ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শেয়ারবাজার

প্রাইম ইসলামী লাইফে অবৈধ বিনিয়োগ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
প্রাইম ইসলামী লাইফে অবৈধ বিনিয়োগ

পলিসি হোল্ডারদের দায়ের সোয়া ২শ’ কোটি টাকার অবৈধ বিনিয়োগ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। কোম্পানিটি সরকারি বন্ড ও অনান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের এই টাকা অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করেছে।

ঢাকা: পলিসি হোল্ডারদের দায়ের সোয়া ২শ’ কোটি টাকার অবৈধ বিনিয়োগ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। কোম্পানিটি সরকারি বন্ড ও অনান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের এই টাকা অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করেছে।

অথচ পলিসি হোল্ডারদের দায়ের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের মেয়াদ পূর্তিজনিত দায়ের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করার বিধান করে। যা বিমা আইনের লঙ্ঘন।

ফলে এ বছর তো হচ্ছে না। আগামী বছরের মধ্যেও যে এই টাকা কোম্পানিটি বিনিয়োগ করবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তার কারণ চতুর্থবারের মতো আইডিআরএ সময় বেঁধে দেয়া সময় কোনো বিনিয়োগ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। বরং উল্টো পঞ্চমবার ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানি সূত্র জানায়,গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত আইডিআরএ’র বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়েছে।

আইডিআরএ’র সদস্য ও মুখপাত্র জুবের আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, কোম্পানিটির সরকারি বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ পরিমাণের তুলনায় কম রয়েছে। আমাদের বেঁধে দেওয়া সময়ও শেষ হয়েছে। এরপর কোম্পানিটির সঙ্গে আইডিআরএ’র শুনানি হবে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোম্পানি সূত্র মতে, কোম্পানিটির পলিসি হোল্ডারদের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ৭৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বিমা আইন-১৯৩৮ অনুসারে জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের মেয়াদ পূর্তিজনিত দায়ের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হয়। সেই হিসেবে কোম্পানিটিকে ২২৭ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হতো। কিন্তু কোম্পানিটির বিনিয়োগ রয়েছে কেবল ৪/৫ কোটি টাকা। যা বিমা আইনের লঙ্ঘন।

এজন্য বিমা আইন-২০১০ এর ধারা ১০ এর (ঘ) ও (ছ) উপধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইন পালনের জন্য গত ২০ নভেম্বর, ১৯ এপ্রিল, ৫ জুন ও ০৬ সেপ্টেম্বর চার দফা বৈঠকের পর সময় বেঁধে দেওয়া হয় প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে।

কোম্পানির এই টাকা এফডিআরসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে বলে স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানের এমডি মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, এফডিআরের মেয়াদপূর্ণ না হওয়ায় সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারিনি।

তিনি বলেন, এটি ইসলামিক কোম্পানি। তাই বিনিয়োগের আগে সব কিছু বিবেচনা করেই বিনিয়োগ করতে হয়। আমরা ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময় চেয়েছি। আশা করছি, সেই সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবো।

বিনিয়োগের নির্দেশনা ছাড়াও কোম্পানির অন্যান্য অনিয়ম খতিয়ে দেখতে অডিটর (বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান) নিয়োগ করেছে আইডিআরএ।

নিয়োগকৃত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রাইম ইসলামী লাইফের ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের ব্যবসায়িক চিত্র নিরীক্ষা করবে। এতে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, বিনিয়োগ, প্রিমিয়াম আয়, তামাদি পলিসি, লাইফ ফান্ড ও সম্পদের প্রকৃত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।

আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ রয়েছে, ২০০৯-১৫ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছরে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের তুলনায় নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের চেয়ে ৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বেশি দেখিয়েছে কোম্পানিটি। বিমা বিধিমালা-১৯৫৮ এর ৩৯ বিধি মতে, প্রথম বর্ষ ব্যবসার জন্য ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা ৯০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু কোম্পানিটি নির্ধারিত সীমার চেয়ে ২০১৫ সালে ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং ২০০৯ সালে ৪৯ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে। যা বিমা বিধিমালা-১৯৫৮ এর বিধি ৩৯ এর লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
এমএফআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।