ঢাকা: বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিকেএসপি’র জনবল সংকট, ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের কার্যকারিতা, খেলোয়াড়দের স্কিল ডেভলপমেন্ট প্রক্রিয়া, উৎসাহ প্রদানসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মুরতজা খান। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটির আজ থাকছে দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব।
প্রশ্ন: আমরা জেনেছি, আপনি বিকেএসপিতে যোগদানের পর নতুন অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এসব উদ্যোগ বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত জনবল এখানে আছে?
আলী মুরতজা খান: আমার এখানে যে জনবল প্রয়োজন, সেটা নেই। বিকেএসপি’তে আরও জনবল প্রয়োজন। এটা আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বিকেএসপি’র যে পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে সেখানে আমি প্রস্তাবটি তুলে ধরেছি। তারা সম্মতি দিয়েছেন। নতুন জনবল নিয়োগের ব্যাপারটি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
প্রশ্ন: নতুন জনবল নিয়োগে কেমন সময় লাগতে পারে?
আলী মুরতজা খান: অনেক নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয় এখানে। একুট সময় তো লাগবেই। তবে এ বছরের মধ্যে কিছু জনবল নিয়োগ দিতে পারবো। ইতোমধ্যে এ মাসে আমরা জনবল চেয়ে কয়েকটি বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছি।
প্রশ্ন: এখন খেলাধুলা গবেষণার পর্যায়ে চলে গেছে। ক্রীড়ার সাথে বিজ্ঞান যুক্ত হয়েছে। কোচরাই এখানে ফিটনেস ট্রেনার হিসেবে কাজ করছেন। কোচরা টেকনিক্যাল সাইড দেখার পাশাপাশি ফিটনেসের ব্যাপারটাও দেখছেন। এ দুটো’কে আলাদা করা যা কিনা?
আলী মুরতজা খান: এখানে যে প্রশিক্ষণটা হয়, সেটা কিন্ত ডেভলপমেন্ট ওরিয়েন্টেড। এটা রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড না। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কিলটাকে ডেভলপ করে আমরা ছেড়ে দেব। আমাদের টার্গেট হচ্ছে বাচ্চাদের স্কিল বাড়ানো। এখান থেকে বের হয়ে যখন তারা ক্লাবে গিয়ে মিলবে, তখন তাদের কাজ হবে রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। তাই আমরা এখন কোচ ও ফিটনেস ট্রেনার আলাদা ভাবে নিয়োগ দিতে পারছি না।
প্রশ্ন: ডেভলপমেন্টের পাশাপাশি বিকেএসপি’কে প্রতিযোগিতামূলক করার ইচ্ছা আছে কিনা?
আলী মুরতজা খান: এটা সম্ভব হবে না। আমাদের ১৭টা ডিসিপ্লিনের মধ্যে ৪টা ডিসিপ্লিনে থ্রি-ফোরের বাচ্চাদের নিয়ে থাকি। বাকিগুলো ক্লাস সেভেনের। এই বাচ্চাগুলো আমরা ইচ্ছা করলেই জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিতে পারিনা।
প্রশ্ন: বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় কি বিকেএসপি’র খেলোয়াড়রা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে?
আলী মুরতজা খান: হ্যাঁ, বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় আমরা নিয়মিত অংশ নিচ্ছি। বিকেএসপি সবসময় বয়সভিত্তিক যেমন: অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ এসব প্রতিযোগিতামূলক ধাপগুলোতে অংশ নেয়। জাতীয় ইভেন্ট যুব হকিতে ১১ বছর ধরে বিকেএসপি চ্যাম্পিয়ন।
প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার ছোঁয়া পাচ্ছে খেলোয়াড়রা। বিদেশ ট্যুরে কেমন করছে তারা?
আলী মুরতজা খান: আমরা বিদেশেও ছেলে-মেয়েদের পাঠাচ্ছি। তারা ভারত যাচ্ছে, ফিলিপাইন যাচ্ছে, জাপানে যাচ্ছে। একাডেমিক লেভেলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তারা অংশ নিচ্ছে। সেখানে ভালোই করছে তারা।
প্রশ্ন: খেলোয়াড়দের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ কিংবা তাদের মোটিভেশনের ক্ষেত্রে বিকেএসপি কি করছে?
আলী মুরতজা খান: এটা রিলেটেড টু সাইকোলজি। ছোটবেলার চেয়ে বড় হয়ে এটা আরও বেশি দরকার হয়। ক্রীড়া বিজ্ঞানের একটা অংশ হচ্ছে স্পোর্টস সাইকোলজি। শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো নিয়ে ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ রিপোর্ট করে। প্রতিমাসে একবার করে বাচ্চারা ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে যাচ্ছে। স্পোর্টস সাইকোলজির যে বিশেষজ্ঞ আছেন, তারা সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের চিফ কোচের সঙ্গে বসে আলোচনা করেন।
প্রশ্ন: অনেক সময় খেলোয়াড়রা এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর নিয়মানুবর্তিতা ও মানসিক দৃঢ়তা ধরে রাখতে পারে না। এ ব্যাপারটা নিয়ে কি বলবেন?
আলী মুরতজা খান: আমরা এখানে ডেভলপমেন্ট ট্রেনিং করিয়ে ছেড়ে দেই। পরবর্তীতে ক্লাবে গিয়ে অনেকেই সেটা ধরে রাখতে পারে না। ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয় ও শুভাগত হোম প্রথমে জাতীয় দলে যে অবস্থায় ছিল এখন কিন্তু সেই শক্ত অবস্থানে সেভাবে নেই। ওদের সাইকোলজিক্যাল কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা, এগুলো কিন্তু আর বিকেএসপি’র দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তখন সংশ্লিষ্ট ক্লাব, ফেডারেশন বা বোর্ডের দায়িত্বে তারা থাকবে।
প্রশ্ন: ২০১২ সালে বিকেএসপিতে নতুন কয়েকটি ডিসিপ্লিন চালু হয়েছে। নতুন যোগ হওয়া ডিসিপ্লিনগুলো কতটুকু এগিয়েছে?
আলী মুরতজা খান: ২০১২ সালে বিকেএসপি’তে নতুন ৫টি ডিসিপ্লিন চালু হয়। এগুলো হলো: উশু, তায়কোয়ানডো, কারাতে, টেবিল টেনিস ও ভলিবল। অন্য খেলাধুলার তুলনায় এগুলোর আধুনিকায়ন করা তেমন সম্ভব হয়নি। এটাকে আরও আধুনিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা একটা পরিকল্পনা নিয়েছি। সেটা এখন পরিকল্পনা কমিশনে আছে। আশা করছি, পরবর্তীতে এ ডিসিপ্লিনগুলোর আধুনিকায়ন করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: সিলেট বিকেএসপি নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সঙ্গে কোনো বিরোধ আছে কিনা?
আলী মুরতজা খান: আমাদের আঞ্চলিক কেন্দ্রের মধ্যে সিলেটকে মাননীয় প্রধানন্ত্রীর নির্দেশে বাফুফের কাছে ৫ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। এ কেন্দ্রটি বাফুফে এখন ফুটবল একাডেমি হিসেবে চালাচ্ছে। আগামী বছরের ডিসেম্বর মাসে তাদের মেয়াদ শেষ হবে। অনেকের ধারণা, সিলেট কেন্দ্রটি বাফুফের, আসলে তা না। সেটা লিজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আর কিছু না। স্বাভাবিক ভাবে অন্যান্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যা যা করি, সেখানেও তাই করা হবে।
** দেশসেরা খেলোয়াড়রা বিকেএসপি’র আবিষ্কার
** গতিশীল হচ্ছে বিকেএসপি’র আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
** এগিয়ে যাচ্ছে বিকেএসপি
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ১৬ অক্টোবর ২০১৫
এসকে/এমআর