‘হাঙ্গার গেমস’ সিরিজটি জনপ্রিয় হতো না জেনিফার লরেন্স না থাকলে! এ কথা অনেকেই বলে থাকেন। এতো কম বয়সে একটি সিরিজ টেনে নেওয়ার নজির হলিউডে বিরল।
সুজান কলিন্সের ট্রিলজির শেষ গ্রন্থের অর্ধেকটা এতে তুলে ধরেছেন পরিচালক ফ্রান্সিস লরেন্স। ফলে বাকি রয়ে গেল প্লটের মূল বিষয়টাই। ক্যাটনিস এভারডিস (জেনিফার লরেন্স) একটিমাত্র বার তির ছুরে একটি হানাদার বিমানকে ধ্বংস করা ছাড়া গোটা ছবিতে শুধু অভিব্যক্তি দিয়ে গেল নানা কারণে। দু’ঘণ্টার তার লড়াকু মনোভার রইল বেপাত্তা। ফলে পুরো সময়টাই দর্শক-আসনে বসে উসখুত করা কিংবা ‘এই-বুছি-কিছু-হয়’ ভেবে যাওয়া ছাড়া বিশেষ কিছু পাওয়া গেল না! প্রশংসা করার মতো। ‘হাঙ্গার গেমস: ক্যাচিং ফায়ার’ এর ঠিক পর থেকে শুরু এই ছবি। আগের ছবিটা শেষ হয়েছিল বিদ্রোহ শুরুর উঠনটা তৈরি করে দিয়ে।
এ ছবিতে বিপ্লবীদের ঘাঁটিতে (ডিসট্রিক্ট থার্টিন) ক্যাটনিস হয়ে দাঁড়ায় গণজাগরণের নতুন মুখ। ‘পোষ্টার গার্ল’। ক্ষমতাসীন ক্যাপিটলের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত সে আর বিদ্রোহী দল। প্রাণের বিনিময়ে একটা নৃশংস খেলাধুলা এ ছবিতে সরাসরি যুদ্ধের সূচনা। বিপ্লবীদের প্রধান প্রেসিডেন্ট কয়েনের (জুলিয়ান মুর) জ্বলন্ত বক্তৃতা, ক্যাটনিসের দ্বিধাবিভক্ত প্রেম, প্লতার্ক হেভেনসরির (ফিলিপ সিম্যুর হফম্যান) নানাবিধ ফন্দি-কৌশলের পুরোটাই ‘প্যাকেজড’ এবং বিক্রিত।
‘মিডিয়া টেলিভিশন’ বিষয়গুলোর বাইয়ের প্রেক্ষিতেই ধরেছেন পরিচালক। যেখানে একটা বিদ্রোহকেও ‘বিক্কিরি’ করতে হবে। বাজারে টিকে থাকার জন্য। নিজেদের আর্দশকে জনগণের মধ্যে চাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি করতে হবে বিদ্রোহের বিজ্ঞাপন!
ক্যাটনিসের অতীতটাকে অন্য ভাঁজে জড়িয়ে দেওয়ার একটা স্পষ্ট চেষ্টাও রয়েছে গল্পে। তার আবেগের পুঁজি করে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে দেওয়ার রাজনীতি স্পষ্ট। ক্যাপিটলের হাতে পিটা’র (জশ হাচারসন) বন্দি হওয়া। ক্যাটনিসের গ্রাম ডিসট্রিক্ট টুয়েলভ ধ্বংস হয়ে যাওয়া, গেল এর (লিয়াম হেমসওয়ার্থ) সঙ্গে ক্যাটনিসের টানাপোড়েন- এগুলো মিলেমিশে ইংরেজি ছবির সবচেয়ে বিধ্বংসী মহিলা-নায়কের ভিতরকার আগুনটা তৈরী হয়েই ছিল। যে আগুনকে বাগ মানানো সম্ভব নয়। অন্তত বিজ্ঞাপনের জন্য তৈরি করা কয়েকটা লাইন তাকে দিয়ে মুখস্ত বলিয়ে নয়ই! অতএব তাকে বারতে দেওয়া হোক নিজের মতো-এটাই হয়ে দাঁড়ায় কাজ হাসিলের ফিকির!
সুতরাং সবটা দেখে মনে হয়, ছবিতে বিদ্রোহের কলকব্জাগুলো তৈরি করাই লক্ষ্য ছিল। তাদের কাজে লাগানোর জন্য পরের ছবিতো আছেই। সেখানেই সুতো বাঁধার কাজটা গোটাবেন পরিচালক। বেরোবেন লৌহ ঘাটি ছেড়ে। ফলে অপেক্ষা আরও একটি বছরের।
অভিনয়টা তুখোড়ই করেন জেনিফার। তবে এ ছবির সুবাদে গায়িকা হিসেবেও খ্যাতি পেয়ে গেছেন ২৪ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী। ইউকে সিঙ্গেলস চার্টের টপ ফোর্টিতে স্থান করে নিয়েছে তার গাওয়া ‘দ্য হ্যাংগিং ফ্রি’ শিরোনামের একটি গান। এটি এখন ইউকে সিঙ্গেলস চার্টের ২৯ নম্বরে আছে।
গল্প ফুরিয়ে গেলেও সিরিজটিকে দর্শকরা মিস করবে। জেনিফার লরেন্সকে প্রতিবাদী মেয়ের রূপে দেখতে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দর্শক। টানা দুই সপ্তাহ ধরে ছবিটি আছে হলিউড টপচার্টের শীর্ষে। ‘দ্য হাঙ্গার গেমস : মকিংজে পার্ট ওয়ান’ মুক্তি পেয়েছে ২১ নভেম্বর।
বাংলাদেশ সময় : ২২৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৪