সিঙ্গাপুর থেকে: ফেরার পার্ক স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময়ই বুঝতে পারলাম, আজ রোববার বিকেল। এদিন আশপাশের এলাকায় মেলা বসে বাংলাদেশি আর ভারতীয়দের।
ফেরার পার্ক থেকে শুরু করে মোস্তফা মার্ট, মিটি মার্ট, দেস্কার রোডে বাংলাদেশিদের ভিড়ে আজ হাঁটাই দায়। ঠিক যেন ফার্মগেটের ফুটপাতে ভিড় ঠেলে এগোচ্ছি। পথে পথেই গল্প।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা কানে আসছে। মুস্তাফা সেন্টারের আশপাশটা এই ভর সন্ধ্যায় যেন এক টুকরো বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে। সঙ্গে রয়েছে লিটল ইন্ডিয়া।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দীপাবলির কারণে পুরো এলাকা বিশেষভাবে সাজানো। বিকেলেই আবার ধোবীঘাট থেকে একটি বিশাল রথযাত্রা শুরু হয়েছে। এ কারণে রাস্তা পারাপার বন্ধ। আর সব দেশের মানুষ অকথ্য ভাষায় ভারতীয়দের যেসব দেশি গালি দিচ্ছে, ভাষা বুঝলে তা নিয়ে হয়তো মারামারিও হতে পারতো।
সিঙ্গাপুরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার আমেজ আজকের বিশেষ দিনটিতে বিশেষ এ এলাকায় কম। এখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় রোববারকে কেন্দ্র করে।
সন্ধ্যায় কয়েক কিলোমিটারজুড়ে এখানে বসেছে বাংলাদেশিদের আড্ডা। দেশের মতনই রাস্তার পাশে, ড্রেনের উপর, পার্কিংএ, পার্কে যে কোন জায়গায় গোল হয়ে বসে চলছে আড্ডা।
দুই লাখের মতো বাংলাদেশি সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন। তাদের প্রত্যেকের প্রিয় একটি নাম আছে ‘মিটি মার্ট’। আসলে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি মিটি মার্টে দিনে একবার হলেও আসবেন। কারণ এটাই যে বাংলাদেশি পাড়া। এখানে এলেই যে নিজ মাটির স্বাদ পাওয়া যায়। পুরো সিঙ্গাপুর শহর ঘুরে এসে মিনি মার্টে দাঁড়ালে মনেই হয় না দেশের বাইরে আছি। মিটি মাঠে চলছে আড্ডা, হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠানো আর মালামাল পাঠানো ও দেশ থেকে আসা মালামাল বুঝে নেয়া।
সন্ধ্যার আগেই অল্প অল্প করে ভিড় শুরু হতে থাকে। আর রোববার দিনটা যেন এখানে ঈদের মতোই। এই একটি দিনের জন্য প্রতিটি বাংলাদেশি সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করেন।
দেস্কার রোডের মিটি মার্টে বাংলাদেশিদের সমারোহ আরো বেশি। সরকার থেকে স্পেশাল মোবাইল টয়লেট রয়েছে এখানে। রোববারকে কেন্দ্র করে পান দোকান থেকে শুরু করে সিগারেট, ঢাকার বিকাশ, অগ্রণী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, বাংলাদেশি পরোটা-ভাজি, নান রুটি-গরুর মাংস, সবজির দোকান, লুঙ্গি-টুপি সবই পাওয়া যাচ্ছে আজ। এমনকি ভিনদেশি দোকানগুলোও বিক্রি করছে ঝালমুড়ি, ছোলার মতো হালকা খাবার।
টেক্কা মার্কেট, পার্ক রয়েল হোটেল এলাকাতেও দাঁড়ানো মুশকিল। কেউ খাচ্ছেন, কেউ আড্ডা দিচ্ছেন, আলোচনা-সমালোচানা, পরনিন্দা, সুনাম এভাবেই জমে উঠছে আড্ডা।
কেউবা আবার শপিং করছেন। কেউ পুরো সপ্তাহের হিসাব মেলাচ্ছেন। আর ব্যাংকে না গিয়ে হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠানোর কার্যক্রম চোখে পড়ার মতো। হাতে খাতা নিয়ে টাকা সংগ্রহ চলছে শ্রমিকদের থেকে। এটা পরিচিত দৃশ্য।
রোববার বিকেল উপলক্ষে এখানকার মোবাইল কোম্পানিগুলো বক্স করে বসেছে। সেখানে বাংলা ভাষায়ও বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। বোঝা যায় সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বাংলাদেশিরা।
ভারতীয়দের মিলনমেলাও আজ। লিটল ইন্ডিয়ার আশপাশে ভারতীয়দের সঙ্গে মিশে আছে বাংলাদেশিরাও। ফুটপাতেই আজ বসেছে বাহারি দোকান।
আমাদের গুলিস্তানের মতোই 'দেইখ্যা লন ৫ ডলার, কিন্যা লন ৫ ডলার' সিস্টেমে বিক্রি হচ্ছে জিন্স প্যান্ট, ৩ ডলারে হাফ প্যান্ট, ৫ থেকে ১০ পলারে শার্ট, আরো কতো রকমারি পণ্যের বাহারি দোকান।
বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি দোকানগুলোতে আজ বিশেষ ব্যবস্থা খাবারের। অন্যদিনের তুলনায় রান্না হয়েছে বেশি পরিমাণে। কনফেকশনারিগুলো মাল উঠিয়েছে বেশি পরিমাণে।
আবার বিভিন্ন জেলাভিত্তিক সমিতিগুলোও কাজ করছে আজকে। নিজেদের সংগঠনকে আরো বড় করতে সদস্য সংগ্রহ করতেও দেখা গেলো তাদের।
** সিঙ্গাপুরের মতো শিপইয়ার্ড চট্টগ্রামেও হতে পারে
** দৈনিক ২০ ডলারে কাজ শুরু করি
** ‘স্যরি’টা এক সময় যন্ত্রণা হয়ে উঠছিল’
** কালাভুনা-বোরহানি আর আড্ডা
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৪