নিপুণের বাবা মনসুর আলী ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে লড়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মেয়ের অনেক গর্ব।
২৬ ডিসেম্বর সারাদেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ‘একাত্তরের মা জননী’। এ উপলক্ষে বাংলানিউজ কার্যালয়ে এসে নিপুণ জানালেন ছবিটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা। এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট অনেকে ছবিটি দেখে একবাক্যে বলে দিয়েছেন, এ ছবির জন্য আবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতবেন নিপুণ। তিনি হেসে নিপুণ হেসে বললেন, ‘জানি না কি হবে! জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবো কি-না জানি না। এখন পর্যন্ত সম্পাদনার প্যানেলে ছবিটি দেখে অনেকে খুশি হয়েছেন। সবারই একমত, খুব ভালো কাজ হয়েছে। সত্যি বলতে আমার কাছে এর প্রথম ফ্রেম থেকে শুরু করে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত ছিলো স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। ’
দু’একটি অভিজ্ঞতার কথা জানা যাক। এফডিসিতে আর্মি ক্যাম্প সাজিয়ে প্রথম সেট তৈরি হয়েছিলো। এরপর নরসিংদীর পাড়াতলি গ্রামে কাজ করেছেন তারা। যদিও সেখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই। গ্রামে পাকবাহিনী ঢোকার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্যধারণে ঘটে বিপত্তি। গ্রাম ছেড়ে শতাধিক লোকের সঙ্গে নিপুণকেও নদী দিয়ে দৌড় দিতে হবে। এ দৃশ্যে কাজ করতে গিয়ে অনেকের মতো তার পা কেটে যায়। আহত হওয়ার পরও নিপুণ কাজ থামিয়ে রাখেননি। ছবিটির জন্য পরিশ্রমের কমতি রাখেননি তিনি। বীরাঙ্গনাদের নির্যাতিত পরিস্থিতি ফুটিয়ে তুলতে প্রায় বস্ত্রহীন অবস্থায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন।
‘একাত্তরের মা জননী’ ছবির কাজ কীভাবে এলো নিপুণের কাছে? তখন ইসমত আরা চৌধুরী শান্তির ‘মায়ানগর’ ছবির কাজ করছিলেন তিনি। এর কাহিনীকার শাহ আলম কিরণ। দৃশ্যধারণ চলাকালে প্রায়ই আসতেন তিনি। তখনই ‘একাত্তরের মা জননী’ ছবিটি নির্মাণের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে পারেন নিপুণ। সরকারি অনুদান পাওয়ার পর তাকে কাজটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ‘একাত্তরের মা জননী’ হওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করেননি তিনি।
গল্পে ১৯৭১ সালের সময়টা দেখানো হবে জমিলার স্মৃতির পাতায়। এই বৃদ্ধার ভূমিকায়ও অভিনয় করেছেন নিপুণ। যদিও তাকে মানাবে কি-না তা ভেবে পরিচালক শুরুতে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধার সাজসজ্জা মানানসই মনে হয়েছে। ১৯৭১ সালে জমিলার বয়স ছিলো ২৪ বছর।
নিপুণ আরও বললেন, ‘একাত্তরের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা ছবিটি ব্যবসাসফল হবে কি-না জানি না, তবে এটা আমার ক্যারিয়ারের সম্পদ হয়ে থাকবে। আমি বেঁচে না থাকলেও আগামী প্রজন্মের দর্শকরা স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে ছোট পর্দায় ছবিটি দেখবে। এটাও একটা অর্জন। ’
বাণিজ্যিক ও নান্দনিক ছবিতে সমানতালে কাজ করে এসেছেন নিপুণ। দুই ধরনের ছবিতেই ব্যবসায়িক সাফল্য ও পুরস্কার দুটোই পেয়েছেন। হুমায়ূন আহমেদের গল্প নিয়ে শাহ আলম কিরণের ‘সাজঘর’ আর মোহাম্মদ হোসেনের বাণিজ্যিক ছবি ‘চাঁদের মতো বউ’-এর জন্য নিপুণ সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন। ‘একাত্তরের মা জননী’র মাধ্যমে এই সংখ্যা বেড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এরই মধ্যে ইউএস চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হয়েছে ছবিটি।
নিজের নতুন ছবি মুক্তির দিন নিপুণ থাকবেন লন্ডনে। মেয়ে তানিশার সঙ্গে এবারের বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের ছুটি কাটাবেন। আর ২৪ ডিসেম্বর কাতারে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। মেয়ে লন্ডনে থাকে, মা-ও কি একসময় স্থায়ীভাবে পাড়ি জমাবেন বিদেশে? এই আসা-যাওয়া নিয়ে তার কথা, ‘আমার বাইরে থাকার পথটা খোলা। তবে আমি ভাবি অন্যভাবে। আমার পরিবারের অনেকে বাইরে থাকেন। আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছি আট বছর হয়ে গেলো। দেশটা ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না। আমি বাংলাদেশেই থাকতে চাই এবং কাজ করে যেতে চাই। এমন দেশ আর কোথায় পাবো!’
১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে সালাহউদ্দিন লাভলুর ‘জনম জনম’ ছবির কাজ শুরু করার কথা রয়েছে নিপুণের। এতে তার সহশিল্পী রিয়াজ ও শাবনূর। এ ছাড়া ‘মায়ানগর’, ‘স্বর্গ থেকে নরক’ ও ‘কার্তুজ’ ছবির কাজ শেষ করেছেন। নতুন বছরে এসব ছবির মাধ্যমে প্রশংসা ও সাফল্য দুটোই কুড়াতে সক্ষম হবেন বলে আশার কথা শোনালেন নিপুণ।
বাংলাদেশ সময় : ১৭৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪