বিকেএসপি থেকে ফিরে: বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৭টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে অন্যতম হকি। প্রতিবছর এখান থেকেই খেলোয়াড়রা বের হয়ে দেশের বড় বড় ক্লাবে নাম লেখান।
বিকেএসপির এমনই এক হকি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সজীব হোসেন সিফাত। পুরাণ ঢাকার ছেলে বিকেএসপির এই উদীয়মান খেলোয়াড় হকিতে তার বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলেছেন, বাংলানিউজ স্পোর্টস টিমের সঙ্গে। সিফাতের সাক্ষাতকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
প্রশ্ন: হকির শুরুটা কীভাবে হলো?
সজীব সিফাত: তখন আমি ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ি। আমার সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ছিল। বাসা পুরাণ ঢাকায়, তাই ঘুম থেকে উঠেই চলে যেতাম আরমানিটোলা মাঠে। যদিও ফুটবল, ক্রিকেট আমার পছন্দ ছিল। কিন্তু প্রতিদিন হকির অনুশীলন করতে করতে হকিতেই আমি পারদর্শী হয়ে উঠি।
প্রশ্ন: বিকেএসপির নাম জানলেন কীভাবে?
সজীব সিফাত: আরমানিটোলো মাঠে প্র্যাকটিসের সময় এলাকার এক বড়ভাই আমাকে বলেন বিকেএসপিতে ভর্তি হতে। তার কথা অনুযায়ী ক্লাস সেভেনে হকিতে পরীক্ষা দিয়ে এখানে সুযোগ পেয়ে যাই। এটা ২০১১ সালের ঘটনা।
প্রশ্ন: এখন কোন লেভেলে পড়ছেন ও কতসালে এখান থেকে বের হবেন? বের হয়ে লক্ষ্য কী থাকবে?
সজীব সিফাত: এখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছি। ২০১৭ সালে বিকেএসপি থেকে বের হব। আমি আবাহনীতে খেলতে চাই। ভাল একজন মানুষ হওয়ার পাশাপাশি আমি হকির ভাল একজন ডিফেন্ডার হতে চাই, এটাই আমার লক্ষ্য।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের হকিতে আপনার চোখে স্টার কে?
সজীব সিফাত: জিমি হক।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ হকির বর্তমান বাজে অবস্থা থেকে বের হতে হলে কী করতে হবে? হকি ক্যারিয়ারে আপনি কি হতাশ?
সজীব সিফাত: আগে খেলোয়াড়দের আগ্রহী হতে হবে। আমরা যেমন খেলি তা সন্তোষজনক নয়। তাই ফেডারেশন থেকে বা সরকারের তরফ থেকে সহায়তা পাইনা। আমি মনে করি, আগ্রহ নিয়ে খেলে আমরা যদি ভাল ফলাফল এনে দিতে পারি তাহলে ফেডারেশন ও সরকারি দুই ধরনের সহযোগিতাই পাব। তাতে হকি বর্তমান বাজে অবস্থা থেকে বের হয়ে আসবে। যদিও এদেশে হকির থেকে ক্রিকেট-ফুটবল এগিয়ে। তারপরও হকিতে ক্যারিয়ার গড়েছি বলে হতাশ নই।
প্রশ্ন: জানতেন আপনি হকি খেলোয়াড় হবেন?
সজীব সিফাত: না, আমি জানতাম না। আমি একজন হকি খেলোয়াড় হবো এবং হকিতেই আমার ক্যারিয়ার গড়ে উঠবে এভাবে কখনো ভাবিনি। বিকেএসপির মতো এত বড় ও সুন্দর জায়গায় সুযোগ পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।
প্রশ্ন: বিকেএসপিতে আপনার প্রতিদিনের রুটিন কী?
সজীব সিফাত: প্রতিদিনই সকালে উঠতে হয়। তবে, সিজনের উপর নির্ভর করে। গ্রীষ্মকাল হলে সকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৬টায় উঠি। আর শীতকালে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে উঠি। এরপর ইউনিফর্ম পড়ে মাঠে যাই। ওখানে ঘণ্টা দেড়েক অনুশীলনের পর সাড়ে ৮টায় নাস্তা করি। ক্লাসের উদ্দেশ্যে সকাল ৯টার সময় কলেজে যাই। ৯.২১ থেকে ক্লাস শুরু হয়, শেষ হয় দুপুর ১টায়। এরপর রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেই অথবা নামায পড়ি। দেড়টায় দুপুরের খাবার খেয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিশ্রাম নেই। তারপর আবার মাঠে যাই। তবে, মাঠে যাওয়াটাও সিজনের উপর নির্ভর করে। গরমের দিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা আর শীতের দিন ৩টা থেকে ৫টা। এরপর হোস্টেলে ফিরে হালকা নাস্তা খাই। সন্ধ্যায় কোচিংয়ে যাই।
প্রশ্ন: আপনাদের কোচিং সম্পর্কে কিছু বলেন।
সজীব সিফাত: কলেজের মধ্যেই কোচিং হয়। আমাদের স্যার-ম্যাডামরা সেখানে উপস্থিত থাকেন। পড়াশেষে কেউ বিশ্রাম নেয় বা নামাজ পড়ে। রাত ৯টা থেকে সোয়া ৯টা কিংবা ৯টা ২০ এর মধ্যে ডিনার শেষ করি। ডিনার শেষে যদি দেখি পরদিন সকালে অনুশীলন আছে, তাহলে ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ি। আর না থাকলে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত টিভি দেখে ঘুমিয়ে পড়ি।
প্রশ্ন: বিকেএসপির আবাসন, চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।
সজীব সিফাত: আমরা এক রুমে চারজন করে থাকি। কোনো সমস্যা হয়না। অসুস্থ হলে বিকেএসপির নিজস্ব চিকিৎসক আছেন। তারা অনেক ভালো মানের চিকিৎসক। তাদের চিকিৎসা নিতে আমাদের আলাদা কোনো টাকা-পয়সা লাগেনা।
প্রশ্ন: বিকেএসপিতে পড়ছেন, তো এই শিক্ষানবীশ অবস্থায় আপনারা কোন প্রফেশনাল লিগ খেলতে পারেন?
সজীব সিফাত: হ্যাঁ পারি, তবে বিকেএসপির অনুমতি নিতে হয়। এ পর্যন্ত আমি ফার্স্ট ডিভিশন ও প্রিমিয়ার লিগ খেলেছি। আজাদ স্পোর্টিংয়ের হয়ে খেলেছি।
প্রশ্ন: সবশেষে আমাদের দেশের হকির ভবিষ্যত সম্পর্কে কী বললেন?
সজীব সিফাত: আমরা যারা এ পেশায় আছি, তারা শতভাগ পেশাদার হলে আমার মনে হয় হকি সামনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তা না হলে দিন যত যাবে, ততই হকির অবস্থা আরও খারাপ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘন্টা, ১৮ অক্টোবর ২০১৫
এইচএল/এমআর
** মায়ের অনুপ্রেরণায় বিকেএসপিতে সাইফ
** বিকেএসপি’তে আরও জনবল প্রয়োজন
** দেশসেরা খেলোয়াড়রা বিকেএসপি’র আবিষ্কার
** গতিশীল হচ্ছে বিকেএসপি’র আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
** এগিয়ে যাচ্ছে বিকেএসপি