এসব মিথ্যা খবরে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম গত কয়েক কার্যদিবস ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম আরো বাড়বে বলে মার্কেটে গুজব ছড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা বাজার থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
কোম্পানি গুলো হচ্ছে- জুট স্পিনার্স, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, ইমাম বাটন, ফুয়াং ফুড, বিডি অটোকার, ফার্স্ট ফাইনেন্স, ইউনাইটেড এয়ার, সায়হাম কটন মিলস লিমিটেড, রহিমা ফুড, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেড এবং দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস লিমিটেড।
ডিএসইর তথ্য মতে, সোমবারও (১৭ জুলাই) রহিমা ফুডের শেয়ার ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি বেড়ে ১৮৩ দশমিক ৫০ টাকায়, জুট স্পিনার্সের শেয়ার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি বেড়ে ৭৭ দশমকি ৯ টাকায়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি বেড়ে ১৩ দশমিক ৪ টাকায়, ঢাকা ডাইং দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ১১ টাকায়, ইমাম বাটন ১ শতাংশ বেড় ১৯ দশমিক ৪ টাকায়, ফার্স্ট ফাইনেন্স দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাকি কোম্পানিগুলোর শেয়ার একই হারে বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছোট মূলধনী কোম্পানিকে টার্গেট করে কারসাজি চক্র এসব কোম্পানির ২০-৩০ হাজার শেয়ার কেনেন। তারপর কয়েকদিন আস্তে দাম বাড়ান। এরপর বিক্রির সময় দাম বাড়ানোর জন্য বেশি দামে আরো কিছু শেয়ার কেনেন।
চক্রটি বাজারে গুজব ছড়ান যে, শেয়ারগুলোর দাম আরো বাড়বে। এই গুজবে কিছু বিনিয়োগকারীরা লাভের আশায় শেয়ারগুলো কেনেন। কারসাজি চক্র ঠিক তখনই তাদের হাতে থাকা শেয়ারগুলো বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে যান।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হাত গুটিয়ে রয়েছে।
একই অবস্থা দেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেরও। প্রতিষ্ঠান দু’টিও নিরব ভূমিকা পালন করছে। তারা শুধু এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পেছনে কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চেয়েছে। আর কোম্পানিগুলো তাদের উত্তরে জানিয়েছে দাম বাড়ার বিষয়ে তাদের কাছে কোনো মূল্য সংবদেনশীল তথ্য নেই। কিন্তু সার্ভেইলেন্স সফটওয়ার থাকার পরও এই কারসাজি চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না কোনো স্টক এক্সচেঞ্জ।
দুর্বল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বাংলানিউকে বলেন, সব সময় স্মল পেইডআপ সম্পন্ন কোম্পানিতে কারসাজি হয়। এখানে অল্প শেয়ার কিনেই কারসাজি করতে পারে।
তিনি বলেন, চক্রটি ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ সব শেয়ারে লেগে থাকে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিৎ এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ পরিহার করা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কারসাজি করে দুর্বল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ানো চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রতিনিয়তই বাজারে কারসাজি বাড়ছে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এর ফলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে। পাশাপাপাশি কমছে পুঁজিবাজারে মর্যাদাও। তাই বাজারে স্বার্থে এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
এদিকে সায়হাম কটন, ইউনাইটেড পাওয়ার, পিপলস লিজিং এবং দুলামিয়া কটনের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার পেছনে কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে জানিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ১০১৭
এমএফআই/এসএইচ