ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

স্পেন

থাইল্যান্ড থেকে জেসমিন পাপড়ি

থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের ‘শক্তি’

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৫
থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের ‘শক্তি’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Jasmin_papri_1ব্যাংকক থেকে: ভিনদেশে অচেনা পরিবেশে খেই হারিয়ে ফেলেন অনেকেই। যদি তা হয় চিকিৎসা নিতে এসে, তাহলে তো কথাই নেই।

বুকে ভর করে অজানা ভয়। তবে থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য আসা এসব ভয় পাওয়া বাংলাদেশির ‘শক্তি’ হিসেবে কাজ করছেন ডা. শক্তি রঞ্জন পাল।

ব্যাংকক হাসপাতালের এই ইন্টারনাল মেডিসিন কনসালট্যান্ট এখন বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছেন। শুধু তাই নয়, রোগী দেখার পাশাপাশি হাসপাতালের সিইও’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।

জানা যায়, কোনো বাংলাদেশি রোগী ব্যাংকক হাসপাতালে আসার পর ডা. শক্তিই তাকে চেক-আপ করান। এরপর রোগীর অসুস্থতার ধরন বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেন। রোগীরা প্রথমেই একজন বাংলাদেশি ডাক্তার পেয়ে মন খুলে অসুখ আর সব ধরনের অসুবিধার কথা বলার সুযোগ পান।

চট্টগ্রাম থেকে নিয়মিত চেক-আপে আসা জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন রোগী বাংলানিউজকে বলেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করেও সুস্থ থাকতে পারছিলাম না। উপরন্তু কয়েকবার স্ট্রোকের শিকার হলাম। আরও স্ট্রোকের আশঙ্কার কথাও  জানান ডাক্তাররা। বাধ্য হয়ে ব্যাংককে এসে ডা. শক্তির কাছে চেক-আপ করালাম। তখন জানতে পারলাম, আমার হার্টের অসুখ। এ অসুখের কারণেই ব্রেন স্ট্রোক হচ্ছিলো।

তবে উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে আর স্ট্রোক হবে না বলে আশ্বাস দেন তিনি। যেন বেঁচে থাকার শক্তি ফিরে পাই। এরপর থেকে আমার সত্যিই আর কোনো স্ট্রোক হয়নি। শুধু হার্টে একটা লেজার অপারেশন করানো হয়েছে। এখন ভালো আছি। বলছিলেন জাহাঙ্গীর।

মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) ব্যাংকক হাসপাতালে কথা হয় ডা. শক্তির সঙ্গে। নিজের চেম্বারে বসে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন থাইল্যান্ডের চিকিৎসা সেবার নানা দিক। উঠে আসে বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবার দ‍ুর্বলতাও।

তিনি বলেন, এখানে কোনো রোগীকে জোর করে আনতে হয় না। মিথ্যা প্রলোভনেও আকৃষ্ট করতে হয় না। মানসম্পন্ন সেবা দিতে পারছি বলেই রোগীরা সেবা পেতে দেশ থেকে বিদেশে আসেন।

চিকিৎসা সেবার জন্য প্রযুক্তি, নার্সিং ও ভালো ডাক্তার অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সবগুলোই থাইল্যান্ডে আছে।

বিপরীতে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো প্রযুক্তিগতভাবে এখনো সেভাবে দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি উল্লেখ করে উদারহরণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের তিনটি হাসপাতালে একজন ক্যানসার রোগীর তিনবার বায়োপসি করালে তিন রকম রিপোর্ট পাওয়া যায়। অর্থাৎ, সংশ্লিষ্টরা প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না।

নার্সিংয়ের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ মারাত্মক পিছিয়ে থাকার কথা বলেন ডা. শক্তি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের বেশিরভাগের মুখেই দেশের নার্সিংয়ের দীনতা নিয়ে অভিযোগ শোনা যায়। চিকিৎসা সেবার জন্য নার্সদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে পর‌্যাপ্ত নার্স প্রশিক্ষিত করা প্রয়োজন।

তবে বাংলাদেশের ডাক্তারদের মেধা থাকলেও রোগীদের প্রতি তারা মনোযোগী নয়- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের ডাক্তাররা রোগীদের সময় দেন না বলে রোগীদের কাছে অভিযোগ পাই। আমি মনে করি, এটা একজন ডাক্তারের অত্যন্ত দুর্বল দিক। তাকে শৃঙ্খলা মানতেই হবে। রোগীর প্রতি বিশেষ দায়িত্বশীল হতে হবে। অনেক সময় রোগীর প্রতি যথেষ্ঠ সময় না দেওয়ায় ছোট্ট সমস্যাটি ডাক্তারের নজর এড়িয়ে যায়।

ডা. শক্তি আরও বলেন, দেশের অনেক ডাক্তার খারাপ আচরণ করেন বলে বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীর কাছে অভিযোগ পাই। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ডাক্তারকে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। মনোযোগ দিয়ে রোগীর কথা শুনতে হবে। কারণ, আমরা জানি রোগীর মনে দুঃখ আছে। শরীরে কষ্ট আছে। আর এ দুঃখ লাঘব করতেই তিনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছেন।

তবে বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালই এখন সেবার মান রক্ষায় চেষ্টা করছেনে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো অনেক শিখতে হবে। রোগীর প্রতি ডাক্তার কিংবা নার্সকে মনোযোগী হতে হবে। একজন রোগীর সেরে ওঠার পেছনে নার্সরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

থাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলো মূলত ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছে। কিন্তু বিদেশি রোগীদের আকৃষ্ট করতে যা যা প্রয়োজন থাই সরকার তা করছে বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করা এই চিকিৎসক।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, থাই সরকার রোগীদের জন্য বিশেষ ভিসা চালু করেছে। গুরুতর রোগীর কয়েক ঘণ্টায় ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।
এই উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা নিতে বাংলাদেশ থেকে মাসে প্রায় ১২০-১৩০ জন রোগী ব্যাংকক হাসপাতালে আসেন।

শহরের অন্য হাসপাতাল হিসাব করলে এ সংখ্যা অনেক বলে জানালেন ডা. শক্তি।

বাংলাদেশ থেকেও ব্যাংকক হাসপাতালের কার‌্যক্রম জানার ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় রয়েছে ব্যাংকক হাসপাতালের তিনটি অফিস। এসব অফিসগুলোতে রোগীদের ব্রিফিং করতে নিয়মিত বাংলাদেশে যান প্রবাসী এ চিকিৎসক।

এছাড়া হাসপাতালটি সম্প্রতি ‘লাইফ অ্যান্ড হেলথ’ নামে নতুন একটি সেবা কার্যক্রম চালু করেছে। এতে স্বাস্থ্যসেবায় যেকোনো পর্যায়ে প্রত্যেক রোগীর বর্তমান ও অতীত স্বাস্থ্য তথ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে।

কয়েকটি বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত এ বিভাগ রোগীর হেলথ প্রোফাইল তৈরি ও পর্যালোচনা, হেলথ প্রোফাইল আপডেট, গুরুতর রোগী স্থানান্তর, টেলিমেডিসিন, ই-মেডিসিন, স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ ও তথ্য বিনিময় করবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
জেপি/এএ

** রেন্টে বাইক!
** গাড়ির হর্নবিহীন শহর
** সময়ানুবর্তী রিজেন্ট এয়ার
** কলম দেখলেই এগিয়ে আসেন তারা!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

স্পেন এর সর্বশেষ