ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একাত্তর

রাজবাড়ী হানাদার মুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
রাজবাড়ী হানাদার মুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর

রাজবাড়ী: আজ ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের এ দিনটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর অবাঙালি বিহারিদের কবল থেকে মুক্তি পায় রাজবাড়ী জেলা।

রাজবাড়ীতে বিহারিরা ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর থেকে অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে উঠেছিল।

পুরো শহর দখল করে রেখেছিল তারা। ৯ ডিসেম্বর শহরের লক্ষ্মীকোল এলাকায় বিহারিদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বিহারিদের গুলিতে সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক, শফিক ও সাদিক শহীদ হন।

বিহারিরা ১৩ ডিসেম্বর শহরের বিনোদপুর বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রহরীকে হত্যা করে। ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও রাজবাড়ী শহর তখনও অবাঙালি বিহারিদের দখলে।  

পরে জেলার সব অঞ্চল থেকে মুক্তিবাহিনী রাজবাড়ীতে যুদ্ধের উদ্দেশে সংগঠিত হতে থাকে। শহিদুন্নবী আলম, ইলিয়াস মিয়া, সিরাজ আহম্মেদ, আবুল হাসেম বাকাউল, কামরুল হাসান লালী, রফিকুল ইসলামের কমান্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধারা চারিদিক থেকে ঘিরে রাখেন। তাদের সঙ্গে জেলার পাংশা থেকে জিল্লুল হাকিম, আব্দুল মতিন, নাসিরুল হক সাবু, আব্দুল মালেক, সাচ্চু ও আব্দুর রব মুক্তিবাহিনী নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। সেই সঙ্গে রাজবাড়ীর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও বীর মুক্তিযোদ্ধারা এসে যুদ্ধে যোগ দেন।

বিহারিরা শহরের রেললাইনের উত্তর পাশে অবস্থান নেয়। তারা রেলওয়ে লোকোসেড থেকে ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি পর্যন্ত রেলের মালগাড়ি দিয়ে বাধা তৈরি করে।

মুক্তিবাহিনী শহরের দক্ষিণ দিক থেকে গুলি চালাতে থাকে। তবে মালগাড়ি থাকায় তারা বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেননি। সে সময় গোলাম মোস্তফা ও আনিসুর রহমান আবি মাগুরার শ্রীপুর থেকে মর্টার শেল আনেন। ওই মর্টার শেল ছুড়লে বিহারিরা পিছু হটে যায়। পরাজয় অনিবার্য বুঝে তারা আত্মসমর্পণের উদ্দেশে ফরিদপুরের দিকে যেতে থাকে। তবে তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সে সময় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে প্রায় শতাধিক বিহারি নিহত হয়।
ওই যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা দিয়ানত আলী শহীদ হন এবং ইলিয়াস হোসেন গুরুতর আহত হন। ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় রাজবাড়ী জেলা।
সাবেক রাজবাড়ী জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন বলেন, রাজবাড়ীতে যুদ্ধ হয় ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে এবং রাজবাড়ী শহর ছিল অবাঙালি বিহারি অধ্যুষিত অঞ্চল। ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজবাড়ী শহর ঘিরে ফেললে বিহারিদের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়। এখানে প্রায় ১০ হাজার অস্ত্রধারী স্বাধীনতাবিরোধী থাকায় দীর্ঘ সময় যুদ্ধ করেও বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিহারিদের সঙ্গে পেরে ওঠেননি, কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ঘিরে রেখেছিলেন। পরে যশোর, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর থেকেও বীর মুক্তিযোদ্ধারা এসে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করলে ১৮ ডিসেম্বর রাজবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।