দীর্ঘ বিরতি দিয়ে পরপর দুই ঈদে বিটিভির জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘আনন্দমেলা’ উপস্থাপনা করে আবার আলোচনায় আনজাম মাসুদ। বিজ্ঞাপন নির্মাতা হিসেবেও তিনি সমান পরিচিত।
বাংলানিউজ : সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ‘আনন্দমেলা’র বাজেট নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সঙ্গে বিটিভির অভ্যন্তরীণ বিষয়েও আপনার আপত্তি উঠে এসেছে।
আনজাম মাসুদ : প্রথমে বাজেট প্রসঙ্গে আসি। প্রতি বছর ‘আনন্দমেলা’ ৪০-৫০ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে। সে তুলনায় শিল্পীর সম্মানী, পোশাক প্রভৃতি ক্ষেত্রে খুবই কম বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতো কম টাকায় মানসম্মত অনুষ্ঠান করা অসম্ভব। অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে বিনাপারিশ্রমিকে কাজ করে দিতে চান। কিন্তু নূন্যতম একটা সম্মানী তো দিতে হয়। বাজেটের কারণেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব হয় না। সময় বদলেছে, মানুষের চাহিদার সঙ্গে বেড়েছে বাজারদর। শুধু ‘আনন্দমেলা’ নয়, সব অনুষ্ঠানের জন্যই বাজেট বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা উচিত।
বাংলানিউজ : বিটিভির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলেন...
আনজাম : এক সময় বিটিভিতে কারা ছিলেন? মোস্তফা কামাল সৈয়দ, নওয়াজেশ আলী খান, জিয়া আনসারীর মতো মেধাবী প্রযোজককে পেয়েছিল বিটিভি। এখন হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া সৃজনশীল প্রযোজক নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধরে বিটিভিতে প্রযোজক নিয়োগ বন্ধ। অথচ চ্যানেলটির যে পরিমাণ সম্পদ ও কর্মী আছে তা দিয়ে পাঁচ-ছয়টি চ্যানেল অনায়াসে চালানো সম্ভব। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে মানসম্মত অনুষ্ঠান হচ্ছে না। বিটিভিকে আলোর পথে আনতে হলে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। সে প্রক্রিয়া অল্প অল্প করে হলেও শুরু হয়েছে।
বাংলানিউজ : উপস্থাপনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। ভাগ্যিস ‘আনন্দমেলা’ আপনাকে আবার ফিরিয়ে এনেছে! অন্য কোনো টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন না কেনো? সময়ের অভাব নাকি অন্যকিছু?
আনজাম : প্রস্তাব যে পাই না তা নয়। অনেক প্রস্তাব আসছে। কিন্তু আমি গানের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবো না। পর্যাপ্ত বাজেট, পরিকল্পনা ও সময় দেওয়া হলে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান করতে রাজি আছি।
বাংলানিউজ : কিছুদিন আগে এক উপস্থাপিকা আক্ষেপ করে বলেছেন, সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আর অফিসের টেলিফোন অপারেটরের কাজ একই। টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মান এখন কোন পর্যায়ে আছে বলে মনে করছেন?
আনজাম : আমি ওই উপস্থাপিকার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তবে কথা হচ্ছে, এই ঘরানার উপস্থাপনা কিন্তু তারাই শুরু করেছিলেন। এখনকার উপস্থাপক-উপস্থাপিকারা যে হারে একই দিনে চার-পাঁচটি চ্যানেলে অনুষ্ঠান করছেন, তাতে মান কোথায় থাকে! অতিরিক্ত বাচালতা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করি আমি। তাদেরকে তো নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে। তবে কিছু কিছু অনুষ্ঠান আছে, যারা জেনে-বুঝে পরিকল্পনামাফিক কাজ করে। অনেক সময় উপস্থাপককে এক সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠানের বিষয় বলে দেওয়া হয়, যাতে তিনি নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করে আসতে পারেন। এটাই হওয়া উচিত।
বাংলানিউজ : এখনকার বিজ্ঞাপনগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? খুব বেশি পণ্যনির্ভর হয়ে যাচ্ছে?
আনজাম : প্রচুর ভালো মানের বিজ্ঞাপনও হচ্ছে। পণ্যনির্ভর হবে নাকি থিমভিত্তিক, সেটা পণ্যের ওপর নির্ভর করে। বিজ্ঞাপন ভুবনে এখন ভালো কাজের সংখ্যাই বেশি। বিজ্ঞাপনের জন্য উন্নত প্রযুক্তি, দৃশ্যধারণের উপযোগী স্থান, প্রশিক্ষিত জনবল; সবই আমাদের দেশে আছে। তবুও দেশের বাইরে গিয়ে বিজ্ঞাপনের কাজ করার হার বেড়েছে। আমি এটা সমর্থন করি না। এর পেছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকে।
বাংলাদেশ সময় : ১৭৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৪