দরাজ কণ্ঠ, প্রতিবাদী মনোভাব, সুদর্শন ব্যক্তিত্ব; সব মিলিয়ে আসিফ আকবর দেশীয় সংগীতাঙ্গনে এক অন্যরকম অধ্যায়। ২০০১ সালে সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে প্রথম বলেই [পড়ূন অ্যালবাম] ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন আসিফ আকবর।
নিজের প্রতিষ্ঠান আর্ব এন্টারটেইনমেন্ট থেকে প্রকাশিত ‘এক্স প্রেম’ অ্যালবামের মাধ্যমে সেকেন্ড ইনিংস শুরু করেন আসিফ। তার ৩০তম একক অ্যালবাম ‘জান রে’র গানগুলো একে একে অনলাইনে প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী।
বাংলানিউজ : আপনি একসময় ফেসবুকবিরোধী ছিলেন। কিন্তু এখন আপনি সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে বেশ সক্রিয়। এই পরিবর্তন কীভাবে হলো?
আসিফ আকবর : এটা ঠিক একসময় আমি ফেসবুক ঘৃণা করতাম। এখন সেই ফেসবুকই ভক্ত ও শ্রোতাদের কাছে আমাকে নিয়ে এসেছে। ভক্তদের অবিরাম ভালোবাসা পেয়ে আমি খুব গর্বিত। ফেসবুক ব্যবহার করে মজা পেয়েছি। সবকিছু ঘেঁটে দেখলাম এটা শ্রোতাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ভালো মাধ্যম। তাছাড়া যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সবাইকেই চলতে হবে।
বাংলানিউজ : এবার আপনার ‘জান রে’ অ্যালবামের কথা শুনি।
আসিফ : এটি আমার ৩০তম একক অ্যালবাম। এর গানগুলো অনলাইনে প্রকাশ করে ভালো সাড়া পাচ্ছি। প্রথম ছয়টি গান থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপরে রয়্যালটি এসেছে। এগুলোর শিরোনাম ‘মস্ত বড় ভুল’, ‘নূরজাহান’, ‘জান রে’, ‘দস্যি ছেলে’, ‘নেশা’ ও ‘ভুলে থাক পোড়ামন’। এরপর ‘আড্ডা’ এবং ‘শুরু থেকে’ শিরোনামের আরও দুটি গান ছেড়েছি। আরও চার-পাঁচটি গান বের হবে কয়েকদিনের মধ্যে। ডিসেম্বরে প্রথম সপ্তাহে গানগুলো অ্যালবাম আকারে বাজারজাত করবে সাউন্ডটেক। ‘জানরে’ অ্যালবামের গান লিখেছেন মেজর আনিসুল ইসলাম (অবঃ), প্রদীপ সাহা, রাসেল আশিকী, বাকীউল আলম, শহীদুল্লাহ ফরায়জী, রাজীব আহমেদ ও মারুফ রসূল। সুর ও সঙ্গীতায়োজনে লাকী আখন্দ, নাজির মাহমুদ, উজ্জ্বল সিনহা, রানা, বিনোদ রায়, রবিন, নিসান প্রিন্স।
বাংলানিউজ : রয়্যালটি তাহলে পাওয়া যাচ্ছে?
আসিফ : কেনো যাবে না? তবে রয়্যালিটির ব্যাপারে সচেতনতার বিকল্প নেই। শুধু আমার গান না, শ্রোতাদেরকে সবার গানই সিডি কিনে শুনতে হবে। অবৈধ ডাউনলোড থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যে দেশে ইউটিউব ও ফেসবুক এক মিনিটে বন্ধ হয়, সেখানে অবৈধভাবে গান সরবরাহ করা ওয়েবসাইটগুলো কেন বন্ধ হয় না বুঝি না। এ ক্ষেত্রে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রোতাদেরও সচেতন হতে হবে।
বাংলানিউজ : নতুন মিউজিক ভিডিওগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই ভালো সাড়া পাচ্ছেন?
আসিফ : হ্যাঁ, তিনটি নতুন গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছি। এগুলো হলো ‘জান রে’ অ্যালবামের ‘জান রে’ ও ‘আকাশের চাঁদ তুমি’ এবং ‘এক্স প্রেম’ অ্যালবামের ‘প্রতিশোধ’। ভিডিওর নির্দেশনা দিয়েছেন ইয়ামিন এলান। কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে এর দৃশ্যধারণ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ১০ বছর পর আবার আবার গানের মিউজিক ভিডিও তৈরি হলো। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ‘উড়ো মেঘ’ গানের ভিডিও নির্মাণ করেছিলাম। নতুন ভিডিওগুলো অনলাইনে দর্শক-শ্রোতারা উপভোগ করছে, এটাই ভালো লাগার ব্যাপার।
বাংলানিউজ : আপনি নিজস্ব অ্যাপ বের করেছেন। এ প্রসঙ্গে বলুন।
আসিফ : শ্রোতাদের কাছে দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার লক্ষ্যে মুঠোফোনে অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) তৈরি করেছি। এখন আর ভক্ত-শ্রোতাদের কষ্ট করে ইন্টারনেট ঘেঁটে আমার গান খুঁজতে হবে না। ভক্তরা তাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ‘আসিফ মিউজিক’ নামে অ্যাপ ডাউনলোড করে খুব সহজেই ভক্তরা আমার গানগুলো শুনতে পাবেন। অর্থাৎ আমার অ্যাপে ক্লিক করলেই মিউজিক সাইট রিভার্বন্যাশনে চলে যাবেন। সেখানে আমার অসংখ্য গান আছে। ভক্তরা চাইলেই গানগুলো শোনার পাশাপাশি ডাউনলোড করে নিজের সংরক্ষণেও রাখতে পারবেন।
বাংলানিউজ : দেশের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত বিনোদনমূলক খবর নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন...
আসিফ : প্রতিদিন বিকেলে অফিসে গিয়ে আমি দেশের জাতীয় দৈনিকগুলো পড়ি। এর মধ্যে কিছু পত্রিকার বিনোদন পাতার খবর দেখলে মন ভরে যায়। আর কিছু পত্রিকার প্রতিদিনের ও সাপ্তাহিক বিনোদন পাতা দেখলে মনে হয় হলিউড-বলিউডের টেন্ডার! এসব দেখে দুঃখ পাই, ক্রুদ্ধ হই, লজ্জা লাগে। তবুও পড়ি। সবার প্রতি আমার অনুরোধ, খোলা চোখে বাংলাদেশের সংস্কৃতি দেখার চেষ্টা করুন। কারণ আমাদেরকে তরুণ প্রজন্মের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।
বাংলানিউজ : সম্প্রতি সংস্কৃতিমন্ত্রীকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আপনি...
আসিফ : বাংলাদেশে বাংলাদেশি শিল্পীদের রমরমা ভাব তো দূরের কথা, অস্তিত্বের সঙ্কট চলছে। এ অবস্থায় সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ভারতীয় শিল্পীদের ওপর কর কমানোর প্রস্তাব রেখেছেন। প্রস্তাবটি হৃদয়ে রক্তক্ষরণের মতোই শিল্পীদের ব্যথিত করেছে বলে আমি মনে করি। এদেশে ভারতীয় ছবি, টিভি সব চলছে। মেনেও নিয়েছি, মানতে হবে। দৈব কারণে ভারত সরকার আমাকে দশ বছর ভিসা দেয় না, এটাও মেনে নিয়েছি। এ দেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে। শুধু কিছু গুটিকয়েক লোকের স্বার্থে এ দেশের তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছেন তিনি। পারলে অবৈধ ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করে এ দেশের শিল্পাঙ্গনের প্রাণ ফিরিয়ে দিন। শিল্পীরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ধন্যবাদ তারা প্রস্তাবটি মেনে নেয়নি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। খেয়াল করলে দেখবেন শিল্পী সমাজে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। তাই খোলা চিঠির মাধ্যমে শুধু শিল্পীদের আকুতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
বাংলানিউজ : ভারতে তো যেতে পারছেন না, অন্য দেশে কি গাইতে যাচ্ছেন?
আসিফ : হ্যাঁ। বাংলাদেশি কমিউনিটির অনুষ্ঠানে গাইতে ব্রুনাই যাচ্ছি ১৬ অক্টোবর। সে দেশে এর আগে যাইনি। সেখানে আমি গাইবো ১৮ অক্টোবর। ফেরার পথে মালয়েশিয়ায় তিন দিনের জন্য থাকবো। ঘুরবো, বেড়াবো। ঢাকায় ফিরবো ২২ অক্টোবর।
বাংলানিউজ : আপনার মাকে হারিয়েছেন এক বছর হলো। তাকে নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো স্মৃতির কথা আলাদাভাবে বলতে চান?
আসিফ : ২৫ সেপ্টেম্বর আমার মা বেগম রোকেয়া আকবরের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। প্রায় ৭৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তাকে আমি বন্ধুর মতো নাম ধরে রোকেয়া বলে ডাকতাম। এটাই মধুর স্মৃতি।
* আসিফের গাওয়া ‘প্রতিশোধ’ গানের ভিডিও :
* আসিফের গাওয়া ‘আকাশের চাঁদ তুমি’ গানের ভিডিও :
* আসিফের গাওয়া ‘জান রে’ গানের ভিডিও :
বাংলাদেশ সময় : ১৯৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৪