ঢাকা: ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইজ দ্য লাস্ট ইম্প্রেশন। ’ এ কথাটি যেন হুবহু মিলে গেল রাজধানীর মুগদার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের ক্ষেত্রে।
সেদিন সকাল সাড়ে ১১টা। সরেজমিনে স্টেডিয়াম পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেল, মূল ফটকের ১ নং ভিআইপি গেট সংলগ্ন একেবারে সামনের জায়গাটি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তার ঠিক উল্টো পাশেই মধ্যবয়সী এক নারী চা দোকান নিয়ে বসেছেন।
সেখানে দাঁড়িয়ে ডানে ও বায়ে চোখ ঘোরাতেই দেখা গেল, স্টেডিয়ামের নিচ তলায় তিন চাকার অটোরিকশা, পার্টস, টায়ার, অটোরিকশার যন্ত্রাংশের হোল সেলের সারি সারি দোকান।
প্রধান ফটকে ঢুকেই প্রসাশনিক ভবনের নিচে বাঁ দিকে কিছুদূর এগিয়ে যেতে চোখে পড়লো, পয়ঃনিষ্কাশন পথ ভেঙে ভবনের মল-মূত্র বেরিয়ে এসে পড়ছে বাইরে!
মলমূত্র যেখানে এসে গড়িয়ে পড়ছে ঠিক তার সঙ্গেই দেখা মিলল একটি ভ্যান গ্যারেজের। ভাঙা আধো ভাঙা বেশ কয়েকটি ভ্যান রাখা হয়েছে প্রশাসনিক ভবনের নিচের গ্যারেজটিতে। সেই গ্যারেজে বসেই ২২-২৪ বছরের কয়েকজন যুবক মাদক সেবন করছেন।
আরও পশ্চিম দিকে যেতে রিকশার গ্যারেজ, মুচির দোকান, চায়ের দোকানসহ কিছু কিছু অস্থায়ী দোকানও দৃষ্টিগোচর হল।
এবার প্রশাসনিক ভবন ও স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢোকার পালা। স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় তলায় প্রসাশক জাহাঙ্গীর আলমের কক্ষ। প্রথমে অবশ্য প্রশাসকের কক্ষে না ঢুকে প্রেস বক্সে নজর গেল। তৃতীয় তলায় অবস্থিত প্রেস বক্সটি দেখলে মনে হবে যেন একটি গোশালা। গণমাধ্যম কর্মীদের বসার জায়গা নেই। অপরিচ্ছন্ন মেঝের দু’পাশে দু’টি মশারি পড়ে আছে। ওয়াই-ফাই তো অনেক দূরের কথা, বক্সের চারটি ফ্যানের মধ্যে দু’টিকেই বিকল থাকতে দেখা যায়।
প্রেস বক্সে ঘুরে দেখার সময় একজন এগিয়ে আসেন। নাম আবুল বাশার। স্টেডিয়ামের কমান্ডার। কমান্ডারের কাছে প্রশ্ন- প্রেস বক্সের অবস্থা এমন কেন? বললেন, ‘এখন কোনো খেলা নেই, তাই এমন। খেলা শুরু হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। ’
এবার দোতলায় নেমে পশ্চিম দিকের টয়লেটে ঢুঁ। সেখানে তিনটি বেসিন। এর একটি ভেঙে-চূরে একেবারেই অকেজো হয়ে আছে। বাকি দু’টির একটির ট্যাপ দিয়ে পানি পড়লেও অন্যটির পানি পড়ে না বললেই চলে। টয়লেটে তেলাপোকাসহ অন্যান্য পোকামাকড় যেভাবে ঘোরাঘুরি করছে, তাতে মনে হল এখানে বোধ হয় মানুষই আসে না।
প্লেয়ার্স ড্রেসিংরুমে দেখতে চাইলেও তা বন্ধ থাকায় আর হয়ে উঠেনি। তাই সেখান থেকে একবারে নিচের তলায় রেফারিদের টয়লেট পরিদর্শনে পা বাড়লো। সেখানে চোখে পড়লো, টয়লেটের ফ্লোরে শ্যাওলা জমে আছে। ওপর তলার টয়লেট থেকে ক্রমাগত ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ছে। দু’টো বেসিনের একটি বিকল আর একটি কোনো রকম সচল।
টয়লেটের এই বেহাল দশা কেন? সহকারী বললেন, ‘দুই তিন দিন আগে ইঞ্জিনিয়ার এসেছিল। আমরা সব কিছুই দেখিয়েছি। খুব শিগগির সব ঠিক হয়ে যাবে। ’
স্টেডিয়ামের নতুন টার্ফটি গত ২৭ নভেম্বর বসানো হয়েছে। তাই মাঠ খানিকটা চকচক করছে বলাই যায়। মোটামুটি সন্তোষজনক দেখা গেল প্রায় ১৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়ামের গ্যালারিগুলোও।
স্টেডিয়ামের অবস্থা সম্পর্কে সহকারী প্রশাসক মাহমুদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘স্টেডিয়ামের সীমানার ভেতরে যেসব অসামাজিক কার্যকলাপ হয়, তা নিয়ে আমরা মুগদা থানায় অভিযোগ করেছি। পুলিশ এলে তারা কিছু সময়ের জন্য চলে গেলেও আবার ফিরে আসে। ’
বিভিন্ন বিষয়ে আলাপের পর স্টেডিয়ামের প্রশাসক জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, ৮ ডিসেম্বর থেকে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের খেলা। ভিআইপিসহ অন্যান্য গ্যালারিগুলো নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।
তিনি জানান, স্টেডিয়ামের কমেন্ট্রি বক্স আপাতত না থাকলেও তা স্থাপন প্রক্রিয়াধীন। রাতে খেলা চালানোর জন্য স্টেডিয়ামে চারটি ফ্লাড লাইট আছে। তবে, এর মধ্যে কোনো কোনোটির লাইট জ্বলে না।
২০০৩ সালের ৭ আগস্ট স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন হয়েছিল। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির ফুটবল লিগের উদ্দেশ্যে স্টেডিয়ামটি প্রতিষ্ঠিত হলেও ফুটবলের স্বার্থে তা কখনও কখনও তা জাতীয় ও মিনি আন্তর্জাতিক আয়োজনেও প্রয়োজন পড়ে।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৫
এইচএল/এইচএ/