ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

অসঙ্গতি সত্ত্বেও ইভিন্স টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
অসঙ্গতি সত্ত্বেও ইভিন্স টেক্সটাইলের আইপিও অনুমোদন

ঢাকা: স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সমস্যা ও সাবসিডিয়ারির ডেফার্ড ট্যাক্স হিসাবে না আনাসহ ইভিন্স টেক্সটাইল কোম্পানির আর্থিক হিসাবে নানা ধরনের অসঙ্গতি পেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তাই পুঁজিবাজারে স্বার্থে কোম্পানিটিকে আইপিও’র অনুমোদন না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে ডিএসই।

অসঙ্গতির সব বিষয়গুলো নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনও দিয়েছে ডিএসই।

কিন্তু ডিএসই’র এ সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। বরং শর্ত পূরণ না করা কোম্পানিটিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, কমিশন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ নয়, বিশেষ অর্থের বিনিময়ে কোম্পানিটিকে গত ০৪ এপ্রিল ১০ টাকা দামে ১ কোটি ৭০ লাখ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১৭ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এর আগেও কমিশন অ্যাপোলো ইস্পাতকে আইপিও’র মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার অনুমোদন দেয়। এরপর অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে কোম্পানিটির আইপিও স্থগিত করা হয়। তবে কিছু দিন পর আবার দফা-রফা শেষে টাকা তুলে নেওয়ার অনুমোদন দেয় কমিশন।

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পাবলিক ইস্যু রুলস অনুসারে ইভিন্স টেক্সটাইল কোম্পানি আবেদন করায় অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। ডিএসই’র প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকেই পর্যবেক্ষণ দেয়। পর্যবেক্ষণ সঠিক হলে তা গ্রহণ করা হয়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, কোম্পানিটি প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছে। পরবর্তী সময়ে এসব শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নেবে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুঁজিবাজার।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আইপিও অনুমোদন নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনার পর চলতি বছর প্রথমেই পাবলিক ইস্যু বিধিমালায় পরিবর্তন আনে বিএসইসি। সংশোধিত পাবলিক ইস্যু বিধিমালায় এটিই প্রথম আইপিও অনুমোদন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেবল অভিহিত মূল্যে শেয়ার বিক্রি করতে আগ্রহী কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দেয়। কিন্তু ইভিন্স টেক্সটাইলের প্রসপেষ্টাসে অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে গত ২৮ মার্চ ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. স্বপন কুমার বালা আইপিওর অনুমোদন না দেওয়ার অনুরোধ করে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের কাছে পর্যবেক্ষণ পাঠান। কিন্তু ডিএসই’র পর্যবেক্ষণ আমলে না নিয়ে কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দেয় বিএসইসি।

জানা গেছে, আর্থিক প্রতিবেদনে ইভিন্স টেক্সটাইল সাবসিডিয়ারির ডেফার্ড ট্যাক্স হিসাব করেনি। বার্গেইন পারচেজ লাভ-লোকসান হিসাবে দেখানোর কথা। কিন্তু কোম্পানিটি সমন্বিত আয় হিসাবে দেখিয়েছে। কোম্পানির সাবসিডিয়ারির ক্ষয়-ক্ষতি হিসাব করেনি। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সমস্যা ছিলো। এছাড়া কবে থেকে কোম্পানি বাণিজ্যিক অপারেশনে গেছে তা উল্লেখ করেনি। পাশাপাশি অডিটরের ঠিকানাও উল্লেখ করেনি। ক্যাশ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে শেয়ার ছাড়ার বিষয়টিও স্পষ্ট করেনি। হিসাবের ক্ষেত্রে কোম্পানির ৩ বছরের পুরনো নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব জমা দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১ বছরের হিসাব দেয়। কোম্পানির সম্পদের লিজের তথ্যও ছিল না। অব  লেখকের দুই ধরনের তথ্য দিয়েছিল। এছাড়া আইপিওর টাকা কোন খাতে খরচ করবে তা উল্লেখ করেনি ইভিন্স।

এর আগেও প্রি-আইপিও প্লেসেমন্টের মাধ্যমে কোম্পানিটি ১০৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।

জানা গেছে, কোম্পানিটি এক বছরের পুরনো নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব জমা দিয়ে আইপিও অনুমোদন পেতে আবেদন করেছিল। নতুন আইপিও বিধি অনুযায়ী এ এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে ডিএসই কোম্পানিটির নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পিনাকি অ্যান্ড কোম্পানিকে কয়েক দফায় চিঠি দেয়। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিএসই’র ওইসব চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। পরবর্তী সময়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএসইসিকে এ বিষয়ে লিখিত পর্যবেক্ষণ দেন।

পিনাকি অ্যান্ড কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলেই তথ্য দিতে পারি না। এ বিষয়ে কোম্পানি থেকে অনুমতি পেলে তথ্য দিতাম।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। বিনিয়োগকারীরা সেটি দেখেই বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি এবং স্টক এক্সচেঞ্জের পর্যবক্ষেণকে মূল্যায়ন না করে আইপিও অনুমোদন দেয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। এতে পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
এমএফআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।