ব্রাজিলের কথা উচ্চারণ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাম্বা নৃত্য। সাম্বার নাম শোনেননি বা এর নাচের ধরণ কী তা জানেন না এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে।
এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের স্বাগতিক দেশ ব্রাজিল। তাই মাঠে ফুটবলারদের আগুন ঝরানো খেলার পাশাপাশি সবার নজর থাকছে সাম্বা নৃত্যশিল্পীদের দিকে। সাও পাওলোর নিউ করিন্থিয়ানস স্টেডিয়ামে ১২ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীতের তালে তালে ঝড় তুলেছিলেন সাম্বা নৃত্যের শিল্পীরাও।
সাম্বা নৃত্যের ইতিহাস শত বছরের পুরনো। আরবি শব্দ জুম্বা বা জাম্বা থেকে সাম্বা শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আবার আফ্রিকান ভাষা থেকেও এর উৎপত্তি হতে পারে। যেখানে স্যাম অর্থ দাও বা অর্থ গ্রহণ করো।
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে দ্বৈত সাম্বা নৃত্য শহরাভিমমুখী অগ্রসর হয়। সাম্বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বার্ষিক উৎসবে যোগদানের জন্য প্রতি বছর পাঁচ হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ১৯১৭ সালে পেলো টেলিফোনে রেকর্ড করে যা প্রথম সত্যিকারের সাম্বা নামে পরিচিতি পায়। এই ধরনের নাচের সময় ঐতিহ্যবাহী সাজে বিকিনি পরা মেয়েরা শহর প্রদক্ষিণ করে।
১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে আর্ন্তজাতিকভাবে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ষাটের দশকে নতুন, কিঞ্চিৎ জ্যাজ টাইপের বসা নোভা সংগীতের সুর, স্বর, ছন্দ ব্রাজিলে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
ব্রাজিলের রিও কার্নিভাল বা আনন্দ পদযাত্রা সম্পর্কে অনেকেই জানে। ঐতিহ্যবাহী সাজে বিকিনি পরা মেয়েরা এদিন সাম্বা নাচে শহর প্রদক্ষিণ করেন। তবে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এবারের কার্নিভাল উৎসবকে সাজানো হয়েছে ভিন্ন মাত্রায়। এবারের কার্নিভালের ভিআইপি অতিথির আসনে সাবেক ইংলিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহ্যামকে দেখা গেছে।
বিভিন্ন উৎসবে এই নাচের প্রচলনের পাশাপাশি ব্রাজিলিয়ান ফুটবলেও এর প্রভাব অনেক বেশি। তাই ভাষাগত দূরত্ব থাকা সত্তে¡ও ইউরোপ এবং জাপানের মানুষ মুগ্ধ হয়েছে সাম্বা নাচে। ব্রাজিলে বিভিন্ন ধরণের সাম্বা নাচের প্রচলন রয়েছে। বাংলানিউজ পাঠকদের জন্য কয়েকটি সাম্বা নৃত্যের টুকিটাকি।
সাম্বা অঙ্গি
নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণে এটি একক নৃত্য। প্রতি বছর ব্রাজিলে এই নাচের উৎসব জমে ওঠে। কিছুটা লাম্বাডা নাচের মতো এর শুরুটা ১৯৯২ সালে। শুরুর কয়েক বছরের মাথায় ছুটির দিনগুলোতে এই নাচ ব্যাপক জনপ্রিয হয়ে ওঠে উত্তর-পশ্চিম ব্রাজিলে। এটি মূলত কোরিওগ্রাফিভিত্তিক নাচ।
সাম্বা নো পায়ে
এ ধরনের নাচ করতে গেলে খুব হালকা পোশাকে আবৃত হয় নারী-পুরুষ। তালে তালে চলে একক নৃত্য। শরীর সোজা রেখে সাম্বা গানের তালে তালে পা ফেলতে হয়। সামনে এক পা আবার হিসাব কষে পেছনে এক পা থাকে। কোমরের ঝাঁকুনি হয় সমান। এই নাচে পুরুষের মুখোমুখি থেকে নারীরা অংশ নেয়। নাচের মধ্যেই নারীরা কখনও কখনও পুরুষের কোলে হেলে পড়ে।
সাম্বা ডি গ্যাফিএইরা
গ্যাফিএইরা নাইট ক্লাবে ১৯৪০ সালে এই সাম্বা নাচের জন্ম। মূলধারার সাম্বা নাচ আন্তর্জাতিক বলরুম সাম্বা থেকে কিছুটা ব্যতিক্রমী বটে। আর্জেন্টিনা ট্যাঙ্গোর মতো সামনের পা উঠিয়ে গানের তালে নাচতে হয়। আগে-পরে হিসাব করে পা সমানতালে ফেলতে হয়।
সাম্বা প্যাগোডি
সাও পাউলা শহরে এই নাচের আবির্ভাব। এখানে নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলাটাই মুখ্য। অন্য নাচের তুলনায় এখানে নারীকে মনে হবে অনেকটাই আবেদনময়ী। কোমরের ভাঁজে ভাঁজে এই নাচে ফুটে ওঠে শিল্পকলা।
সাম্বা রিগাই
বহুগোত্রীয় নারীদের নিয়ে ব্রাজিলে প্রতি বছর সাম্বা ড্রামের তালে তালে জমে ওঠে এই নৃত্য। ড্যানিয়েলা মার্কারি নামের এক জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীর গানের সঙ্গে এই নাচ চলে। ব্রাজিলে শুধু এই নাচের জন্যই নারীদের মুখে মুখে প্রায়ই শোনা যায় কয়েকটি গান। সেগুলো হলো, ‘সল দ্য লিবারদাদ্রি’, ‘ও রিগাগি ইও মার’ অথবা ‘পেরলা নেগরার’।
সাম্বা রক
লাতিন নাইটক্লাবগুলোতে তুমুল জনপ্রিয় এই নৃত্য। কিউবার সালসা নাচের মতো এতে আরও কয়েকটি নাচের প্রভাব রয়েছে। যেমন সাম্বা ডি গ্যাফিএইরা, ফাররু, জাউক লামবাডা। এই নাচের জন্য রক গান ব্যবহার করা হয়। দর্শকমাত্রই যে কারও দেহ উন্মাতাল করে দেয় এই নাচ।
সাম্বা ডি রোডা
এটি নারী-পুরুষের যুগল নৃত্য। ঐতিহ্যগতভাবে অ্যাফ্রো-ব্রাজিলিয়ান নাচ এটি। দীর্ঘদিন ধরে বহু বর্ণিল সংস্কৃতিময় এসব অঞ্চলে চর্চা হয়ে আসছিল। এর মডেলরা নাচের তালে তালে নিজেরাই গান গাইতে থাকে। দর্শকরা নাচ দেখে তাদের সঙ্গে সঙ্গে সুর মিলিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৪০ ষণ্টা, ১৮ জুন, ২০১৪