ঢাকা: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ২০২২ সালে টালমাটাল ছিল দেশের পুঁজিবাজার। ২০২৩ সালের জানুয়ারির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে সূচকের পতন ও লেনদেন কিছুটা নেতিবাচক থাকলেও পরবর্তী দুই সপ্তাহে ঘুরে দাঁড়ায় দেশের পুঁজিবাজার।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে বা ২৩ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। জানুয়ারি মাসে ডিএসইর সব সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও ছিল ইতিবাচক।
জানুয়ারি মাসে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে তিন হাজার ২৯৩ কোটি পাঁচ লাখ ৫১ হাজার টাকা। একই সময়ে দেশের অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক ও লেনদেনে গতি ফিরেছে। পুঁজিবাজারে সূচকের সঙ্গে লেনদেনে চাঙ্গাভাব থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যার কারণে পুঁজিবাজারে কিছুটা নেতিবাচক ধারা দেখা দেয়। তবে বর্তমানে সব কিছু স্বাভাবিক হতে থাকায় পুঁজিবাজারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও বিএসইসির সুদৃষ্টি বাজারকে আগের অবস্থানে নিয়ে যাবে বলেও তারা মনে করেন।
আইএমএফ’র ঋণের কিস্তি পাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক একটি খবর। দেশের অর্থনীতি ঠিক থাকলে পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ২০২২ সালের পুরো সময়টা বিনিয়োগকারীদের জন্য দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কেটেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করছে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যার কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু ২০২৩ সাল পুঁজিবাজারের জন্য সুদিন বয়ে আনবে।
তিনি আরও বলেন, গত মাসে বাজারে লেনদেনের গতি বেড়েছে। নতুন বছরে আমরা একটি স্থিতিশীল, আস্থাশীল, বিনিয়োগ বান্ধব পুঁজিবাজার দেখতে পাবো। ডলার সংকট, বিশ্ব বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বড় বড় সমস্যাগুলো কাটতে শুরু করেছে। ফলে পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি আস্তে আস্তে ফিরে পাবেন।
অন্যদিকে বছরের শুরুতে সূচকের টানা পতন দেখা দিলেও বাজার সংশ্লিষ্টরা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর। তাদের মতে, বৈশ্বিক যে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল সেটি ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এটি অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারকে আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও বিএসইসি একসঙ্গে কাজ করছে। কাউকে বাদ রেখে এগিয়ে গেলে হয় না। সবাইকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। সবার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি আজ এতটা শক্তিশালী হতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার সুশাসনের ক্ষেত্রে সব সময় সহায়ক অবস্থানে আছে। প্রধানমন্ত্রী খুব ভালোভাবে দেশ চালাচ্ছেন। সবকিছু দক্ষভাবে ব্যবস্থাপনা করছেন। সবকিছু ভালো রেখে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
এ সময় বিএসইসি চেয়ারম্যান কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং দেশের উন্নয়নে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারকে আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও বিএসইসি একসঙ্গে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৬০ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। ২৩ কার্যদিবস পর ৩১ জানুয়ারি লেনদেন শেষে ডিএসই বাজার মূলধন দাঁড়ায় সাত লাখ ৬৫ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ জানুয়ারি জুড়ে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা।
শুধু বাজার মূলধন নয় জানুয়ারি মাসে ডিএসইর সব সূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৫০ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সিএসইর সার্বিক সূচক ১২৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ডিএসইতে লেনদেন হয় সাত হাজার ২৩১ কোটি ৪০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। লেনদেনের গতি বাড়ায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১০ হাজার ৫২৪ কোটি ৪৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ মাস ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে তিন হাজার ২৯৩ কোটি পাঁচ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৮৫ পয়েন্ট বেড়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি লেনদেন শুরুর আগে সিএসইর সার্বিক সূচক ১৮ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। মাসজুড়ে সূচক ইতিবাচক থাকায় ৩১ জানুয়ারি সিএএসপিআই ১৮ হাজার ৫১৩ পয়েন্টে অবস্থান করে। জানুয়ারি মাসে সিএসইতে লেনদেনের চাকাও সচল হয়েছে। মাসজুড়ে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩০৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৩
এসএমএকে/এসআইএ