বর্তমান সময়ে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ম্যারাথনের। আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখন ঝুঁকছে খেলাটিতে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয় উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের প্রশাসক ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের কাছে। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিব (মন্টু) স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়, ‘রোড রেইস, হিল ট্র্যাকিং, ম্যারাথন, ক্রস কাউন্টি এ সকল প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের আওতাধীন। তাই সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ঢাকাসহ বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিভাগে এ ধরনের আয়োজন করতে হলে ফেডারেশনের অনুমোদন অবশ্যই লাগবে। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের আয়োজনের অনুমতি প্রদানে বিরত থাকার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করা হলো। ’
তবে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের এই চিঠি দেশের ক্রীড়া আইনের পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন ব্যারিস্টার আইমান রহমান খান। পেশায় একজন আইনজীবী হলেও ম্যারাথনের সঙ্গে যুক্ত আইমান। আইন চর্চার পাশাপাশি নিয়মিতই ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিতে চেষ্টা করেন তিনি। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের চিঠিতে উল্লেখিত বিষয়টি দেশের ক্রীড়া আইন লঙ্ঘন করছে বলে জানিয়ে নিজ উদ্যোগে গত ফেব্রুয়ারিতে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন আইমান।
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের পাশাপাশি উকিল নোটিশের প্রতিলিপি দেয়া হয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে। উকিল নোটিশে আইমান ম্যারাথন আয়োজনে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের অনুমতি গ্রহণের আদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। আইমান বলেন, ‘প্রায় ৫০-৬০ হাজার রানারের একটা অ্যাক্টিভ কমিউনিটি এখন বাংলাদেশে আছে। প্রতি মাসেই কোনো না কোনো উপজেলা কিংবা জেলায় রঙিন ইভেন্ট হয়, ম্যারাথন হয়। এই ইভেন্টগুলো এতদিন স্বাধীনভাবেই হচ্ছিল। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন এসব ইভেন্টে কোনো সাহায্যই করেনি। হঠাৎ করে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন গত ৮ ফেব্রুয়ারি নোটিশ জারি করে বলে এখন থেকে ম্যারাথন ইভেন্ট যেখানেই হবে তাদের অনুমতি ব্যতীত করা যাবে না। ’
‘জেলা পর্যায়ের যেসব অথোরিটি আছে তাদের বলা হয়েছে কোনোভাবে তাদের অনুমোদন দেওয়া হবে না যদি না তারা অনুমতি নেয়। আমি নিজেও একজন রানার। আমি নিজে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাদেরকে একটা উকিল নোটিশ পাঠাই। সেখানে আমি তাদের বলেছি আপনারা যা করেছেন তাতে একটা সিস্টেমে যাওয়া উচিৎ ছিল। সেখানে তাদের বলা উচিৎ ছিল যারা সংগঠনে আছে তারা যেন এসে রেজিস্ট্রেশন করে। আপনারা যেভাবে হুট করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সেটা বেআইনি ও অসাংবিধানিক। এরপর যথাযথ পদ্ধতিতে যেভাবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা আমরা নেব। ’
‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮’ অনুযায়ী ফেডারেশন এ ধরনের অনুমতি দাবি করতে পারে না বলে মত আইমান রহমানের। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের যে আইন সেখানে এমন কিছু লেখা নাই যেখানে ফেডারেশনের অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। সেখানে উল্টো বলা আছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সব ফেডারেশনগুলোকে সহায়তা করবে এবং ক্রীড়ার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে। এই অনুমতি বা এনওসির (অনাপত্তিপত্র) বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি মূল আইনে। সেই হিসেবে তারা যা করেছেন সেটা আইনত অবৈধ। ’
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আইন কর্মকর্তা এস এম কবিরুল হাসানের কাছে। দুই পক্ষই যার যার অবস্থান থেকে ঠিক আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কবির বলেন, ‘আমি বলবো উভয় পক্ষেরই যৌক্তিকতা আছে। কারণ এনএসসির আইনে এমন বাধ্যবাধকতা নেই যে তাদের (অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের) কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সেদিক থেকে তারা (আইমান) ঠিক আছে। তারা আয়োজন করতে পারে। অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের বক্তব্য হলো বিষয়টা একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা উচিত। অন্যদিকে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের যুক্তি, দেখা গেল ঢাকা শহরে একই সময়ে একই স্থানে দুইজন বা তিন জন ইভেন্ট আয়োজনের চেষ্টা করছে, এমনটাও হতে পারে। তারা যদি অনুমতি চায় আমরা যে অনুমতি দেব না তেমনটা না। আমরা অনুমতি দেব। ’
‘বিশৃঙ্খলা যেন না হয় সেজন্য অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন তাদের অনুমতি নিতে বলেছে। সেটা অযৌক্তিক না। তবে অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন যদি অনুমতির কথা না বলে তাদের অবহিত করার কথা বলতো সেটা ভালো হতো। কারণ অ্যাথলেটিকসকে অবহিত করলেই তারা জানতে পারতো। আসলে খেলা জিনিসটা তো নিয়ন্ত্রণ করার বিষয় না। আমার চিন্তা-ভাবনাটা এরকম। ’
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের অনুমতি নিতে বলার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারছেন না কবিরুলও। তিনি বলেন, ‘অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন অবহিত করণের কথা বললে আমরা চিন্তা-ভাবনা করতে পারতাম। জাতীয় ফেডারেশন সেই জানার অধিকারটা রাখে। অনুমোদন এবং ইনফরমেশন দুটোর মধ্যে কিন্তু একটা পার্থক্য আছে। তারা যে নিয়ন্ত্রণের দিকে যাচ্ছে আমার মনে হয়, এনএসসি এতে সমর্থন দেবে না। ’
এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রকিবের সঙ্গে। বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন তিনি। তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সহসভাপতি ফারুকুল ইসলাম অনুমতি নেওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘ম্যারাথনে দৌড়াতে গিয়ে পথে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে আমাদেরকেই সবার আগে দায় দেওয়া হবে। আমাদেরই সকল দায়িত্ব নিতে হবে। তাই ফেডারেশনকে জানতে হবে কোথায় কী হচ্ছে। ’
অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের চিঠিতে ম্যারাথনের পাশাপাশি হিল ট্র্যাকিং আয়োজনেও ফেডারেশনের অনুমতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই দাবির সঙ্গত কারণ দেখছেন না ফেডারেশনের সহ-সভাপতিও। তিনি বলেন, ‘হিল ট্র্যাকিং আমাদের দেখার বিষয় না। এটার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ’
আইমানের নোটিশের কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো দেয়নি অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন। ফলে হাইকোর্টে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আইমান বলেন, ‘আমরা আমাদের উকিল নোটিশে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন আমাদের চিঠির কোনো জবাবই দেয়নি। আমরা তাদের চিঠির আদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা কোনও কিছুই জানায়নি। আমরা তাদের বলেছিলাম তারা যদি প্রত্যাহার না করেন তাহলে আমরা হাইকোর্টে রিট করব। এখন আমরা সেই প্রস্ততি নিচ্ছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২৩
এআর/এএইচএস