ঢাকা: বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের ছাড়পত্র দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
এর আগে নিয়ম বহির্ভুতভাবে এ সাধারণ বিমা কোম্পানিটিকে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, আইপিও বাতিলের পর তা (আইপিও) ফিরে পেতে গত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সকে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়। এ শর্তের মধ্যে ছিল পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যেক সদস্যকে ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে।
একই সঙ্গে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সানা উল্লাহকে ৪ মাসের জন্য দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে। আর কোম্পানি সচিব মো. মাসুদ রানা ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ফিরোজুল ইসলামকে বিভাগীয় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এরপর গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স শর্ত পালনের বিষয়ে আইডিআরএকে একটি চিঠি দেয়। কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফা কামাল স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিমা আইন ২০১০’র ১৩৪ ধারা অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য ব্যক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা পরিশোধ করবেন। একই সঙ্গে বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মো. সানা উল্লাহকে সিইও পদ থেকে সরিয়ে ৪ মাসের জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওমর ফারুককে ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর কোম্পানি সচিব মো. মাসুদ রানা ও সিএফও মো. ফিরোজুল ইসলামকে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে’।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকরা ইতিমধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেছেন। এছাড়া বাকি শর্তগুলোও পরিপালনের কথা জানিয়েছে। তাই আইনের অন্যান্য শর্ত পালন সাপেক্ষে এ প্রতিষ্ঠানটিকে আইপিওতে যাওয়ার জন্য আইডিআরএ থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, বিমা কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধি করতে হলে আইডিআরএ’র অনুমোদন নিয়ে কোম্পানির বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) কোম্পানির সংঘ স্মারক ও সংঘবিধি পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স আইডিআরএ’র অনুমোদন ছাড়াই ইজিএম করে কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন, পরিশোধিত মূলধনের উদ্যোক্তা ও জনগণের শেয়ার ধারণের অনুপাত পরিবর্তন করে।
এ বিষয়ে কোম্পানির শেয়ার মূলধন বৃদ্ধি সংক্রান্ত ১২ নম্বর সংঘ স্মারকে বলা হয়েছে, ‘কোম্পানি উহার শেয়ার মূলধন উপযুক্ত মনে করিলে সময়ে সময়ে যেকোনো অর্থের নতুন শেয়ার সৃষ্টির মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি করিতে পারিবে। তবে এইরূপ মূলধন বৃদ্ধি করিতে হইলে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদনক্রমে হইতে হইবে’।
তবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল সংঘ স্মারকের এ ধারা লঙ্ঘনের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি করে আইপিও’র আবেদন করে। আর বিএসইসি রহস্যজনকভাবে আইডিআরএ’র ছাড়পত্র ছাড়াই বাংলাদেশ ন্যাশনালকে নিয়ম বহির্ভুতভাবে গত ১২ মে আইপিও’র মাধ্যমে ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেয়।
এরপর আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ এ বিষয়ে চরম উদ্বেগ জানিয়ে গত ১৭ জুন বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিকে (আরজেএসসি) চিঠি দেয়। যার অনুলিপি অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।
চিঠিতে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বিএসইসি’র চেয়ারম্যানকে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ব্যতীত পরিবর্তিত সংঘ স্মারক ও বিধিমালা অনুসরণ করে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে জনসাধারণের মধ্যে শেয়ার বিক্রির অনুমোদন প্রদান বিমা প্রতিষ্ঠান সমূহের নিয়ন্ত্রণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করিবে। বিমা আইনের সুষ্ঠু প্রতিপালন ও বিমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হল’।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের চিঠির প্রেক্ষিতে ২৫ জুন বিএসইসি থেকে এক চিঠি দিয়ে জানানো হয়, আইনগত সকল বাধ্যবাধকতা পূরণ করায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সকে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসি’র পরিচালক কামরুল আনাম খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আইডিআরএ বিমা কোম্পানির প্রাথমিক নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান। তাই নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করলে আইডিআরএ আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে’।
তবে বিএসইসি থেকে আইডিআরএকে এ চিঠি দেওয়ার মাত্র চারদিন পরেই হঠাৎ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের আইপিও’র চাঁদা গ্রহণ স্থগিত করে দেয় বিএসইসি। এ বিষয়ে বিএসইসি’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে বাংলাদেশ ন্যাশনালের আইপিও’র চাঁদা গ্রহণ আপাতত স্থগিত করা হলো।
সার্বিক বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমানের সঙ্গে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এএসএস/এএসআর