একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া শরিফার চিন্তা চা দোকানি বাবার সংসার নিয়ে। বাবার স্বল্প আয়ে সংসারের খরচ শেষে লেখাপড়ার টাকা জোটে না।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই অন্যদের তুলনায় দ্রুত সেলাইয়ের কাজ শিখে যায় শরিফা। স্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়ায় আরও বেশি করে কাজ শেখার। প্রতিদিনই সেলাইয়ের ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনেছে কিশোরী মেয়েটি। তার সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন করল বসুন্ধরা গ্রুপ।
সেলাইয়ের কাজ শেখার পর বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে শুক্রবার (২৭ জুন) তার হাতে তুলে দেওয়া হয় সেলাই মেশিন। নতুন সেলাই মেশিন পেয়ে শরীফার মুখে ফুটে ওঠে স্বপ্ন জয়ের হাসি। শুধু শরীফা নয়, লালমনিরহাটের সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় সেলাই মেশিন পেয়েছেন বিভিন্ন বয়সী সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র ৩০ জন নারী।
বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাসেল মিয়া ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একে ফজলুল হক।
হতদরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপ কালের কণ্ঠের শুভসংঘের মাধ্যমে প্রথমে তাদের সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের হাতে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালে লালমনিরহাটের গিয়াস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় হল রুমে প্রশিক্ষিত এসব নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাশেদ মিয়া বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ সহায়-সম্বলহীন অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন দিয়েছে। এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এই মেশিন দিয়ে উপার্জন করে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারবেন সুবিধাবঞ্চিত নারীরা।
তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে চলেছে। অসহায় দরিদ্র নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণের যে উদ্যোগ তারা নিয়েছে, সেটি একজন অসহায় মানুষকে স্বাবলম্বী করার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ। বসুন্ধরা গ্রুপকে সাধুবাদ জানাই। তাদের এই উদ্যোগ লালমনিরহাটের সব উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ুক। ’
জেলা শহরের নর্থবেঙ্গল মোড় এলাকার মজিদা খাতুন এক বছর আগে উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে সংসার নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। তিনিও পেয়েছেন শুভসংঘের সেলাই মেশিন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চা নিয়ে ভীষণ কষ্টে আছি। নতুন উদ্যম নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ করে দিল। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে চাই। যেন আমার সংসারের অভাব দূর হয়। আর দরিদ্র থাকব না। আমাদের দারিদ্র দূর করে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আল্লাহ তাদের সবার ভালো করবেন। ’
সুফলভোগী হতদরিদ্র শেফালি বলেন, ‘কী করব কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। দিশাহারা আমাকে পথ দেখিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এখন আর অভাব থাকবে না। পড়াশোনাও করতে পারব। আমার দরিদ্র পরিবারকে আলোর পথ দেখিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আমাদের দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়তা করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ এই গ্রুপের সবাইকে ভালো রাখুন। ’
হাওয়া খাতুন, মায়া খাতুন ও বিনার মতো যেসব নারী শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তারা এখন জামাকাপড় কাটতে ও সেলাই করতে জানেন। সেলাই মেশিন পাওয়ার পরেও তারা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে আসছেন এবং নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। সবার একটাই ইচ্ছা, দারিদ্র্য দূরীকরণ। সেলাইয়ের কাজ করে দারিদ্র্যকে বিদায় জানাতে চান তারা।
সেলাই মেশিন পাওয়ার পর বিজলি বলেন, ‘আগুনে আমার শোবার ঘরসহ সাধের সেলাই মেশিনটিও পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অভাবের তাড়নায় কীভাবে কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আমাকে একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। মেশিনটি পেয়ে আমার খুবই উপকার হলো। আল্লাহ বসুন্ধরা গ্রুপের সবার হায়াত বাড়িয়ে দিক। আমাদের মতো মেহনতি মানুষের পাশে বেশি করে দাঁড়ানোর তৌফিক দিক। ’
বসুন্ধরা শুভসংঘ পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘সেলাই প্রশিক্ষণের জন্য ৩০ জন অসহায় নারীকে নির্বাচন করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষার পর ৩০ জনের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। অতিদরিদ্র পরিবারের এই নারীরা সেলাই মেশিন পেয়ে খুবই উপকৃত হয়েছেন।
লালমনিরহাট জেলা শুভ সংঘের সাধারণ সম্পাদক নাঈম রহমানের সঞ্চলনায় বক্তব্য দেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একে ফজলুল হক, জেলা সমাজসেবা উপ পরিচালক মোহাম্মদ মতিয়ার রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফিরোজ হায়দার লাভলু, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মজমুল হোসেন প্রামাণিক, লালমনিরহাট টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আনিছুর রহমান লাডলা।
আরএ