালতে নিখোঁজের অভিযোগ করলেও কোন সুফল পাননি।  

দীর্ঘ অপেক্ষার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্ত দল এ ঘটনায় মাঠে নামায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে বেনাপোলের এই গুম রহস্য।  

এসএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।