ঢাকা: আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভারতের কেরালায় বসছে সাফ ফুটবলের ১১তম আসর। আসন্ন সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) দল ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দেয়া সময় অনুযায়ী সাফ ফুটবলের লক্ষ্যে ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার আগে শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় মামুনুলদের সংবাদ সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হল বেলা আড়াইটায়! প্রায় আড়াই ঘণ্টা দেরির কারণ হিসেবে জানা যায়, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ এবং অধিনায়ক অনুশীলন ক্যাম্প বিকেএসপি থেকে আসতে সময় নিচ্ছেন।
সে অনুযায়ী কোচ-অধিনায়কের জন্য অপেক্ষার পর তারা এসে যোগ দেন সংবাদ সম্মেলনে। আর সংবাদ সম্মেলনে এসে দেরির জন্য ক্ষমা চেয়ে কোচ মারুফুল হক শুরু করেন নিজেদের প্রস্তুতির বর্ণনা, ‘২০ দিন আগে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলাম আমরা চ্যাম্পিয়ন হবার জন্যই সাফে যাচ্ছি। ’
সাফের প্রস্তুতি সম্পর্কে তার কাছে জানতে চাইলে এটাই ছিল তার প্রথম কথা। সাফের মতো হাইভোল্টেজ টুর্নামেন্টে এমন উচ্চাকাঙ্খার কারণ জানতে চাইলে তিনি ব্যাখ্যা দেন এভাবে, ‘সাফে চ্যাম্পিয়ন হবার লক্ষ্য অর্জন করতে আমরা ১৮ দিন বিকেএসপিতে ৩৬টি প্রস্তুতি সেশনে অংশ নিয়েছি। সেখানে ছেলেদের প্রস্তুতি থেকে আমি দেখেছি কার কোথায় সমস্যা আছে। তা সঠিকভাবে নিরুপণ করে সে অনুযায়ী কাজও করেছি। ফলে সবার প্রস্তুতিই বেশ ভাল হয়েছে বলেই আশা করা যায়। আর প্রস্তুতিতে আমি যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি সেটি হলো, তাদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতি। আশার কথা হলো, মাঠের প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির পাশাপাশি তাদের এই দু’বিভাগের প্রস্তুতিটাও বেশ ভাল হয়েছে। তাছাড়া গেল ১৭ ডিসেম্বর নেপালের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও আমি দেখেছি, যে কার কী ভুল আছে। গেল দুদিন তাদের সেই ভুল গুলো নিয়ে কাজ করেছি আর আমি নিশ্চিত যে, সাফে সেই ভুলগুলোর পুরাবৃত্তি ঘটবেনা। ’
গুরুর সাথে সুর মেলালেন শিষ্য মামুনুল ইসলামও। সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে তারাও গুরুকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রস্তুতি ক্যাম্পে নিজেদের শারীরিক ও মানসিক উন্নতিতেও বেশ ভাল সময়ই দিয়েছেন। এবার পালা মূল টুর্নামেন্টের। যেখানে শৃঙ্খলা মেনে প্রতিটি ম্যাচেই নিজেদের সেরা খেলাটি খেলে সাফ শিরোপা ঘরে তুলতে চায় লাল-সবুজরা।
সাফের গ্রুপপর্বের খেলায় ‘বি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, মালদ্বীপ ও ভুটান। ২৪ ডিসেম্বর মামুনুলদের প্রথম ম্যাচ গেলবারের চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এই ম্যাচটি জিতেতে পারলেই সেমিফাইনালের পথ অনেকটাই প্রশস্ত হবে তাই জয়টি শুরু দিয়েই করতে চাইছেন কোচ মারুফুল হক, ‘ফার্স্ট ম্যাচ উইন দ্যাট মিনস চ্যাম্পিয়নশিপ ইজ হাফ ডান। আফগানরা গতবারের চ্যাম্পিয়ন। তারা শক্তিশালী দল। তবে, তাদের বিপক্ষে জয় দিয়েই শুরুটা ভাল করতে চাই। ’
সুখের খবর হলো, সাফে খেলতে যাবার আগে দলে তেমন কোন সমস্যাই দেখছেন না কোচ মারুফুল হক। তার পরেও ১৮ দিন প্রশিক্ষণের পর একটি সমস্যা তার চোখে পড়েছে। আর সেটি হল, শিষ্যদের মানসিকতা। মানসিক দিক দিয়ে যদি তারা শক্তিশালী হন, তা হলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া অসম্ভব হবেনা বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও আরও যে বিষয়গুলো এবারের সাফ চ্যাম্পিয়ন হবার রসদ যোগাচ্ছে সেগুলো হল; দলের সার্বিক প্রস্তুতি, শিষ্যদের ইতিবাচক মানসিকতা ও উপমহাদশের অভিন্ন কন্ডিশন।
এদিকে গেল সাফে গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে নেপালকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুরুটা ভাল করলেও শেষ দুই ম্যাচে সেরা একাদশের তিন-চারজন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়লে দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে ১-১ এ ড্র করে। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়। তবে, এবারের আসরে সেই সসম্যার পুনরাবৃত্তি না হলে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সেরা ১১ জনকে নিয়েই নিশ্চিত করতে চান নকআউট পর্বের খেলা। আর নকআউট পর্ব নিশ্চিত করতে সতীর্থদের এরই মধ্যে একটি বার্তা দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। সেটি হল, রক্ষণাত্মক না খেলে আক্রমণাত্মক খেললে তাহলেই নাকি জয়ের সম্ভাবনা থাকবে।
আরেকটি বিষয় মামুনুলদের সাফে চ্যাম্পিয়ন হবার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে আর সেটি হলো, এবারের সাফের আগে একেবারেই ক্লান্ত নন বাংলাদেশ দলের সদস্যরা, আছেনও বেশ ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে। আর এই দুয়ের সমন্বয়েই এবারের সাফে চ্যাম্পিয়ন হবার স্বপ্ন দেখছেন কোচ ও তার শিষ্য।
সাফে ২৪ ডিসেম্বর গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে ২৬ তারিখ মালদ্বীপের বিপক্ষে আর ২৮ ডিসেম্বর গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ভুটানের মুখামুখি হবে মারুফুল হকের শিষ্যরা।
সাফ ফুটবলে অংশ নিতে রোববার (২০ ডিসেম্বর ) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে জেট এয়ারওয়েজ যোগে ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫
এইচএল/এমআর