প্রেম, মারামারি, পারিবারিক নাটকীয়তা, অপরাধজগত ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি হলিউড খেলাধূলায়ও মেতে থাকে। অন্য সব খেলার চেয়ে ফুটবলপ্রেমী নির্মাতাই পশ্চিমে বেশি।
এস্কেপ টু ভিক্টোরি (১৯৮১)
জন হাস্টনের পরিচালনায় এ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন স্যার মাইকেল কেইন. সিলভেস্টার স্ট্যালোন, ম্যাক্স ভন সাইডো এবং ড্যানিয়েল মেসি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসী বর্বরতার বিরোধী একটি গোত্রকে কারাবন্দি করা হয়। কয়েদখানায় নাৎসী সৈনদের বিপক্ষে তারা একটি ফুটবল ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। খেলায় জিতলেই কয়েদিদের নিঃশর্ত মুক্তি মিলবে। পুরো ছবিটি এই ম্যাচকে ঘিরেই সাজানো। ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে ও ববি মুর অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেছেন এ ছবিতে।
অফসাইড (২০০৬)
যাদের হাত ধরে ইরানি ছবি বিশ্ব দরবারে সমীহ পেয়েছে, তাদের মধ্যে জাফর পানাহি অন্যতম। অথচ তিনিই কি-না এখন নিজ দেশেই গৃহবন্দি। তবে ছবিগুলোতে ইরানের সমাজব্যবস্থার নানা গোড়ামি উঠে এসেছে বরাবরই। এ কারণেই চারদেয়ালে আটকে থাকার দন্ড বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। এই যেমন তার বিখ্যাত ছবি ‘অফসাইড’ তৈরি হয়েছে মেয়েদের ফুটবল খেলাকে ঘিরে। ইরানে হিজাব ছাড়া মেয়েদের ঘোরাফেরা বেআইনি। সে দেশে খেলাধূলার স্টেডিয়ামে মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। অথচ পানাহি ছবিটির মাধ্যমে ইরানি মেয়েদের মধ্যে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছেন। গল্পে ওই মেয়েরা বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগ পেতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। এটা আসলে পানাহির নিজের মেয়ের জীবনের সত্যি গল্প। তার মেয়ে ফুটবল খেলতে আগ্রহী ছিল। ইরানে ছবিটির চিত্রায়ন হলেও সেখানে ছবিটির প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা হয়। ‘অফসাইড’-এর হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গল্প আর নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করেছে সারা দুনিয়াকে। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে এটি রৌপ্যভল্লুক জিতেছিল।
ফিভার পিচ (১৯৯৭)
ইউরোপে ফুটবল ক্লাবগুলোর কর্মকান্ড ও এর প্রতি ভালোবাসা কেমন থাকে তার কিছু চিত্র চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে এ ছবিতে। সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রেম। সত্যি একটি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে সাজানো হয়েছে ছবিটির গল্প। শোবার ঘর থেকে স্টেডিয়াম, সবখানেই ফুটবল এক জ্বরের নাম। তাই পরিচালক ডেভিড ইভান্স তার এ ছবির নাম রেখেছেন ‘ফিভার পিচ’। এতে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী ব্রিটিশ অভিনেতা কলিন ফার্থ, মার্ক স্ট্রং, নেইল পিয়ারসন, রুথ জেমেল, লরেইন অ্যাশবুর্ন, হলি এয়ার্ড, স্টিফেন রিয়া প্রমুখ। ২০০৫ সালে ছবিটি আবার রিমেক করা হয় একই নামে।
শাওলিন সকার (২০০১)
হংকংয়ের এই হাস্যরসধর্মী ছবিটি পরিচালনা করেছেন স্টিফেন চৌ। তিনি অভিনয়ও করেছেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। ফুটবল খেলায় কুংফুর ব্যবহার কতটা কার্যকরী হতে পারে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে এতে। এখানে অভিনব স্টাইলে ফুটবল খেলাকে উপস্থাপন করেছেন নির্মাতা। সারা ছবিতে হাসির উপাদানের ছড়াছড়ি থাকলেও খুবই মানবিক একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে এতে।
বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যাম (২০০২)
ফুটবলে অন্যরকম এক দক্ষতা হলো ফ্রি কিক থেকে গোল করা। সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষেত্রে অনেকেই দক্ষ। একসময ফ্রি কিকে জাদু দেখাতেন ডেভিড বেকহ্যাম। তার এই দক্ষতায় অনুপ্রাণিত হয়ে গুরিন্ডার চাড্ডা পরিচালনা করেন ‘বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যাম[’ ছবিটি। এর কাহিনী অষ্টাদশী এক পাঞ্জাবী শিখ মেয়েকে ঘিরে। লন্ডনপ্রবাসী মেয়েটির স্বপ্ন ফুটবলার হওয়া। কিন্তু পরিবার ও সামাজিকতা তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে সে স্থানীয় ফুটবল দলে যোগ দেয়। এভাবেই এগোতে থাকে কাহিনী। ২০০৩ সালে ছবিটি বেস্ট স্পোর্টস মুভি অ্যাওয়ার্ড এবং সিডনি চলচ্চিত্র উৎসবসহ বেশকিছু পুরস্কার পায়।
ফুটবলারদের নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
জান্নাতুল জিনতা
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বিশ্বের খ্যাতিমান ফুটবলারদের নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু প্রামাণ্যচিত্র। এগুলোর সুবাদে খেলাটির বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির নানা দিক বোঝা যায়। তেমনই কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্রের কথা জানা যাক এবার।
দ্য আদার ফাইনাল (২০০৩)
যেসব দেশ ফুটবল খেলে তাদের মধ্যে র্যাংকিংয়ে সবচেয়ে নিচের দুটি দল ভ‚টান ও মন্টসেরাতের পথচলাকে ঘিরেই এটি সাজানো হয়েছে। দুটি দল র্যাংকিয়ের উন্নতির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
ডেয়ার টু ড্রিম (২০০৫)
অ্যাথেন্স অলিম্পিকসে স্বর্ণজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দলের উত্থানকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এটি।
জিদান (২০০৬)
টিভিতে খেলা দেখানোর সময় আলাদাভাবে একজন ফুটবলারকে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এই প্রামাণ্যচিত্রের পুরোটা জুড়েই জিনেদিন জিদান ও তার গৌরবময় পথচলার কথা বলা হয়েছে।
ম্যারাডোনা বাই কুস্টুরিকা (২০০৮)
বিশ্বের অনেকের মতো আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনার অন্ধভক্ত বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এমির কুস্টুরিকা। এই প্রামাণ্যচিত্র দেখলে দর্শকের সেকথাই মনে হবে।
দ্য টু এস্কোবারস (২০১০)
এস্কোবার নামের দুই বিখ্যাত ব্যক্তির খুনের ঘটনার সম্পর্ক নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রামাণ্যচিত্র। একজন ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোল করার পর আততায়ীর হাতে নিহত আন্ড্রেস এস্কোবার। অন্যজন মাফিয়া লর্ড পাবলো এস্কোবার।
নেক্সট গোল উইনস (২০১৪)
৩১-০ গোলে জয়লাভের বিশ্বরেকর্ড এখন অস্ট্রেলিয়ার কাছে। তবুও আমেরিকান সামোয়া তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ও ভালো খেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে জয়লাভের জন্য দলের নাম নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময় : ১৯২১ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৪