ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

প্রাণ ফিরছে শেয়ারবাজারে

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪২ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৫
প্রাণ ফিরছে শেয়ারবাজারে

ঢাকা: টানা দরপতন ও লেনদেন খরার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের মূল্য বাড়ার সঙ্গে লেনদেনের গতিও বেড়েছে যথেষ্ট।

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ৬’শ থেকে ৭’শ কোটি টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে।
 
শেয়ারবাজার নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়ের আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়’র বক্তব্য এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর পর থেকেই এ ইতিবাচক ধারা বিরাজ করছে। দুই’শ থেকে তিন’শ টাকার ঘরে ঘোরাফেরা করা লেনদেন সাড়ে সাত’শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
 
সম্প্রতি(৭ মে) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশ ব্যাংককে শেয়ারবাজারে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজারে চাঙ্গা অবস্থায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে অনেক মুনাফা অর্জন করেছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিল ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না।
 
সে সময় ওই বাজারে সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী, ছাত্র-শিক্ষক ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক কষ্টে জমানো টাকা বিনিয়োগ করেন। এখন তারা সর্বশান্ত। তাদের ১০ টাকার পুঁজি এখন ৫ টাকা হয়েছে। তারা কার কাছে ডিসপিউটস দেবে? তাদের জন্য কিছু ভাবুন।
 
একই দিন সজীব ওয়াজেদ জয় আর একটি অনুষ্ঠানে জানান, ফরেন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিদেশি আইটি কোম্পানিগুলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী মাস নাগাদ এ প্রক্রিয়া সফলতার মুখ দেখতে পারে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও বাংলাদেশ উভয়পক্ষই লাভবান হবে।
 
সরকারের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ওই বক্তব্যের ৩দিন পরেই ১০ মে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই ঘোষণার মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
 
ওই দিনই বড় ধরনের উত্থান ঘটে শেয়ারবাজারে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। লেনদেনও বাড়ে শতকোটি টাকার উপরে। এরপর সূচক ও লেনদেন উভয় ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে।    
 
বাজারের এ পরিস্থিতিতে অতি উৎসাহিত না হয়ে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হয়ে জেনে ও বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা।
 
তারা বলছেন, শেয়ারবাজার বিকল্প অর্থায়নের ব্যবস্থা। এখান থেকে এক দিকে অর্থ তুলে কোম্পানি ব্যবসার আকার প্রসারিত করতে পারে। অন্যদিকে বেকার জনগোষ্ঠী এ বাজারে বিনিরয়োগ করে তাদেরকে সাবলম্বী করে তুলতে পারে।
 
তবে মনে রাখতে হবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে যেমন লাভের সম্ভবনা আছে তেমনি লোকসানের মুখেও পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই  হুজগে বা গুজবে সিন্ধান্ত না নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সবসময় সচেতনভাবে বিনিয়োগ করা উচিত।
 
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, শেয়ারবাজার যে অবস্থায় নেমে ছিলো সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটাই স্বাভাবিক। তবে আমার সন্দেহ হয় কোন গ্রুপ ইচ্ছা করে শেয়ারবাজারে দরপতনের ঘটনা ঘটিয়ে ছিলো কি না।
 
তিনি বলেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বলছে আস্থা বেড়েছে এবং যারা বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা বিনিয়োগ করছেন। তবে এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের অতিউৎসাহিত হয়ে বিনিয়োগ না করে সচেতনভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। বাজারে এখনো কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে।

ডিএসই’র সাবেক জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে আস্থা বাড়ছে। তবে আরও কিছুদিন এটি দেখা উচিত। মূলত বাণিজ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টার বক্তব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
 
একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমার ঘোষণাও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে এখনো সুদ হার কমানোর নির্দেশনা জারি করা হয়নি। বিনিয়োগকারীদের বাজারে সার্বিক তথ্য বিবেচনা করে বিনিয়োগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন ডিএসই’র সাবেক এই জৈষ্ঠ সহ-সভাপতি।
 
বাজার মূলধন
চলতি মাসের প্রথম কার্যদিবস ৪ মে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিলো ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। ১৮ মে লেনদেন শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এ সময়ে লেনদেন হয়েছে ১১ দিন। অর্থাৎ ১১ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা।
 
সূচক ও লেনদেন
মাসের শুরুতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিলো ৩ হাজার ৯৫৯ পয়েন্টে। আর লেনদেন ছিলো ৩৩০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ১৮ মে লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স সূচক দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪০৭ পয়েন্টে। আর লেনদেন হয়েছে ৭৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে শেষ ৭ কার্যদিবসে অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রের সুদ হার ঘোষণার দিন থেকে প্রতিদিন ৫’শ কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়েছে। শেষ ৪ কার্যদিবসের লেনদেন হয়েছে যথাক্রমে ৬৩৭ কোটি, ৬৬৯ কোটি ৭১০ কোটি ও ৭৫৩ কোটি টাকা।
 
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে
বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন নীরব থাকা কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আবার বাজারে সক্রিয় হয়েছেন। প্রতিদিন তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার লেনদেন করছেন।
 
ব্যাংকের শেয়ার: টানা দশদিনের উপরে শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও ব্যাংক খাতের শেয়ারে সেভাবে প্রভাব পড়েনি। এখনো ৪টি ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে।
 
আতঙ্ক কাটছে বিনিয়োগকারীদের
বাজারে বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩২ লাখ ২৩ হাজার। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী ৩০ লাখ ৫৯ হাজার, প্রবাসীদের ১ লাখ ৫৪ হাজার এবং বিভিন্ন কোম্পানির ১০ হাজার ৪৮৩টি। গত ৬ মাসে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ বেড়েছে। টানা দরপতনে আতঙ্কে থাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গত কয়েকদিনের বাজার চিত্র কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে। অনেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নতুন করে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন।
 
বেহাল দশায় ২৮ প্রতিষ্ঠান
টানা মন্দার কারণে এখনো ২৮টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের ইক্যুইটি নেতিবাচক রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধিত মূলধন থেকে আনরিয়ালাইজড (অবিক্রীত) লোকসান বেশি। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের লোকসান ১শ কোটি টাকার উপরে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৫
এএসএস/এনএস/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।