দেখতে দেখতে শেষ হয়ে আসছে ২০১৪। তাই হিসাব কষার পালা।
গত চার বছরের মধ্যে ২০১০ সালে ৫৭টি, ২০১১ সালে ৪৮টি, ২০১২ সালে ৫০টি এবং ২০১৩ সালে ৫২ ছবি মুক্তি পেয়েছিলো। এবার সে সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৭। এর মধ্যে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে অনেক ছবি। কিন্তু সেগুলো বেশিরভাগই মানহীন বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ছবি মুক্তির সংখ্যা বাড়লেও দর্শক মন জয় করতে না পারায় ব্যবসা বাড়েনি। অনেক ছবি চালিয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা তাদের সপ্তাহের খরচও তুলতে পারেননি। কয়েকটি ছবি দুই-একদিন পর প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামিয়ে দেওয়ার নজিরও আছে। আবার কিছু ছবি মুক্তি পেয়েছে নামমাত্র প্রেক্ষাগৃহে।

আগে ৩৫ মিমি ফরম্যাটে ছবি নির্মাণ করে প্রযোজক-পরিবেশকরা প্রদর্শকদের দিতেন। প্রদর্শকরা নিজেদের অর্থে স্থাপিত মেশিন দিয়ে ছবিগুলো প্রদর্শন করতেন। এখন হয়েছে উল্টোটা। বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, মধুমিতা, বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড, শ্যামলী সিনেপ্লেক্স এবং সনি ছাড়া দেশের প্রায় ২০০ প্রেক্ষাগৃহে প্রজেক্টরের সাহায্যে ডিজিটাল ছবি প্রদর্শন করতে হয়। এসব প্রজেক্টরের ভাড়া নির্মাতাদেরই গুনতে হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির তালিকায় রয়েছে ‘কি দারুণ দেখতে’, ‘দাবাং’, ‘দাগ’, ‘মনের মধ্যে লেখা’, ‘তোমার কাছে ঋণী’, ‘আকাশ কতো দূরে’, ‘অগ্নি’, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’, ‘স্বপ্নছোঁয়া’, ‘প্রেম কি অপরাধ’, ‘জীবনঢুলী’, ‘কুসুমপুরের গল্প’, ‘সীমারেখা’, ‘রাজত্ব’, ‘অনন্তকাল (ফরএভার)’, ‘৭১-এর সংগ্রাম’, ‘অনুক্রোশ’, ‘দবির সাহেবের সংসার’, ‘জোনাকির আলো’, ‘ডেয়ারিং লাভার’, ‘তোকে ভালোবাসতেই হবে’, ‘এক নম্বর আসামি’, ‘মায়ের মমতা’, ‘জান’, ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘তারকাঁটা’, ‘ফাঁদ’, ‘দুটি মনের পাগলামী’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম টু’, ‘আই ডোন্ট কেয়ার’,


মৌলিক গল্পের ছবির অভাব ছিলো লক্ষণীয়। বেশিরভাগ ছবির বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ উঠেছে প্রকটভাবে। গল্পের মানের কারণেই তারকা উপস্থিতি থাকলেও এক বা দুই সপ্তাহের বেশি কোনো ছবিই চলেনি।

ব্যবসাসফল ছবির সংখ্যা কম হলেও চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রাপ্তি হয়েছে অনেক। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘পিঁপড়াবিদ্যা’ সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিলভার স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়। এরপর কেরালা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয় ছবিটি। প্রেক্ষাগৃহেও ভালো সাড়া ফেলতে সক্ষম হয় ‘পিঁপড়াবিদ্যা’।

খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘জোনাকির আলো’ ভারতের মুম্বাইয়ে দ্বাদশ এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে মনোনীত হয়। এর বাইরে ‘জোনাকির আলো’ চলচ্চিত্রের জন্য আমেরিকার দ্য ওয়াল্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের এবারের আসরে পুরস্কার জেতেন ছবিটি।

নাচ-গান-অ্যাকশনে ভরপুর মসলাদার ছবির বাইরে এসব অর্জন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশীয় চলচ্চিত্রের পরিচিতি বাড়াচ্ছে। এই ইতিবাচক আয়নায় চোখ রেখে পুরনো বছরের হতাশা ভুলে নতুন বছরে মানসম্পন্ন নির্মাণ, নতুন নতুন গল্প আর তারকাদের মনকাড়া কাজ দর্শকদের মুগ্ধ করবে, এ প্রত্যাশা রইলো।
আলোচিত ৫ ছবি
* পিঁপড়াবিদ্যা (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী)
* তারকাঁটা (মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ)
* কিস্তিমাত (আশিকুর রহমান)
* আমি শুধু চেয়েছি তোমায় (অশোক পাতি ও অনন্য মামুন)
* এক কাপ চা (নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূল)

ব্যবসাসফল ৫ ছবি
* হিরো দ্য সুপারস্টার (শাকিব খান, অপু বিশ্বাস)
* তারকাঁটা (মৌসুমী, আরিফিন শুভ, বিদ্যা সিনহা মিম)
* হিটম্যান (শাকিব খান, অপু বিশ্বাস)
* মোস্ট ওয়েলকাম টু (অনন্ত-বর্ষা)
* অগ্নি (আরিফিন শুভ, মাহি)

প্রশংসিত ৫ ছবি
* বৃহন্নলা (মুরাদ পারভেজ)
* জীবনঢুলী (তানভীর মোকাম্মেল)
* একাত্তরের মা জননী (শাহ আলম করিণ)
* আকাশ কত দূরে (সামিয়া জামান)
* হরিজন (মির্জা সাখাওয়াত হোসেন)
বাংলাদেশ সময় : ২০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪