ঢাকা: দুই বছরে দেশের পুঁজিবাজার নতুন উচ্চতায় যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন।
সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ক্যাপিট্যাল মার্কেট কনফারেন্স, ২০১৫’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ডিএসইর চেয়ারম্যান ও সাবেক বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অংশ অনুষ্ঠিত হয়।
তিন ভাগে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম ভাগে বিএসইসির কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামির সভাপতিত্বে মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন এশিয়ার টাইগার ক্যাপিটাল পাটনার্স ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান মিনহাজ জিয়া, ভিআইপিবি অ্যাসেট মেনেজমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ রেস ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান ইমাম।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অংশে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ সিদ্দীকের সভাপতিত্বে ডেবট সিকিউরিটিজের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যত অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ মো. মুসা, ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এমডি আলমগীর মোরশেদ।
বিএসইসির কমিশনার আরিফ খানের সভাপতিত্বে শেষ অংশে পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন নিয়ে আলোচনা করেন ডিএসইর সিআরও এ কে এম জিয়াউল হাসান খান, গ্রামীণ ফোনের পরিচালক ও কোম্পানি সচিব হোসেন শাদাত ও আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের এমডি মনিরুজ্জামান।
খায়রুল হোসেন বলেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারের আইন-কানুনে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশি ফান্ড ম্যানেজারদের আকর্ষণ বাড়ছে। আশা করি আগামী দুই বছরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে নতুন উচ্চতায় দেখা যাবে।
তিনি বলেন, বাজারকে আরও আকর্ষণী করার লক্ষ্যে নতুন নতুন পণ্য আনতে বিএসইসি একটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। কাজ শেষ হলে জনমত যাচাই করে নতুন পণ্য বাজারে আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর রয়েছে। প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে যে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ প্রয়োজন সেজন্য পুঁজিবাজার হলো সাশ্রয়ী ও সহজ মাধ্যম। এখান থেকে টাকা নিয়ে উদ্যোক্তারা বড় বড় প্রতিষ্ঠান করতে পারবেন। যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে।
শেয়ারবাজারে ২০১০ সালের ধসের জন্য প্রাইভেট প্লেসমেন্টকে দায়ী করে বিএসইসির কমিশনার আরিফ খান বলেন, সে সময় সবাই প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার কিনে ছিলো অধিক লাভের আশায়। ফলে বাজার বাবল হয়।
তিনি বলেন, প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা পরিবর্তন এনেছি। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০০ জনের কাছে প্লেসমেন্টে শেয়ার বিক্রি করা যাবে। ফলে গত এক বছরে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট নিয়ে কোনো কেলেঙ্কারি ঘটেনি।
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, অনেক ট্রেজারি বন্ড পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। কিন্তু এগুলো লেনদেন হয় না। বন্ড মার্কেট উন্নত করতে অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিএসইসিকে সম্মেলিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বন্ড মার্কেট পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, তিন-চারটি কোম্পানি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, এ কারণে বন্ড মার্কেটের বৃদ্ধি হয়নি।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য নতুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনেক কাজ করেছে। আশা করি তারা বন্ড মার্কেটে যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপ করেন ডিএসইর সভাপতি স্বপন কুমার বালা। তিনি বলেন, দেশের কর্মসংস্থান ও বেকার সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। এজন্য শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। দরকার বেশি বেশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো উন্নয়ন। দেশের পুঁজিবাজার এই অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
এএসএস/এমজেএফ