ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

আর্থিক খাতের অবদান কমেছে ২৪ শতাংশ

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪
আর্থিক খাতের অবদান কমেছে ২৪ শতাংশ

ঢাকা: চার বছরের ব্যবধানে শেয়ারবাজারে আর্থিক খাতের অবদান কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ। ব্যাংক খাতে একের পর এক অনিয়ম বেরিয়ে আসা, আয়ের উৎস ও আয় কমে যাওয়ার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা।


 
বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, ২০১০ সাল শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট বাজার মূলধনের ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ ছিল আর্থিক খাতের (ব্যাংক, অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড) অবদান। বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ২৯ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশে।
 
২০১০ সালে শেয়ারবাজারে ধসের পর থেকে আর্থিক খাতের বিনিয়োগ কমছে। এক বছরের ব্যবধানে ২০১১ সালে বাজার মূলধনে আর্থিক খাতের অবদান চার শতাংশের ওপরে কমে দাঁড়ায় ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে। পরের বছর ২০১২ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ৬৩ শতাংশে।
 
বাজার মূলধনে আর্থিক খাতের অবদান কমার এ ধারাবাহিকতা চলতি বছরেও অব্যাহত রয়েছে। ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে আর্থিক খাতের এ অবদান প্রায় সাত শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশে। আর চলতি বছরের ১৫ এপ্রিলের হিসাব অনুযায়ী তা নেমে এসেছে মাত্র ২৯ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশে।
 
শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কমে গেছে। ব্যাংক পরিচালনায় কিছু অদক্ষতা দেখা দিচ্ছে। বিনিয়োগ কমায় ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অলস অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে কমছে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের মুনাফার পরিমাণ। এতে শেয়ারবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে শেয়ারের দাম। ফলে বাজার মূলধনেও ব্যাংকের অবদানে বড় ধরনের পতন হয়েছে।
 
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকের আয়ের যে উৎস ছিল তা ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের পর কমে এসেছে। তাছাড়া সরকারি ব্যাংকের বেশ কিছু অনিয়ম উৎঘাটিত হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর ওপরও। ফলে কমেছে ব্যাংকের আয়ের পরিমাণ। এটি শেয়ারবাজারে ব্যাংকের অবদান কমার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
 
তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর শেয়ারবাজারে বিভিন্ন খাতের বেশ কিছু নতুন প্রতিষ্ঠানের আইপিও এসেছে। কিন্তু এ সময়ে ব্যাংকিং খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান আইপিওতে আসেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যাংকবহির্ভূত খাতে প্রবাহিত হয়েছে। এটিও ব্যাংকের অবদান কমার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
 
সিপিডির এ অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, ব্যাংকের অবদান কমার পেছনে শুধু ব্যাংকের অদক্ষতাই দায়ী নয়। সামগ্রিক অর্থনীতির বিনিয়োগ মন্দাও এর জন্য দায়ী। তবে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ মন্দা কমে এলে ব্যাংক খাতও ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বাজার মূলধনে কোনো প্রতিষ্ঠান কতটুকু অবদান রাখছে তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দামের ওপর। বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ২০১০ সালের পর ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দাম যথেষ্ঠ পরিমাণে কমে গেছে। ফলে কমেছে বাজার মূলধনে তাদের অবদান।
 
ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ডিএসইর মোট বাজার মূলধনে আর্থিক খাতের অবদান ছিল এক লাখ ৬১ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ৯৯ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা ও ২০১২ সালে ৭৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৭৩ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল শেষে বাজার মূলধনে আর্থিক খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।
 
ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১০ সালের পর বিভিন্ন কারণে ব্যাংক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেশ কমে গেছে। তবে সম্প্রতি বিনিয়োগকারীরা আবার ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। এখন ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যাংক ভালো পারফরমেন্স করতে পারলে আবার শেয়ারবাজারে ব্যাংকের অবদান বাড়বে বলে ধারণা করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময় : ১০২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।