ফেরদৌসের এখন আছেন ছোটাছুটির মধ্যে। তার সব ব্যস্ততা ‘এক কাপ চা’র জন্য।
‘এক কাপ চা’তে অভিনয়ও করেছেন ফেরদৌস। এতে তার দুই সহশিল্পী হলেন মৌসুমী ও ভারতীয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এর দৃশ্যধারণ হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে। রাজধানীসহ দেশের অর্ধশত প্রেক্ষাগৃহে ছবিটির প্রদর্শনী হবে। এটি পরিবেশনা করছে নুজহাত ফিল্মস এবং হার্টবিট।
‘এক কাপ চা’র জন্য গত কিছুদিন ধরে রাজধানীর কাকরাইলে বেশি সময় কাটাচ্ছেন ফেরদৌস। প্রেক্ষাগৃহ বরাদ্দ নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠান, রেডিও চ্যানেলের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। এরই ফাঁকে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা মুখোমুখি হয়েছেন।
বাংলানিউজ : ছবির নাম ‘এক কাপ চা’ কেন?
ফেরদৌস : এতে আমাকে একজন শিক্ষক আর মৌসুমীকে দেখা যাবে লাইব্রেরিয়ানের চরিত্রে। ‘এক কাপ চা’ পান নিয়ে তাদের সর্ম্পকের সূত্রপাত হয়। এখানে একটি পরিপক্ক ভালোবাসার গল্প দেখবেন দর্শকরা। ছবির নামটি দিয়েছেন বাসু দা (বাসু চ্যাটার্জি)। তিনি এ ছবিটি হিন্দিতে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। পরে তা হয়নি। গল্পটি আমার বেশ পছন্দের। তাই গল্পটি নিয়ে কাজ করলাম।
বাংলানিউজ : প্রযোজনার ইচ্ছেটা কখন মনে হলো?
ফেরদৌস : পরিকল্পনা করে নয়, প্রযোজনায় হঠাৎ চলে এসেছি। আমার মনে হয়েছে, প্রযোজকের দায়িত্ববোধটা অনেক বেশি। ছবি মুক্তি দিতে এসে প্রতিনিয়ত আরও অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। এটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
বাংলানিউজ : ছবিটিতে মৌসুমী আর আপনি প্রধান নায়ক-নায়িকা, এ ছাড়া দেশের অনেকে অভিনয় করেছেন অতিথি শিল্পী হিসেবে। ওপার বাংলার ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও আছেন। তাদের নেওয়া কি আপনার প্রথম প্রযোজিত ছবির কারণে নাকি গল্পের প্রয়োজন ছিল?
ফেরদৌস : এ ছবিতে প্রথম ফ্রেম থেকে শুরু করে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত বিভিন্ন চরিত্রে অনেক তারকা অভিনয় করেছেন। তাদেরকে সমন্বয় করা কঠিন কাজ ছিল। গল্পের প্রয়োজনেই তাদেরকে যুক্ত করতে হয়েছে। আমাদের দেশে এই প্রচেষ্টা পুরোপুরি নতুন। জোর করে নয়, গল্পের সঙ্গে মানানসই মনে হবে তাদেরকে। হুমায়ুন ফরীদি, নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর, শাকিব খান, নিপুণ, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ওমর সানী, নিরবসহ অনেকেই অভিনয় করেছেন এতে।
বাংলানিউজ : ‘এক কাপ চা’র পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূল কী আপনার আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন বলে মনে করেন?
ফেরদৌস : ওকে নিয়ে আমার যে ভাবনা ছিলো, সেটা পূরণ করতে পেরেছে। আর নেয়ামূল নতুন, তাই তাকে আমার মতো ব্যবহার করতে পেরেছি। গানগুলো কীভাবে ধারণ করলে ভালো হবে তা নিয়ে আমরা একসঙ্গে আলোচনা করে করেছি। এর আগে তার পরিচালনায় কয়েকটি নাটক প্রযোজনা করেছি। সেখান থেকে আমাদের মধ্যে একটা ভালো বোঝাপড়া হয়েছে। আমি সব বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করেছি। ক্যামেরার পেছনে আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে একঝাঁক নবীন।
বাংলানিউজ : ছবিটিতে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের লেখা গানও আছে। তার গানটি নিয়ে কিছু বলুন।
ফেরদৌস : হুমায়ূন স্যারের পরিচালনায় দুটি ছবিতে কাজ করেছিলাম। তখন থেকেই জানতে চাইতাম, অন্য কাউকে গান লিখে দেন না কেনো। তিনি জানান, কারো জন্য গান আসলে লেখা হয় না তার। তখন আমাকে কথা দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি কখনও ছবি বানালে গান লিখে দেবো। ’ ছবি প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তার কাছে গিয়ে বিয়ের উপযোগী একটি গান চাইলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে বিয়ের গান তিনি দারুণ লিখবেন। তারপর তিনি ‘আজ সবই ওলট-পালট মনের মেঘে হাসি, আজ বেজেছে তেতুল বনে শফিক বাবুর বিয়ের বাঁশি/ বাঁশি শুনে দীপা দেবীর গলায় পড়লো ফাঁস..লিলুয়া বাতাস সই গো লিলুয়া বাতাস...’ কথার গানটি লিখে দেন। স্যার আমাকে অসাধারণ একটি গান লিখে দিয়ে গেছেন। আর ইমন সাহাও ভালো সুর করেছে।
বাংলানিউজ : ‘এক কাপ চা’র কাজ চার বছর আগে শুরু হয়েছিল। এতদিন আটকে থাকার কারণে ছবিটির প্রতি দর্শকদের আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে হয়?
ফেরদৌস : দেরি হওয়ার অনেক কারণ ছিল। দৃশ্যধারণ পরবর্তী কাজগুলো করেছি ভারতের চেন্নাই ও মুম্বাইয়ে। আর পরিচালক নেয়ামূলের ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতাও ছিল। এ কারণে আমাকে একবার চেন্নাই থেকে জিনিসপত্র ঢাকায় এনে ডাবিং করে আবার নিয়ে যেতে হয়েছে। আর আমি মনে করি না, দর্শকের আগ্রহ কমেছে। আশ্বাস দিচ্ছি, ‘এক কাপ চা’ এখনও গরমই আছে!
বাংলানিউজ : ‘এক কাপ চা’ ১৪ নভেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। পেছালেন কেনো?
ফেরদৌস : সত্যি বলতে, ব্যবসার জায়গায় আমি শক্তিশালী না। ‘এক কাপ চা’ ছবির বিভিন্ন ক্ষেত্রে যতটা ভূমিকা রাখতে পেরেছি, মুক্তির বেলায় এতটা দ্রুত কাজ করতে পারিনি। এতোকিছুর পরও অর্ধশত প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি দিতে পারছি। এ দেশে ছবি মুক্তি দিতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। আমার বিশ্বাস, এই সংকটটা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
বাংলানিউজ : ‘এক কাপ চা’ নিয়ে আপনার প্রত্যাশার কথা শুনি।
ফেরদৌস : ছবিটি নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। শুরু থেকেই সবশ্রেণীর দর্শকের কথা মাথায় রেখেছি। এখন পর্যন্ত কাছের যতজন দেখেছেন সবাই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তবে দুশ্চিন্তাও আছে। ২৮ নভেম্বর থেকেই ফল বের হবে। এখন সেদিনের অপেক্ষায় আছি।
বাংলানিউজ : একই দিনে আপনার ‘চার অক্ষরের ভালোবাসা’ ছবিটিও মুক্তি পাচ্ছে...
ফেরদৌস : দুটি ছবিতে আমিই মূল নায়ক। তবে দুটি ছবি দুই ধরনের। ‘এক কাপ চা’ রোমান্টিক-কমেডি ধাঁচের। আর ‘চার অক্ষরের ভালোবাসা’য় আছে পুরোপুরি সামাজিক গল্প। আমি মনে করি, দুটি ছবির দর্শকও আলাদা। তাই লড়াইয়ের বিষয় এখানে আনা উচিত নয়।
বাংলানিউজ : আপনার এখনকার ব্যস্ততা নিয়ে বলুন।
ফেরদৌস : দুই বাংলায় বেশ কিছু ছবির কাজ করছি। এর মধ্যে আছে ‘শূন্য হৃদয়‘, ‘লিডার’, ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’, ‘স্বর্গ থেকে নরক’ এবং কলকাতার দুটি ছবির কাজ করছি। ‘এক কাপ চা’ মুক্তির পর এবং হাতের ছবিগুলোর কাজ শেষে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে চাই।
বাংলানিউজ : আবার প্রযোজনা করবেন কবে?
ফেরদৌস : একটা গল্প মাথায় রেখেছি। আর ইচ্ছে তো আছেই। তবে দেখা যাক কি হয়!
বাংলাদেশ সময় : ১৪৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৪