ঢাকা: রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডা এলাকায় একতলা একটি বিবর্ণ ভবন। কোনো জৌলুস নেই, নেই কোনো প্রাণের ছোঁয়া।
![](files/December2015/December09/Picture_1_897680556.jpg)
জাগরণী সংসদের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল ১০-১২ বছরের ছেলেদের ২০ জনের গ্রুপকে দুই সারিতে দাঁড় করিয়ে তাদের কোচ সকাল বেলার তালিম দিচ্ছেন।
হেঁটে আর একটু ভেতরে ঢুকতেই সারি সারি কয়েকটি তালা মারা টিনশেড দেওয়ালের কক্ষ চোখে পড়লো। বুঝতে দেরি হল না যে এই কক্ষেই ক্যাম্প শুরু হলে ক্লাবের খেলোয়াড়রা থাকেন এবং কক্ষগুলোর সম্মুখে অবস্থিত বালি ও আলগা মাটির ছোট মাঠটিতে খেলোয়াড়রা তাদের গা গরম করেন।
এর পর কয়েক পা পশ্চিমে এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল ক্লাব কর্মকর্তাদের অফিস। অফিসে ঢুকতেই বাঁদিকের প্রথমেই ক্লাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বসার কক্ষ। সেগুলোও কেমন পুরনো হয়ে গেছে।
যাই হোক সেই কক্ষে দাঁড়িয়ে ক্লাব কর্মকর্তাদের খোঁজ করতেই মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান সাচ্চা নামে এক ব্যক্তি বেরিয়ে এলেন। পরিচয় দিলেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তিনি।
![](files/Picture_2_327225636.jpg)
ক্লাবের কী অবস্থা? জিজ্ঞেস করতেই বললেন, এইতো যেমন দেখছেন তেমনই। আর্থিক দৈন্যতা ক্লাবটিকে এক রকম বিপাকেই ফেলে দিয়েছে। দৈন্যতার ফলে আমরা এই মৌসুমে দল বদলে পর্যন্ত অংশ নিতে পারিনি। দলবদল করতে গেলে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। এমনকি টাকার অভাবে চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগেও খেলতে পারছি না। অথচ আমাদের এই ক্লাবই এক সময় দেশের প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপের মতো বড় বড় টুর্নামেন্ট দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এই আমরাই জিয়া গোল্ড কাপের চ্যাম্পিয়ন। দেশের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও আমাদের অর্জন কম নয়। ১৯৯৯ সালে পশ্চিম বঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুরে স্বাধীনতা গোল্ড কাপে অংশ নেয় আমাদের ক্লাব। ২০০০ সালে ভারতের আইএফএ শিল্ডকাপে সেমিফাইনালে খেলেছি। ২০০৩ সালে আসাম গোল্ড কাপ এবং ২০০৭ সালে সিকিম গোল্ড কাপে খেলেছে আমাদের ক্লাব।
![](files/December2015/December09/Picture_4_533451396.jpg)
এত সাফল্যমণ্ডিত যে ক্লাবের অতীত তার আর্থিক অবস্থা এতটা করুণ কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সাধারণ সম্পাদক বলেন, বর্তমানে আমাদের কোনো স্পন্সর নেই। আগে যেখানে নিপ্পন, নিটল-নিলয় এবং নির্মাণ’র মতো কোম্পানিগুলো আমাদের স্পন্সর করতো সেখানে বর্তমানে আমাদের কোনো স্পন্সর নেই। তাছাড়া ফুটবল ফেডারেশনও কোনো ফান্ড দিচ্ছে না। আগে প্রতি মৌসুমেই দল বদলের সময় ফেডারেশন কিছু টাকা দিত এখন তারও কোনো বালাই নেই। ফলে এখন প্রিমিয়ার লিগ বা ফেডারেশন কাপে আমরা অংশ নিতে পারছি না তাই ‘বি’ লিগের দ্বিতীয় স্তর অর্থাৎ প্রিমিয়ার লিগের নিচের লিগের ম্যাচগুলো খেলেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। আর এই পর্যায়ে খেলা কোনো ক্লাবকে কেউই সহজে স্পন্সর করতে চায় না।
এক সময়ের প্রিমিয়ার লিগ খেলা ক্লাবটি দ্বিতীয় স্তরের লিগ খেলছে, মানে অবনমন হয়েছে। কবে হলো, কীভাবে?
![](files/December2015/December09/Picture_5_147072205.jpg)
‘বিষয়টি রাজনৈতিক। ২০০৩ সালে খালেদা জিয়া সরকারের সময় বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক গোলরক্ষক আবু সাইদ কানন যিনি এক সময় এই ক্লাবে খেলতেন তিনি তখন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক। আগে থেকেই তিনি এই ক্লাবের সম্পাদক হওয়ার চেস্টা করে আসছিলেন। স্বাভাবিক নিয়মে না পেরে তখন তিনি জোর করে ক্লাব দখল করে আহ্বায়ক হন। তার পর থেকেই ক্লাবটি অবনমনে যায়’- বলছিলেন জাগরণী সংসদের সাধারণ সম্পাদক।
ক্লাবটির অবকাঠামো সম্পর্কে জানতে চাইলে সাচ্চা জানান, ক্লাবটির খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের জন্য কোনো মাঠ নেই। কাজ চালানোর জন্য ভাড়ায় বিজি প্রেসের মাঠ অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যবহার করছি। আমাদের স্থায়ী কোনো কোচ নেই। তবে লিগ শুরু হলে কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
এমজেএফ